১৫ বছরের অগ্রিম ভিসা পেলেন লুসি
প্রকাশ : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৩:০৫
বাংলাদেশের মানুষকে ভালোবেসে দীর্ঘ সময় যিনি মানুষের সেবায় পার করে যাচ্ছেন সেই ব্রিটিশ নাগরিক লুসি হল্টকে আগামি ১৫ বছরের অগ্রিম ভিসা দেয়া হয়েছে এবং সেই সাথে তার ভিসা ফিও মওকুফ করা হয়েছে।
১ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব মনিরা হক স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি নোটিশ জারি করা হয়।
লুসি হল্টের ভিসার বিষয়টি নিশ্চিত করে বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান জানান, লুসি হল্ট আগামি ১৫ বছরের জন্য এম ক্যাটাগরিতে মাল্টিপল ভিসা পেয়েছেন। এটি অনেক আনন্দের বিষয়। আশা করি, লুসি হল্টের নাগরিকত্বের জন্য যে আবেদন করা হয়েছে তা দ্রুত সমাধান হবে।
উল্লেখ্য, ১৯৩০ সালের ১৬ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্যের সেন্ট হ্যালেন্সে জন্ম হয় লুসি হেলেন ফ্রান্সিস হল্ট এর। ১৯৬০ সালে তিনি প্রথম বাংলাদেশে আসেন। যোগ দেন বরিশাল অক্সফোর্ড মিশনে। ১৯৭১ সালে যশোর ক্যাথলিক চার্চের স্কুলে শিশুদের ইংরেজি পড়াতেন সিস্টার লুসি। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে চার্চটি বন্ধ করে মিশনের সবাই খুলনায় নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। কিন্তু পালিয়ে না গিয়ে নিজের জীবন বিপন্ন করে লুসি ছুটে যান পাশের ফাতেমা হাসপাতালে। সেখানে আহত অসংখ্য নারী, পুরুষ, শিশুর কান্না দেখে আপ্লুত লুসি অসহায় মানুষদের সেবা দিতে চাইলেন। ভিনদেশি এক নারীর এমন আগ্রহ দেখে চিকিৎসকরা বিস্মিত হলেও সম্মতি দেন। এরপর থেকেই মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যুদ্ধাহত ব্যক্তিদের শুশ্রূষা দিতে থাকেন লুসি।
তারপর অনেক বছর কেটে গেছে। কিন্তু এখনো মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন ৮৭ বছর বয়সী এই ব্রিটিশ নারী। এমনকি নিজের জন্মভূমিতেও ফিরে যাননি। ২০০৪ সালে অবসর গ্রহণের পর এখনো বাংলাদেশকে ভালোবেসে বরিশাল নগরের অক্সফোর্ড মিশনে দুস্থ শিশুদের অবৈতনিক ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। তার শেষ ইচ্ছা তাকে যেন এই বাংলার মাটিতেই চিরনিদ্রায় সমাহিত করা হয়। আর তাই মৃত্যুর আগে এই দেশের নাগরিকত্ব পেতে চান লুসি।
মাত্র ৭৫ পাউন্ড অবসর ভাতা পেয়ে অক্সফোর্ড মিশনের একটি জরাজীর্ণ কক্ষে থাকেন তিনি এখন। এই স্বল্প আয় থেকেই টাকা জমিয়ে দ্বৈত নাগরিকত্বের জন্য বেশ কয়েকবার আবেদন করেছেন এই জনহিতৈষী নারী। কিন্তু প্রত্যাশিত সাড়া মেলেনি। তবু লুসির বিশ্বাস, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি তার ব্যাপারে জানতে পারেন তাহলে নিশ্চয়ই তাকে নাগরিকত্বের অনুমতি দিয়ে দিবেন।
লুসি বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্ম ১৬ ডিসেম্বর আর আমার জন্মও একই দিনে। এটা কাকতালীয় হলেও বিষয়টি আমাকে খুব ভাবায়। হয়তো এটা ঈশ্বরের খেয়াল! অবসর গ্রহণের পর সবাই দেশে ফিরে যায়। কিন্তু আমি এই দেশকে এত ভালোবেসে ফেলেছি যে, এর মায়া ছেড়ে যেতে মন সায় দেয়নি। তাই জীবনের সেরা সময়গুলো কাটানো এই বরিশালেই ফিরে এসেছি। মৃত্যুর পর এখানের মাটিতেই সমাহিত হতে চাই।’