অপরাধ প্রমাণ হলে যে সাজা হতে পারে খালেদার
প্রকাশ : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১২:২৮
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার কথা রয়েছে ৮ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার)। এই মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ ছয়জন আসামি। রায়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনসহ অন্যদের সাজা হতে পারে, আবার তারা খালাসও পেতে পারেন।
এই ছয় আসামির বিরুদ্ধে যেসব ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে তা প্রমাণ হলে সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। আর দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ হলে সর্বোচ্চ শাস্তি ৭ বছরের কারাদণ্ড হবে। আর সাজা একবছরের নিচে হলে আপিল শর্তে বিবাদী তাৎক্ষণিক জামিনের আবেদনে যেতে পারবেন। তবে এ নিয়েও ভিন্নমত আছে।
কী আছে মামলার ধারায়
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এ মামলাটি দণ্ডবিধির ৪০৯ ও ১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় করা হয়েছে। দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারা অনুযায়ী, ‘যে ব্যক্তি তার সরকারি কর্মচারীজনিত ক্ষমতার বা একজন ব্যাংকার, বণিক, আড়তদার, দালাল, অ্যাটর্নি বা প্রতিভূ হিসাবে তাহার ব্যবসায় ব্যাপদেশে যে কোনও প্রকারে কোনও সম্পত্তি বা কোনও সম্পত্তির ওপর আধিপত্যের ভারপ্রাপ্ত হইয়া সম্পত্তি সম্পর্কে অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ করেন, সেই ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে বা ১০ বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত হইবে এবং তদুপরি অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবে।’
দুদক আইনের ৫(২) ধারায় বলা আছে, ‘কোনও সরকারি কর্মচারী অপরাধমূলক অসদাচরণ করিলে বা করার উদ্যোগ গ্রহণ করিলে তিনি সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের যোগ্য হইবেন।’
মামলার অভিযোগ
মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিলে ইউনাইটেড সৌদি কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে ১২ দশমিক ৫৫ লাখ মার্কিন ডলার আসে, যা বাংলাদেশি টাকায় তৎকালীন ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৮১ হাজার ২১৬ টাকা। তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় ১৯৯১ সালের ৯ জুন থেকে ১৯৯৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই অর্থ দেশের প্রতিষ্ঠিত কোনো এতিমখানায় না দিয়ে অস্তিত্ববিহীন জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট গঠন করেন। অথচ কোনো নীতিমালা তিনি তৈরি করেননি, করেননি কোনো জবাবদিহিতীর ব্যবস্থাও। অথচ খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল থেকে ২ কোটি ৩৩ লাখ ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা অস্তিত্ববিহিনী জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টে পাঠান। পরে ওই টাকা আত্মসাত করেন, যার জন্য তিনি দায়ী। তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে বলেন, খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় থেকে নিজের পদমর্যাদা বলে সরকারি এতিম তহবিলের আর্থিক দায়িত্ববান বা জিম্মাদার হয়ে বা তহবিল পরিচালনার ভারপ্রাপ্ত হয়ে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ করে দণ্ডবিধির ৪০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারার অপরাধ করেছেন।
২০০৮ সালের ৩ জুলাই খালেদা জিয়াসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। ২০১০ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়াসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপ-পরিচালক হারুন অর রশীদ।
অন্যান্য আসামি
মামলায় খালেদা জিয়া ও বড় ছেলে তারেক রহমান ছাড়া বাকি আসামিরা হলেন– মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সাবেক মুখ্যসচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান। মামলার ছয় আসামির মধ্যে খালেদা জিয়া জামিনে রয়েছেন।
আসামিদের মধ্যে মাগুরার সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ কারাগারে থাকলেও তারেক রহমান, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান পলাতক।