খালেদা জিয়ার জামিন বিষয়ে আপিলে আদেশ ১৯ মার্চ
প্রকাশ : ১৯ মার্চ ২০১৮, ০২:১৩
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে থাকা বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাষ্ট্রপক্ষে আনা লিভ টু আপিলের ওপর শুনানি ১৮ মার্চ (রবিবার) শেষ হয়েছে। ১৯ মার্চ (সোমবার) বিষয়টির ওপর আদেশ দেয়া হবে।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ ১৮ মার্চ (রবিবার) উভয়পক্ষে শুনানি শেষে এ আদেশ দেয়।
আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানি করেন। অপরদিকে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও এ জে মোহাম্মদ আলী।
১৮ মার্চ (রবিবার) মামলাটি উত্থাপিত হলে দুদকের পক্ষে আইনজীবী খুরশীদ আলম খান শুনানি শুরু করেন। তিনি শুনানিতে বলেন, মামলায় সব আসামীর ১০ বছর করে সাজা হলেও শুধু খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের সাজা দেয়া হয়েছে। এখানে বিচারিক আদালতেরর রায়ে খালেদা জিয়ার বয়স ও সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় আনা হয়েছে। এখন জামিনের ক্ষেত্রেও আসামীর প্রতি কনসিডারেশনের বিরোধিতা করেন তিনি। জামিন বাতিলে তিনি বিভিন্ন নজির উপস্থাপন করেন।
শুনানিতে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টে দেয়া জামিনের বিরুদ্ধে বক্তব্য পেশ করেন। শুনানিতে তিনি বিভিন্ন নজির পেশ করেন।
এ সময় তিনি বলেন, মামলাটির বিচার কার্যক্রমে বিচারিক আদালতের প্রতি অনাস্থা এবং মামলাটি বাতিল ও স্থগিতে বিভিন্ন সময় আসামীপক্ষে উচ্চ আদালতে আবেদন করা হয়েছে। তিনি বলেন, মামলার পেপার বুক প্রস্তুতে হাইকোর্ট যে চার মাসের সময় দিয়েছে তা দুই মাস করতে আর্জি পেশ করন।
খালেদা জিয়ার জামিন বহালের পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি ও নজির তুলে ধরে শুনানি করেন তার আইনজীবীরা।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাইকোর্টের দেয়া চার মাসের জামিন স্থগিত চেয়ে গত ১৩ মার্চ (মঙ্গলবার) আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্নাঙ্গ বেঞ্চে প্রেরণ করে। গত ১৪ মার্চ আপিল বিভাগ খালেদা জিয়ার জামিন আদেশ আজ রবিবার পর্যন্ত স্থগিত করে এ সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের লিভ টু আপিল দায়ের করতে বলে। গত ১৫ মার্চ দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ লিভ টু আপিল দাখিল করে। অপরদিকে জামিন স্থগিতের আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে থাকা বেগম খালেদা জিয়াকে ১২ মার্চ (সোমবার) চার মাসের জামিন দিয়ে আদেশ দেয় হাইকোর্ট। বিচারপতি এম, ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিম সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
আদেশে-বেগম খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দিয়েছে আদালত। পাশাপাশি এ সময়ের মধ্যে আপিল শুনানির জন্য সংশ্লিষ্ট শাখাকে পেপারবুক প্রস্তুত করতেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পেপারবুক প্রস্তুত হওয়ার পর যেকোনো পক্ষ চাইলে আপিল শুনানির জন্য আদালতে মেনশন (উপস্থাপন) করতে পারবে।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের দেয়া আদেশে বলা হয়, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার নিন্ম আদালতের নথি আসার পর এ মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার জামিন বিষয়ে আদেশ দেয়া হবে। ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিচারিক আদালতের দেয়া সাজার রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার করা আপিল শুনানির জন্য গত ২২ ফেব্রুয়ারি গ্রহণ (এডমিট) করে হাইকোর্টের এ বেঞ্চ। একই সঙ্গে বিচারিক আদালতে দেয়া জরিমানার দণ্ডাদেশ স্থগিত করা হয়। পাশাপশি নিম্ন আদালতের নথি ১৫ দিনের মধ্যে পাঠাতে বিচারিক আদালতকে নির্দেশ দেয়া হয়। গত ১১ মার্চ (রবিবার) এ মামলার বিচারিক আদালতের নথি উচ্চ আদালতে পৌঁছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ১ হাজার ২২৩ পৃষ্ঠার আপিল দায়ের (ত্রিমিনাল আপিল নং: ১৬৭৬/২০১৮) করা হয়। আপিল আবেদনে নিম্ন আদালতের পাঁচ বছরের দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে বিভিন্ন যুক্তি দেখানো হয়েছে। খালেদা জিয়ার আইনজীবী প্যানেলের অন্যতম সদস্য সিনিয়র অ্যাডভোকেট আব্দুর রেজাক খান ফাইলিং ল’ইয়ার হিসেবে এ আপিল মামলা দায়ের করেন।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের অনুলিপি প্রকাশ করা হয়। খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের কাছে রায়ের অনুলিপি ১১৬৮ পৃষ্ঠা ও আদেশ ৬ পৃষ্ঠাসহ মোট ১১৭৪ ফোলিও প্রিণ্ট দেয়া হয়। প্রকাশিত এ রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, সরকারি এতিম তহবিলের টাকা এতিমদের কল্যাণে ব্যয় না করে পরস্পর যোগসাজশে আত্মসাৎ করে খালেদা জিয়াসহ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার আসামিরা রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক অপরাধ করেছেন।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ৫ বছর এবং তার জেষ্ঠ্য পুত্র দলটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ এবং দুই কোটি ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা করে রায় দেয়। সাজার রায় ঘোষণার পরপরই রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়। সেখানে সাজাভোগ করছেন খালেদা জিয়া।