‘আওয়ামী লীগ অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়’
প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০১৭, ১৪:৫০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের ভিত্তি সুসংহতকরণে তার দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, আওয়ামী লীগ চায় আগামী নির্বাচন সম্পূর্ণ অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই আগামী নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হবে। কেননা জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য একদিন আমরাই সংগ্রাম করেছিলাম।’
প্রধানমন্ত্রী ১৪ অক্টোবর (শনিবার) সন্ধ্যায় তার সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ ও কার্যনির্বাহী সংসদের যৌথসভায় সভাপতিত্বকালে একথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের ভোটাধিকার সুসংহত করে গণতন্ত্রকে একটা প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি প্রদানই তাঁর দলের লক্ষ্য। সকলকে এখানে ডাকার উদ্দেশ্যই হচ্ছে গণতন্ত্রের ভিত্তিটাকে আরো মজবুত করা এবং জনগণের এই মৌলিক অধিকার যেন আর কখনো কেউ কেড়ে নিতে না পারে, সেটাকে সুরক্ষিত করা ও গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া। এটাই আমাদের লক্ষ্য এবং এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য আমাদের যা যা করণীয়- আমরা তা করে যাব।
নির্বাচনকে জনগণের মৌলিক অধিকার আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ৯ মাসের মাথায় আমাদেরকে একটি সংবিধান উপহার দিয়েছেন। সেখানে এই মৌলিক অধিকারের কথা সুনির্দিষ্টভাবে বলা আছে, যার ভিত্তিতেই ১৯৭৩ সালে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, অত্যন্ত দুঃখের বিষয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এই নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করেই এদেশে হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতির মাধ্যমে অবৈধ ক্ষমতা দখলের পালা শুরু হয়। সেখান থেকেই কিন্তু জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলাও শুরু।
তিনি জিয়াউর রহমানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘হ্যাঁ’, ‘না’ ভোটের তামাশা করা, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের নামে প্রহসন, সেনাপ্রধান হয়েও আর্মি রুলস অ্যাক্ট ও সংবিধান লংঘন করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং এরপর ক্ষমতায় গিয়ে রাজনৈতিক দল গঠন, উর্দি পরে রাজনীতি করার মাধমে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ ধ্বংস করে সামরিক শাসনের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করার একটা প্রক্রিয়া এদেশে চালু হয়।
সরকার প্রধান বলেন, তখন বার বার আমরা দেখেছি যে, নির্বাচন নিয়ে কিভাবে খেলা হয়েছে, যারাই ক্ষমতায় এসেছে। জিয়াউর রহমানই শুরু করেছিল অবৈধ ক্ষমতা দখলের প্রক্রিয়া। তারপর জেনারেল এরশাদ একই কান্ড ঘটালো।
এরপর অনেক আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যদিয়ে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই গণতান্ত্রিক ধারাটাও আবার ব্যাহত করলো খালেদা জিয়া-১৯৯১ সালে ক্ষমতায় আসার পর।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৯৬ সালে খালেদা জিয়া একটা ভোটারবিহীন নির্বাচন করলো। যদিও বাংলাদেশের মানুষ সেই নির্বাচন মেনে নেয়নি এবং মাত্র দেড় মাসের মাথায় আন্দোলন-সংগ্রামের ফলে খালেদা জিয়া ক্ষমতা থেকে উৎখাত হলো। এরপর নির্বাচন হয় ’৯৬ সালের ১২ জুন, সেই নির্বাচনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে।
তিনি বলেন, মূলত: ক্ষমতায় গেলে একটা দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি করা যায়, দেশের মানুষ এর সুফল পায় এবং সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে দেশের মানুষের কল্যাণ করা, উন্নয়ন করা- এটা কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই প্রথম দেশের মানুষ বুঝে উঠতে পারলো। কারণ এর আগে ’৭৫ এর পর থেকে কার্ফ্যু দিয়ে ‘মার্শাল ল’ অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে সংবিধানে নানারকম পরিবর্তন করে দেশ চালানো হয়েছে। সেখানে বিচার বিভাগ, প্রশাসন অথবা জাতীয় সংসদ- সবগুলোকেই তাদের কুক্ষিগত করা হয়।
তিনি বলেন, আমার মনে আছে- উচ্চ আদালতের বিচারকদের বয়স আমাদের সংবিধানে ৬২ বছর ছিল, সেটাকে ৬৫ বছর করা হয়েছিল। আবার ৬৫ থেকে ৬২ করে দিয়ে বিচারকদের বিদায়ের ব্যবস্থা করা হয়। একবার নয়, এ ধরনের কাজ বারবার করা হয়েছে।
জিয়াউর রহমানকে অভিযুক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি এবং জিয়াউর রহমানই এ ধরনের কান্ড ঘটায়। দেখা গেছে, এজলাসে প্রধান বিচারপতি বসে আছেন অথচ, তিনি জানেনও না যে, তিনি পদে নেই। ‘মার্শাল ল’র মাধ্যমে তাকে বিদায় দেয়া হয়েছে। একজন বিচারপতিকে রাষ্ট্রদূতের চাকরি দিয়ে দেশের বাইরে পাঠানো হলো।
সরকার প্রধান বলেন, শুধু তাই নয়, আমাদের নিয়োগ করা বিচারপতিদের নিয়োগ বাতিল করা হলো এবং স্বাধীনতার বিরোধিতাকারীদের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও উপদেষ্টা করে এই মহান সংসদে বসানো হলো। জাতির পিতার আত্মস্বীকৃত খুনীদের সংসদে বসানো হলো। দুর্নীতিকেই একটা নীতি হিসেবে গ্রহণ করে ঋণ খেলাপিদের নিয়ে একটি এলিট শ্রেণী তৈরী করা হলো।
সরকার গঠনের পর জনগণের সেবা করাই যে সরকারের কাজ তার উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন কিভাবে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করা যায়, জনগণ যেন স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে, তাদের ভোটের অধিকার সকলেই যেন যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে পারে, আওয়ামী লীগ সেজন্য আন্দোলনও করেছে।
আওয়ামী লীগই ভোট ও ভাতের অধিকারের আন্দোলন করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরাই শ্লোগান তুলি ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব।’ অর্থাৎ ভোটের অধিকার সম্পর্কে মানুষকেও সচেতন করে তোলা হয়।
অতীতে দেশের অনেক নির্বাচনে অনেক রকমের ষড়যন্ত্র হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫ এ জাতির পিতাকে হত্যার মধ্যদিয়ে সারাবিশ্বে বাংলাদেশকে হেয় করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ আজকে সেখান থেকে দেশকে উদ্ধার করে সারা বিশ্বে বাংলাদেশকে একটি সম্মানজনক অবস্থানে এনে দাঁড় করিয়েছে। আজ বিশ্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামীতে যে নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনও যাতে অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়- আমরা তা চাই। আমরা জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করেছি এবং আমাদের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে আজকের নির্বাচনে স্বচ্ছ ব্যালটবাক্স থেকে শুরু করে ছবিসহ ভোটার তালিকা- সব আমরা করতে পেরেছি।
ইলেকট্রনিক ভোটিং সিস্টেম আজকের অনেক সভ্যদেশে রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানে একটা ভোটই একজন দিতে পারবে। সে ব্যবস্থাটাও যাতে হয় আমরা সে প্রস্তাবও দিয়েছিলাম। আওয়ামী লীগের একটাই কথা মানুষ স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে এবং নিসংকোচে তার সাংবিধানিক ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সরকারে থাকাকালীন প্রত্যেকটা স্থানীয় সরকার নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। অনেক স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী জয়লাভ করেছে। ৪টি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেই বিএনপি জয়লাভ করেছে, আমরাতো বাধা দেইনি, ভোটের রেজাল্ট বদলাইনি, মানুষের ওপর জুলুম করিনি। মানুষ যাকে খুশী তাকেই স্বাধীনভাবে ভোট দেবে, সেই কাজটাই আমরা করতে চাই।
শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন কমিশন সব দলের সঙ্গে আলোচনা করবে। আমরা নিশ্চয়ই সে অনুষ্ঠানে যাব এবং তার প্রস্তুতির জন্য ইতোমধ্যেই বেশকিছু ড্রাফট এবং আরো কিছু কাজ করা হয়েছে- সেখানে আমরা সেগুলো উপস্থাপন করবো। একটা প্রতিনিধি দল করে দেব, যারা নির্বাচন কমিশনে যাবে। সকলের মতামতের ভিত্তিতে আমরাও কিছু বলবো এবং সেটা তৈরীর জন্যই আজকে এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে।