'জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণ করাই আমার লক্ষ্য'
প্রকাশ : ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭, ২৩:০৩
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে ১৩ ডিসেম্বর দেয়া এক বাণীতে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মহান ত্যাগকে স্মরণ করে ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও নিরক্ষরতামুক্ত জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “আজকের এই দিনে আমি দেশবাসীকে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মহান ত্যাগকে স্মরণ করে ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও নিরক্ষরতামুক্ত জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানাই।”
সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বাণীতে বলেন “আমার লক্ষ্য জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা। আমি বিশ্বাস করি, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, সুখী সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হব।’
তিনি শহীদ বুদ্ধিজীবীসহ মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে বলেন, তাঁদের এই আত্মত্যাগ জাতি চিরদিন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।
তিনি বলেন, জনগণের বিপুল ম্যান্ডেট নিয়ে ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর বুদ্ধিজীবী হত্যাকারীসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। ইতোমধ্যে অধিকাংশ শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করা হয়েছে। বাকি দণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের রায় কার্যকর করা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, একাত্তরের পরাজিত শক্তি এই বিচার বানচাল করতে দেশে বিদেশে ষড়যন্ত্র করে দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালিয়েছে। আমরা দৃঢ়তার সাথে সকল ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্য পরিচালনা করছি। কোনো ষড়যন্ত্রই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করতে পারবে না। আমরা সকল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করবই। যারা ঘৃণ্য যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় নানা অপচেষ্টা করছে তাদেরও একদিন বিচারের আওতায় আনা হবে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী এই পরাজিত শক্তির ষড়যন্ত্র কখনও থেমে থাকেনি। মুক্তিযুদ্ধের এই পরাজিত শক্তি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করে। মুক্তমনা শিক্ষক, লেখক, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন চালায়। সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দিয়ে দেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিস্তার ঘটায়। খুন হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতন চালায়। এই সন্ত্রাসী ও জঙ্গিগোষ্ঠী ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত দেশব্যাপী ত্রাসের রাজত্ব চালায়, সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়ায়। জনগণের জীবন দুর্বিসহ করে তোলে।
“শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক গভীর কালো অধ্যায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার ঊষালগ্নে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি পরাজয় নিশ্চিত জেনে বাংলাদেশকে মেধাশুন্য করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের নৃশংসভাবে হত্যা করে।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দীর্ঘ ২৩ বছর পাকিস্তানি বৈষম্য ও শোষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করে মুক্তিকামী জনসাধারণকে সংগঠিত করে স্বাধীনতা ঘোষণা দেন। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালি জাতি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় জামাত ও কয়েকটি ধর্মান্ধ রাজনৈতিক দল।
এরা আলবদর, আলশামস ও রাজাকারবাহিনী গঠন করে পাক হানাদারবাহিনীকে সহায়তা করার পাশাপাশি হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজসহ অসংখ্য মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালি জাতির বিজয়ের প্রাক্কালে এই স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি দেশের শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, আইনজীবী, শিল্পী, প্রকৌশলী, দার্শনিক ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদসহ দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নির্মমভাবে হত্যা করে। তাদের মধ্যে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, মুনীর চৌধুরী, আনোয়ার পাশা, শহীদুল্লাহ কায়সার, গিয়াসউদ্দীন, ডা. ফজলে রাব্বি, আবদুল আলীম চৌধুরী, সিরাজউদ্দীন হোসেন, সেলিনা পারভীন, ড. জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা প্রমুখ।
শেখ হাসিনা বলেন, এই স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীরা পরিকল্পিত নৃশংস হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়। বাংলাদেশকে চিরতরে পঙ্গু করে দেয়ার জন্যই এই নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল।