মানবতাবিরোধী অপরাধ
৩ আলবদর-রাজাকারের ফাঁসির আদেশ
প্রকাশ : ১৮ জুলাই ২০১৬, ১২:৪১
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন, লুটপাট ও মরদেহ গুমের পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামালপুরের আট রাজাকার-আলবদরের মধ্যে তিনজনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। অপর পাঁচ আসামিকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। ওই পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে তিনটিই প্রমাণিত হওয়ায় এসব সাজা দেন ট্রাইব্যুনাল।
সোমবার (১৮ জুলাই) সকালে বিচারপতি আনোয়ারুল হক নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ রায় ঘোষণা করেন। বিচারিক প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদী।
ফাঁসির আদেশপ্রাপ্তরা হচ্ছেন- আলবদর বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ আশরাফ হোসাইন, মোহাম্মদ আবদুল মান্নান ও মোহাম্মদ আবদুল বারী। তাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে বা গুলি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরা করা যাবে বলে জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হচ্ছেন- জামালপুর জেলা জামায়াতের সাবেক আমির অ্যাডভোকেট শামসুল আলম ওরফে বদর ভাই ও সাবেক জামায়াত নেতা এস এম ইউসুফ আলী, অধ্যাপক শরীফ আহমেদ ওরফে শরীফ হোসেন, মো. হারুন ও মোহাম্মদ আবুল হাসেম।
এর আগে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যানের প্রারম্ভিক বক্তব্যের পর বেলা পৌনে ১১টার দিকে ২৮৯ পৃষ্ঠার রায় পড়া শুরু করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম। এর পর বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদী রায়ের বাকি অংশ পড়েন এবং সবশেষে বিচারপতি আনোয়ারুল হক সাজা ঘোষণা করেন।
২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধের বহু প্রতীক্ষিত বিচার শুরুর পর এটি ২৫তম রায়।
গত ২৫ মার্চ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমান ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন কার্যালয়ে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপুর কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। আসামিদের বিরুদ্ধে আনিত ৯২ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে জামালপুরের উক্ত আটজনের বিরুদ্ধে হত্যা, লাশ গুম, লুটপাট, নির্যাতন ও অপহরণসহ ১০ ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠনের পাঁচটি অভিযাগ পাওয়া গেছে। এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ১৯৬ পাতার দালিলিক প্রমাণ এবং ৪০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধের সময়কাল ১৯৭১ সালের ২২ এপ্রিল থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ধরা হয়েছে।
যুদ্ধকালে আসামিরা জামালপুরে প্রায় ১০ হাজার মানুষকে হত্যা, ৫০ হাজার বাড়িঘর ধ্বংস করে প্রায় ১২ কোটি টাকার ক্ষতিসাধন করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ও তাপস কান্তি বল। আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট সৈয়দ মিজানুর রহমান, ব্যারিস্টার এহসান সিদ্দিকী ও অ্যাডভোকেট এন এইচ তামিম। পলাতক ছয়জনের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আবদুস সুবহান তরফদার।