‘মানুষের কল্যাণে যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করব’
প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০১৭, ০২:৩৯
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, ক্ষমতা আমার কাছে ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য নয়। মানুষের কল্যাণে জীবনে আমি যে কোন ত্যাগ স্বীকার করব। আমি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে, নিজেও তিন তিনবার প্রধানমন্ত্রী। নিজের ভাগ্যোন্নয়নের কথা কখনো চিন্তাও করি না। সন্তানদের বলেছি, তোমরা লেখাপড়া করেছ, এটাই তোমাদের সম্পদ। আমার সন্তানরা কখনো আমাকে বিরক্ত করে না। বলে না এ ব্যবসা দিতে হবে, ও ব্যবসা দিতে হবে; বরং তারা সবসময় আমার কাজে সহযোগিতা করছে। সজীব ওয়াজেদ জয়ের কারণেই আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে।
১২ জুলাই (বুধবার) জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে একাধিক সংসদ সদস্যের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমার চলার পথ কখনোই কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না, কণ্টকাকীর্ণই ছিল। অনেক ঘাত-প্রতিঘাত, চড়াই-উত্রাই ও বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে আমাকে এগুতে হয়েছিল। বারবার মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও হাল ছাড়িনি।
দেশের মানবাধিকার সুরক্ষা ও উন্নয়নে সরকারের দৃঢ় প্রতীজ্ঞার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে সরকার যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, যা রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে।
চীন থেকে দু’টি সাবমেরিন ক্রয় সম্পর্কে সংসদ নেতা বলেন, সাবমেরিন দু’টি বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে যুক্ত হওয়ায় আমাদের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পূর্বের তুলনায় অনেক শক্তিশালী হয়েছে, যা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থানকে উন্নত করেছে। আমি বিশ্বাস করি, চীন হতে সাবমেরিন ক্রয় বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থকেন্দ্রিক একটি সিদ্ধান্ত এবং এর ফলে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বহির্বিশ্বে কোন নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হবে না।
সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য বেগম ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অসংখ্যবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি, কিন্তু কখনো ভয় পাইনি। কারণ সত্য ও সততার পথে থাকলে যে কোন বাধা অতিক্রম করা যায়। সবসময় আমার আত্মবিশ্বাস আছে যে আমি কোনো অন্যায় করিনি। জনগণ নিশ্চয়ই তা একদিন বুঝতে পারবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্য পূরণের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মানুষের আয় বেড়েছে, সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে। বাংলাদেশ আজ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো দীর্ঘতম সেতু নির্মাণ করার সাহস দেখিয়েছে। একটি মানুষও গৃহহীন না থাকার প্রত্যয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্প ও একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বালিয়ে আমাদের সরকার প্রতিটি নাগরিকের মনে আকাঙ্ক্ষার প্রদীপ জ্বালিয়ে তুলছে। নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বে প্রশংসিত বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশকে বিবেচনা করা হতো উন্নয়নের টেস্ট কেস হিসেবে, আর আজ বাংলাদেশ সারাবিশ্বের কাছে উন্নয়নের বিস্ময়ে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আদর্শ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ। বাংলার কৃষ্টি, বাংলার ঐতিহ্য, বাংলার রক্ত দিয়ে লেখা আমাদের বাংলা জাতীয়তাবাদ। আর সেই কারণে আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়নের মহাসড়কে অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে জনগণকে এগিয়ে চলার শক্তি যোগাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় নিশ্চিতভাবে বাংলাদেশ ২০৪১ সালের আগেই উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশে পরিণত হবে।
স্বতন্ত্র দলীয় সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সাবমেরিন দু’টি বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে যুক্ত হওয়ায় আমাদের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পূর্বের তুলনায় অনেক শক্তিশালী হয়েছে, যা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থানকে উন্নত করেছে।
সরকারি দলের সদস্য মো. আয়েন উদ্দিনের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০০৯ থেকে ২০১৭ সালের ১৫ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে মোট ৪৬ লাখ ৭৯ হাজার ২২৯ জন কর্মী বিদেশ গমন করেছে। এ খাতের গুরুত্ব অপরিসীম বিবেচনায় বিদ্যমান শ্রম বাজার ধরে রাখার পাশাপাশি নতুন নতুন শ্রম বাজার সৃষ্টির ওপর জোর দেয়া হয়েছে।