নওগাঁয় বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি
প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০১৭, ১৫:২৭
নওগাঁয় বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। কয়েকদিনের অবিরাম বর্ষণ ও উজান থেকে ধেয়ে আসা পানিতে বন্যায় মান্দা, রাণীণগর ও আত্রাই উপজেলার ১২টি স্থানের বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। বন্যার পানিতে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
নওগাঁর আত্রাই নদীর ১৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে আত্রাই নদীর বুড়িতলা, শহরবাড়ি, চকরামপুর নুরুল্ল্যাবাদসহ মান্দা উপজেলার বেশ কয়েক স্থানে, আত্রাইয়ের মালিপুকুর ও রানীনগর উপজেলার ঘোষগ্রামে, ধামইরহাটের শিমুলতলীতে বাঁধ ভেঙে বন্যার পানি প্রবেশ করে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যহত থাকায় নদীপাড়ের মানুষেরা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। গতরাতে আত্রাই নদীর মান্দা উপজেলার কশব ইউনিয়নের পাজরভাঙ্গা সমির শাহর বাড়ির নিকট বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ২৭৫টি পরিবার পানির নিচে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। দক্ষিণ চকবালু হিন্দুপাড়া নামক স্থানে এবং নুরুল্লাবাদে বেরি বাঁধ ভেঙে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে শতাধিক গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় পাঁচ ২০ হাজার হেক্টর জমির আমন ধানসহ অন্যান্য ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ছোট যমুনার পানি বেড়ে যাওয়ায় নওগাঁ শহরেও নদীর পানি প্রবেশ করেছে। ছোট যমুনা নদীর ফ্লাডওয়ালের আউটলেটগুলো দিয়ে শহরে পানি ঢুকে পড়েছে। এর ফলে শহরের ডিগ্রির মোড়, বিহারী কলোনী, উকিলপাড়া, জেলা প্রশাসকের বাসভবন, পুলিশ সুপারের বাসভবন, পুরাতন কোর্ট এলাকা, জেলা পরিষদের ডাকবাংলো, সুপারীপট্টি, কালিতলা, পার নওগাঁ এলাকায় এক থেকে দেড় ফুট পানির নীচে। উকিলপাড়া সড়ক, কাচাড়ী সড়ক, কেডি’র মোড় থেকে মুক্তির মোড় সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
বর্তমানে মান্দায় অসহায় পরিবারগুলো বিশ্ববাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। এখন পর্যন্ত কোন সরকারি সাহায্য বা ত্রাণ তাদের কাছে না পৌঁছায় মানবেতন জীবন যাপন করছেন। বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের চকরামপুর উত্তরপাড়ায় বন্যার কবলে পড়েছে। রাত থেকে সেখানে ১৫-২০ জন সেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে গর্ত ও ছোট ছোট ভাঙ্গা স্থান মাটি দিয়ে মেরামতের কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। এ ছাড়া ঘোষপাড়া তালপাতিলা ও বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের কয়লাবাড়ি, চকশৈল্যা, ফতেপুর, ভালাইন ইউপি’র আয়াপুর, পাঠাকাঠা, মান্দা ইউপি’র দোসতিনা, কালিকাপুর,দোসতি, গনেশপুর ইউপি’র দক্ষিণ পারইল, প্রসাদপুর ইউপি’র প্রসাদপুর, খুদিয়াডাঙ্গা, দ্বারিয়াপুর, কুশুম্বা ইউপি’র ছোটবেলালদহ, শামুকখোল (বুড়িদহ) গ্রাম বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এসব গ্রামের অসহায় প্রায় সাড়ে তিনশত বর্ন্যাত পরিবারগুলো স্থানীয় বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজন, বিশ্ববাঁধসহ রাস্তায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। বন্যা কবলিত এসব গ্রামের মানুষের এখন খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
মান্দা উপজেলার নির্বাহী অফিসার নুরুজ্জামান জানিয়েছেন মান্দা উপজেলায় আত্রাই নদীতে কমপক্ষে ৮টি পৃথক স্থানে ভেঙ্গে গেছে। এর মধ্যে বুড়িদহ সুজনসখি ঘাট এবং চকমারপুর নামকস্থানে মূল বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। অপরদিকে পার নুরুল্যাবাদ, চকরামপুর, চকবালু, কয়লাবাড়ি ও কয়াপাড়া কলেজ মোড়ে বেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে গেছে।
সোমবার ভোর রাতে আত্রাই-সিংড়া সড়কের মালিপকুর নামক স্থানে ভেঙ্গে যাওয়ায় আত্রাই-সিংড়া সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে ওই এলাকার শতশত হেক্টর জমির ফসল পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় কৃষকেরা হতাশ হয়ে পড়েছে। এদিকে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করেছে।
এ সড়কটি ভাঙ্গার ফলে উপজেলার মালিপকুর, জগদাশ, গুড়নই, শিকারপুর, মধুগুড়নই, সাহেবগঞ্জ, খঞ্জর, জয়সাড়া, নবাবের তাম্বু, পবনডাঙ্গা, বিপ্রবোয়ালিয়া, ক্ষুদ্রবোয়ালিয়া, বাকিঅলমাসহ আশপাশের এলাকার ফসল পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া ও মাটির কাঁচা বাড়ি-ঘর ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
অপর দিকে নদীর পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে উপজেলার ১নং শাহাগোলা ইউনিয়নের উদনপৈ, জাতোপাড়া, মিরাপুর, ফুলবাড়ি, পূর্বমিরাপুর, জাতআমরুল জিয়ানীপাড়া, হাটকালুপাড়া ইউনিয়নের সন্নাসবাড়ি, পারশিমলা, চকশিমলা, হাটকালুপাড়া, হাটুরিয়া, দরগাপাড়া, দ্বিপচাঁদপুর, পাহাড়পুর, বড়াইকুড়ি, পাইকারা, নন্দনালী, কুসুম্বাসহ প্রায় ২৫টি গ্রামের লোকজন পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
আত্রাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোখলেছুর রহমান জানান, আমি সকালে নিজে গিয়ে ভাঙ্গা স্থানটি দেখেছি এবং বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করা হয়েছে। তারা দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন।
নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন জানান, আত্রাই নদীর পানি বর্তমানে বিপদ সীমার ১৭০ সেঃ মিটার ওপর দিয়ে ও ছোট যমুনা নদীর পানি বিপদ সীমার ৬৫ সেঃ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত বেরি বাঁধ গুলো মেরামতের কাজ চলছে বলেও জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন।
প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক ড. মোঃ আমিনুর রহমান বলেছেন, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর তালিকা তৈরীর কাজ চলছে। সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।