দুই মেয়েকে হত্যা করেছি: ফোনে জানালো বাবা!

প্রকাশ : ২০ মে ২০১৮, ২৩:০৪

জাগরণীয়া ডেস্ক

মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে দুই শিশু কন্যাকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন বাবা। কিন্তু পরদিন আত্মীয়স্বজনকে ফোন করে বাবা নিজেই জানান দুই কন্যাকে হত্যা করেছেন তিনি। কিন্তু কেন? আর মেয়েদের হত্যা করে কোথায় আছে এখন বাবা? এমন সব প্রশ্ন ঘিরে ধরেছে এখন শিশু কন্যাদের মা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের।

দিনাজপুরের বিরামপুর পৌর শহরের দয়ারপাড় গ্রামের এক ওয়েল্ডিং ব্যবসায়ী সেলিম। এলাকাবাসীরা জানান, নেশাগ্রস্ত হওয়ায় তাকে ঘিরে পরিবারে অশান্তি লেগেই থাকতো।  পারিবারিক কলহের জের ধরে এক বছর আগে সেলিমের স্ত্রী বাবার বাড়িতে চলে যান। কিন্তু দুই মেয়ে আলফি (৭) ও শাফি (৫) বাবার সঙ্গে থাকতো। 

সেলিমের মা রোকেয়া বেগম বলেন, গত ১৭ মে (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যার পর সেলিম দুই মেয়েকে মায়ের কাছে রেখে আসার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেননি। পরদিন সকাল থেকে সেলিম ‘অজ্ঞাত’স্থান থেকে মোবাইলে গ্রামবাসীকে জানাচ্ছেন, দুই মেয়েকে হত্যা করে তিনি লাশ পার্বতীপুর উপজেলার মধ্যপাড়ায় পুঁতে রেখেছেন।

সেলিমের বড় ভাই বাবু মিয়া বলেন, শনিবার সকালে তাদের ভগ্নিপতি হবিবর রহমান সেলিমকে খুঁজতে যান। দুপুরের দিকে সেলিমকে নবাবগঞ্জ উপজেলার বিনোদন কেন্দ্র স্বপ্নপুরীর সামনে পেয়ে তিনি তাকে আটকে রাখেন। পরে বাবু মিয়াকে হবিবর  ফোনে বলেন, সেলিম তার দুই মেয়েকে হত্যা করে পার্বতীপুর উপজেলার শালপাড়ায় পুঁতে রেখেছেন। বিষয়টি ফুলবাড়ী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম এবং নবাবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুব্রত কুমার সরকারকে জানানো হলে পুলিশের একটি দল তৎক্ষণাৎ স্বপ্নপুরীর সামনে যায়। তবে হবিবর পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মুঠোফোন বন্ধ করে সেলিমকে নিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যান। আফতাবগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির এক সদস্য সেলিমের সাথে মোবাইলে যোগাযাগ করলে সেলিম পুলিশের ওই সদস্যকে জানান যে তার দুই মেয়েকে শ্বশুরবাড়িতে রেখে এসেছেন। 

সেলিমের কথা মতো দেবীপুর গ্রামে সেলিমের শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে দুই মেয়েকে খোঁজ করা হয়, কিন্তু তাদের পাওয়া যায়নি। এদিকে দুই মেয়ের এমন খবরে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সেলিমের প্রাক্তন স্ত্রী ও মেয়েদের মা লাকী আকতার। 

সেলিমের স্ত্রী লাকী আকতার বলেন, নেশাগ্রস্ত স্বামীর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে এক বছর আগে বাবার বাড়ি চলে আসেন তিনি। কিন্তু বাবার বাড়িতে এসেও তাকে নির্যাতন করতেন সেলিম। গত বছর কলেজের দুই ছাত্রীকে উত্যক্ত করে জেলেও যান সেলিম। একবার বাড়িতে আগুন দিয়েও পালিয়ে যান। এসব সহ্য করতে না পেরে বাধ্য হয়ে গত জানুয়ারিতে সেলিমকে তালাক দেন তিনি। শনিবার সকালে গ্রামবাসীর মাধ্যমে জানতে পারেন, সেলিম তার দুই মেয়েকে হত্যা করেছেন। এ ঘটনায় শনিবার রাতে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন তিনি।

ফুলবাড়ী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, পুলিশের একটি দল শিশু দুই বোনের সন্ধান এবং সেলিমকে গ্রেপ্তারের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত