নায়িকাকে গণধর্ষণ করে হত্যা, ১১ জনের নামে মামলা
প্রকাশ : ১৮ জুলাই ২০১৭, ১৫:১৯
যাত্রাদলের নায়িকা টুম্পা খাতুনকে গণধর্ষণের পর কেরোসিনে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহানেওয়াজ ডালিমসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়েছে। স্বামী সাইফুল্লাহ গাজীর একের পর এক বিয়ে করার প্রতিবাদ করায় মাদকাসক্ত স্বামীর সহায়তায় টুম্পাকে গণধর্ষণের পর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে হত্যা করা হয়।
১৩ জুলাই (বৃহস্পতিবার) আশাশুনি উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের ইসমাইল হোসেন সরদারের ছেলে শহীদুল ইসলাম বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে এ মামলা করেন।
ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক সাতক্ষীরার জেলা ও দায়রা জজ জোয়ার্দার আমিরুল ইসলাম অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গণ্য করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আশাশুনি থানা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেনে।
মামলার আসামিরা হলেন- আশাশুনি উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের টুম্পার স্বামী সাইফুল্লাহ গাজী, একই গ্রামের রিপন সরদার, আবু মুছা, খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ ডালিম, দুর্গাপুর গ্রামের কামরুল ইসলাম, তার ভাই আনারুল ইসলাম, লাভলু গাজী, মহসিন সরদার, খায়রুল ইসলাম, চেউটিয়া গ্রামের কবীর হোসেন ও খুলনা জেলা শহরের সোনাডাঙা গোবরচাকা মেইন রোডের চিশতি ওরফে চুন্নু চোরা। এ ছাড়া আরও পাঁচজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, পাঁচ বছর আগে আশাশুনির দুর্গাপুর গ্রামের সোনা চৌকিদারের বাড়ির পাশে মাঠে যাত্রা অভিনয়ের জন্য আসা গোপালগঞ্জ জেলা সদরের বটবাড়ি গ্রামের মনীন্দ্র নাথ বিশ্বাসের মেয়ে সোমা বিশ্বাসকে ফুসলিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ ডালিমের সহযোগিতায় ধর্মান্তরিত করে টুম্পা খাতুন নাম দিয়ে বিবাহ দেয়া হয় সাইফুল্লাহ গাজীর সঙ্গে। এ দম্পত্তির মরিয়ম নামে দুই বছর বয়সী একটি মেয়ে আছে।
সাইফুল্লাহর প্রথম স্ত্রী বর্তমানে খাজরা সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য আমেনা খাতুন। কিছু দিন আগে সাইফুল্লাহ আরও এক যাত্রা শিল্পীকে বিয়ে করেন। বর্তমানে তার ছয় স্ত্রী। এ নিয়ে টুম্পার সঙ্গে সাইফুল্লাহর বিরোধ চলছিলো। প্রতিবাদ করায় সাইফুল্লাহ টুম্পাকে নির্যাতন করতেন। ৯ জুন রাতে সাইফুল্লাহর বাগদা চিংড়ি হ্যাচারির বাসায় স্বামীর সঙ্গে অবস্থান করছিলেন টুম্পা। এ সময় স্বামীর সহায়তায় চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ ডালিমসহ কয়েকজন তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। রাতেই ভর্তি করা হয় সাতক্ষীরা হাসপাতালে। পরবর্তীতে খুলনা মেডিকেল কলেজে নেয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় টুম্পা খাতুন। মরদেহ গ্রামে এনে দাফন করা হয়।
আশাশুনি থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহিদুর রহমান শাহিন বলেন, টুম্পা খাতুনকে ধর্ষণ বা হত্যা করা হয়েছে এমন অভিযোগ নিয়ে কেউ থানাতে আসেনি। তাছাড়া টুম্পার মৃত্যুর পর তার বাবা-মা থানাতে একটি লিখিত দেন দুর্ঘটনায় তার মেয়ে মারা গেছেন। লিখিতটি থানায় জমা রয়েছে। হত্যার সমর্থনে কোনো বক্তব্য সেদিন কেউ দেয়নি।
আদালতে মামলা হওয়ার বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন, আদালতের কোনো নির্দেশনা এখনও হাতে পাইনি। হাতে পাওয়ার পর নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ ডালিমের সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোনকল রিসিভ করেননি।