জঙ্গি সম্পৃক্ততার আশঙ্কা: ৩ নারী সহ পুরো পরিবার নিখোঁজ!
প্রকাশ : ১৮ জুলাই ২০১৬, ১৭:২০
গুলশানের হলি আর্টিসানে হামলায় জড়িত পাঁচ তরুণই দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ ছিল। ঘর থেকে পালিয়ে গিয়েই তারা জঙ্গি প্রশিক্ষণ নেয় এবং এক পর্যায়ে আর্টিসানে আক্রমণ করে ২০ জনকে হত্যা করে তারা। এরপর জানা যায়, তাদের মত সারা দেশে আরও তরুণ একই প্রক্রিয়ায় ঘর ছেড়েছে।
তবে হুট করেই উধাও হওয়া ব্যক্তিদের তালিকায় এবার যোগ হয়েছে তিন তরুণীর নাম। পরিবারের সদস্যদের কিছু না জানিয়েই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন এসব তরুণীও জঙ্গি তৎপরতায় জড়িয়েছে বলে সন্দেহ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ রকম নিখোঁজ তরুণদের ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে টেলিভিশনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে আকুতি জানানো হচ্ছে। কিন্তু ধর্ম, মানবতা ও ইসলামের স্বার্থে ফিরে আসার এই আহ্বান পাত্তা দিচ্ছে না কেউ।
প্রথমে ১০ জনকে ফিরে আসার আহ্বান সম্বলিত বার্তা প্রচার হলেও এই তালিকা এখন বড় হচ্ছে। সবশেষ যোগ হলো তিন নারী নাইমা আক্তার, রেজওয়ানা রোকন ও রামিতা রোকনের নাম।
নিখোঁজ বেশিরভাগ তরুণের মত তিন তরুণীর পরিবারও আর্থিক দিক থেকে স্বচ্ছল এবং তারা উচ্চশিক্ষিতও। তবে কারা এবং কোথায় এদেরকে নিয়ে গেছে, সে বিষয়ে অন্ধকারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এদের বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা তৎপর থাকলেও এখন পর্যন্ত গোলকধাঁধায় তারা। এখন পর্যন্ত নাম ছাড়া এই তরুণীদের বিষয়ে তেমন কোনও তথ্য দিতে পারছে না পুলিশ। আর চার তরুণের মধ্যে একজনের বিষয়ে কিছুটা তথ্য পাওয়া গেছে।
কেবল বাংলাদেশ নয়, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকেও পালিয়ে গিয়ে তরুণদের পাশাপাশি তরুণীরা মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনে জড়াচ্ছে।
নিখোঁজ তিন নারী
রামপুরা থানাধীন খিলগাঁও চৌধুরীপাড়া থেকে ৩ নারীসহ একই পরিবারের ৫ সদস্য নিখোঁজ হয়েছেন। গত প্রায় ১৩ মাস ধরে তারা নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে।
সোমবার (১৮ জুলাই) রামপুরা থানার ডিউটি অফিসার সহকারী পরিদর্শক (এসআই) কামরুল ইসলাম বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করে বলেন, এ বিষয়ে নিখোঁজ ব্যক্তিদের আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে তথ্য জানার চেষ্টা চলছে।
নিখোঁজ ব্যক্তিরা হলেন, খিলগাঁও চৌধুরীরপাড়ার ডা. রোকনুদ্দীন খন্দকার, পাসপোর্ট নম্বর- এএফ১০১৩০৮৮, তার স্ত্রী নাইমা আক্তার, পাসপোর্ট নম্বর- বিসি০০০৬৯৩৭, রোকনুদ্দীন খন্দকারের দুই মেয়ে রেজওয়ানা রোকন, পাসপোর্ট নম্বর- বিসি০০৩৫১৯৮ ও রামিতা রোকন, পাসপোর্ট নম্বর- বিসি০০৪৫৩৩৯ এবং ছেলে সাদ কায়েস, পাসপোর্ট নম্বর বিএফ০৪৮৬৬৪২।
কেয়ারটেকার হেলাল উদ্দিন এর ভাষ্যমতে, ২০১৫ সালের জুন মাসে তারা যাওয়ার দিন সকালে সে নিজেই ওই পাঁচটি লাগেজ গাড়িতে তুলে দেন। সে সময় রোকন উদ্দিন তাকে বলেছিলেন, প্রথমে মালয়েশিয়া যাবো। পরে অন্য কোনো মুসলিম দেশে যাবো।
হেলাল উদ্দিন জানান, ডা. রোকন উদ্দিন জাতীয় শিশু হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ছিলেন। দেশ ছাড়ার মাসখানেক আগে তিনি স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে অব্যাহতি নেন। স্ত্রী নাঈমা আক্তার কবি নজরুল ইসলাম কলেজে উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। তিনিও চাকরি ছেড়ে দেশ ছাড়েন।
জানা যায়, ওই দম্পতির মেয়ে নাদীয়া আক্তার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে পড়ার সময় একই বিভাগের ছাত্র শিশিরের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। উভয় পরিবারের সম্মতিতে তাদের বিয়েও হয়। বিয়ের বছরখানেক পরেই পড়াশুনা শেষ না করেই তারা বাবা-মার সাথে দেশ ছাড়েন। আর ছোট মেয়ে রামিতা পড়তো ভিকারুননেছা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে।
দেশ ছাড়ার দু’মাস পরে রোকন উদ্দিন তার ভাই সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজের কাছে ফোন করে বলেছিলেন, ‘আমরা ভালো আছি। বর্তমানে মালয়েশিয়াতেই আছি।’ তবে এর পরে আর পরিবারের কারো সাথে যোগযোগ করেননি তিনি।
পুলিশের ধারণা, মালয়েশিয়ার নাম করে তারা স্বপরিবারে সিরিয়ায় গিয়ে আইএসেও যোগদান করতে পারেন।