গুলশান হামলা
কুপিয়ে ও গুলি করে জিম্মিদের হত্যা
প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০১৬, ১৬:৩০
রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় জঙ্গিরা মোট ২০ জন জিম্মিকে হত্যা করে। নিহত দেশি-বিদেশি জিম্মিদের শরীরে ধারালো অস্ত্রের কোপ ও গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক অবিন্তা কবীরকে ভারি অস্ত্রের আঘাতে এবং ৭ জনকে হত্যার আগে গুলি করা হয়। নিহত অবিন্তা কবীরসহ মোট ২ জন ব্যতীত বাকি সবার গলা কাটা ছিল।
বুধবার (১৩ জুলাই) গুলশান থানা পুলিশের তত্ত্বাবধানে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নিহতদের ময়নাতদন্তের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ এ তথ্য জানান।
ঢামেক-এর তৃতীয় তলায় নিজ কক্ষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘গুলশান থানা পুলিশের নির্দেশে হামলায় নিহত ২৬ জনের ময়নাতদন্ত করি সিএমএইচে। এর মধ্যে পাঁচজন জঙ্গি রয়েছে।’
নিহত জিম্মিদের ময়নাতদন্ত প্রসঙ্গে ডা. সোহেল বলেন, ‘২০ জনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেছি। এরমধ্যে সাতজনের শরীরে ৮টা ও একজনের শরীরে দুইটা গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে।
‘পেছন থেকে তাদের ঘাড়ে গুলি করা হয়েছে। প্রত্যেকের শরীরে রয়েছে ধারালো অস্ত্রের আঘাত। তবে অবন্তী কবিরকে মাথায় ভারী বস্তু দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে’ এক প্রশ্নের জবাবে বলেন তিনি।
ডা. সোহেল বলেন, ‘সবার ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। একই সঙ্গে নিহত জিম্মি নারীদের সেক্সুয়াল অ্যাসাল্ট করা হয়েছে কিনা-এজন্যে হাই ভ্যাজিনাল স্বব (High vaginal swab) সংগ্রহ করেছি।’
ছয় জঙ্গির ময়নাতদন্তের বিষয়ে ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘ ‘নিহত জঙ্গিদের প্রত্যেকের শরীরে গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে তিনজনের শরীর বোমার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে একজনের হাতের কিছু অংশ, অন্যজনের হাত বিচ্ছিন্ন এবং আরেকজনের শরীরের একপাশ থেতলে গেছে। নিহত ৬ জনের মাসল টিস্যু ও চুল থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করা হয়েছে। আশা করি আগামী সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়া যাবে।’
এছাড়া ছয় জঙ্গি কীভাবে ২০ জন জিম্মিকে হত্যা করলো? হত্যার পূর্বে তারা শক্তিবর্ধক কোনো ড্রাগস নিয়েছে কি না জানতে আদালতের নির্দেশে তাদের ভিসেরা সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানান সোহেল মাহমুদ।
উল্লেখ্য, গত ১ জুলাই (শুক্রবার) রাতে গুলশান ২ নম্বরের ৭৯ নম্বর সড়কের হলি আর্টিসান বেকারিতে একদল অস্ত্রধারী জঙ্গি বেশ কয়েকজন দেশি-বিদেশিকে জিম্মি করে। খবর পেয়ে ওই রেস্তোরাঁয় অভিযানে গেলে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা। পরদিন অর্থাৎ ২ জুলাই সকালে সেনা বাহিনীর নেতৃত্বে কমান্ডো অভিযান চালিয়ে ওই রেস্তোরাঁর নিয়ন্ত্রণ নেয় নিরাপত্তা বাহিনী। এ সময় ২০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ১৩ জন জিম্মিকে। অভিযানে পাঁচ জঙ্গি নিহত হলেও একজনকে জীবিত অবস্থায় আটক করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
নিহত জিম্মিদের মধ্যে ৯ জন ইতালির, ৭ জন জাপানি ও ১ জন ভারতের নাগরিক। বাকি ৩ জন বাংলাদেশি, এর একজনের আবার যুক্তরাষ্ট্রেরও নাগরিকত্ব রয়েছে।