৯ দিন পর গণধর্ষণের শিকার কিশোরীর লাশ উত্তোলন
প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২০:১৭
নেত্রকোনা সদর উপজেলার ঠাকুরাকোনায় কিশোরী পান্না আক্তারকে গণধর্ষণ ও আত্মহত্যার প্ররোচণা মামলার তদন্তে পুনরায় ময়নাতদন্তের জন্য লাশ উত্তোলন করা হয়েছে।
নেত্রকোনার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের নির্দেশে দাফনের নয়দিন পর আজ ১৪ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) দুপুরে ঠাকুরাকোনা কবরস্থান থেকে মরদেহ উত্তোলন করা হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সায়দা পারভীনের উপস্থিতিতে নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে মরদেহ উত্তোলন করা হয়।
স্থানীয় কয়েকজন ও নিহত কিশোরীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কিশোরী পান্না আক্তার ঢাকায় গৃহকর্মীর কাজ করতো। পরিবারের সঙ্গে ঈদুল আজহা উদযাপন করতে গত ৩১ আগস্ট ঠাকুরাকোনা গ্রামের বাড়িতে যায় পান্না। ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ভবনসংলগ্ন একটি ঘরে মা-বাবার সঙ্গে থাকত সে। ঈদের পরের দিন ৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় গ্রামের যুবক মামুন কাজের কথা বলে পান্নাকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে যায়। রাত হয়ে গেলেও ফিরে না আসায় মা আল্পনা মেয়েকে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন।
রাত ৮টার দিকে এলাকায় মাছের খামারের একটি ঘরে মামুন, কৌশিক সরকার অপুসহ তিনজন যুবকের কাছ থেকে বিধ্বস্ত অবস্থায় মেয়েকে উদ্ধার করেন তিনি। এ সময় তার মেয়ে ধর্ষণের কথা জানিয়ে কান্নাকাটি শুরু করলে যুবকরা ঘটনা প্রকাশ না করতে হুমকি দেয়। একপর্যায়ে প্রতিবেশীদের মধ্যে জানাজানি হলে পরের দিন সকালে ঘরের আড়ার সঙ্গে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করে পান্না।
খবর পেয়ে নেত্রকোনা মডেল থানার পুলিশ পান্নার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। ৫ সেপ্টেম্বর পান্নাকে দাফন করা হয়।
পান্নার মা-বাবা সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, প্রভাবশালী মহলের কাছ থেকে প্রভাবিত হয়ে নেত্রকোনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমির তৈমুর আলি গণধর্ষণ ধামাচাপা দিতে শুধু অপমৃত্যুর মামলা করিয়ে নেন।
ওসি ময়নাতদন্তের আগেই সাংবাদিকদের জানান, পান্না রেপটেপ হয়নি। সে প্রেম সংক্রান্ত অভিমানে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে। সুতরাং অপমৃত্যুর মামলা চলবে।
এদিকে দোষীদের আটক না করায় এবং পুলিশের ভূমিকায় ফুঁসে ওঠে নেত্রকোনার সর্বস্তরের মানুষ। তারা ধর্ষকদের গ্রেপ্তার এবং ওসিকে প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও মানববন্ধন করে। এ আন্দোলনে সমাজের অন্তত ১৫টি বিভিন্ন সংগঠন অংশ নেয়। এসব আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ সুপার (এসপি) জয়দেব চৌধুরীর নির্দেশে রহস্য উদঘাটনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন। তিনি কিশোরীর পরিবার ও এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন।
পরে পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে গত ১০ সেপ্টেম্বর ঘটনার আটদিনের মধ্যে থানায় গণধর্ষণ ও আত্মহত্যা প্ররোচণার মামলা করতে পারেন কিশোরীর মা আল্পনা। প্রত্যাহার করা হয় অপমৃত্যু মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মোস্তাক আহমেদকে। আর গণধর্ষণ মামলার একদিন যেতে না যেতেই তিন আসামির দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তারা হলেন ঠাকুরাকোনা গ্রামের মামুন আকন্দ ও ছাত্রলীগ নেতা কৌশিক সরকার অপু। পরে ১৩ সেপ্টেম্বর (বুধবার) বিকেলে তারা ধর্ষণে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।