‘মানুষ হত্যা কি তাদের বিবেককে নাড়া দেয় না?’
প্রকাশ : ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৮:৩৪
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা শান্তি চাই। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আমরা সু-সম্পর্ক চাই। কিন্তু কোনো অন্যায় আমরা মেনে নিতে পারি না। মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে হবে।
আজ ১২ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন শেষে এক সভায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানবিক দিক বিবেচনায় বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের খাদ্য, আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। আমি রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে আহ্বান জানাচ্ছি। তবে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমাদের যা করার দরকার আমরা সেটি করবো।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমারে যেভাবে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে তাতে কি তাদের বিবেককে নাড়া দেয় না? একজনের ভুলে এভাবে লাখ লাখ মানুষ ঘরহারা হচ্ছে। আমরা শান্তি চাই। আমরা ১৬ কোটি মানুষের দেশ। সবার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছি। সেখানে আরও ২/৫/৭ লাখ মানুষকেও খেতে দিতে পারবো।’
তিনি প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘আমি জেনেছি যারা আশ্রয় নিতে এসেছেন তাদের অনেকেই অসুস্থ। তাদের দ্রুত চিকিৎসা ব্যবস্থা দেওয়া হোক।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বেসরকরি সংস্থা বা অন্য কোনও সংগঠন রোহিঙ্গাদের ত্রাণ বা সাহায্য সহযোগিতা করতে চাইলে তা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে করতে হবে। রোহিঙ্গা সংকটের সুযোগ নিয়ে কেউ যেন কোনও ধরনের বাণিজ্য করতে না পারে সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
এর আগে আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সকাল ১০টার দিকে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি ১৯০৯ ফ্লাইটটি অবতরণ করে কক্সবাজার বিমানবন্দরে। এসময় বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ এবং স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
বিমানবন্দরে অবতরণের পর সেখান থেকে সড়কপথে উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পের পথে রওনা হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, পূর্ত মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, হুইপ ইকবালুর রহিম, মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম, মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ আগস্ট (শুক্রবার) রাতে একযোগে রাখাইনের ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ঘাঁটিতে হামলা করে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)। এই হামলার সূত্র ধরে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দমন অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী ও পুলিশ। এরপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হামলা-নির্যাতন থেকে বাঁচতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসতে শুরু করে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। তবে স্থানীয় লোকজনের দাবি, এই সংখ্যা আরও বেশি। এছাড়াও নাফ নদীর জলসীমানা থেকে শুরু করে স্থল সীমানা পার হয়ে নো-ম্যানস ল্যান্ডে অবস্থান নিয়েছে আরও হাজার হাজার রোহিঙ্গা।
এর আগে গত ৭ সেপ্টেম্বর উখিয়ার কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গাদের নিবন্ধিত ক্যাম্প ও অস্থায়ী ক্যাম্পগুলো পরিদর্শন করেন তুরস্কের ফার্স্টলেডি এমিন এরদোয়ান।
বাংলাদেশ সরকার মানবিক কারণে এসব শরণার্থীকে প্রাথমিক সাহায্য দিয়ে উখিয়ার বালুখালীতে বন বিভাগের জয়গায় তাদের থাকার জন্য অস্থায়ীভাবে আশ্রয়কেন্দ্র তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারের এই প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছে জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ।
সরকার মিয়ানমারের ঢাকাস্থ শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে ডেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি রাখাইনে হামলা-নির্যাতন বন্ধেরও দাবি জানানো হয়েছে।