জুয়ানা বাজারার: শাস্তি যার ৭৫৯ বছরের কারাদণ্ড

প্রকাশ : ১২ জুন ২০১৮, ২০:২৩

জাগরণীয়া ডেস্ক

প্রায় অর্ধশত খুনের অভিযোগে ৭৫৯ বছরের জেল খাটছেন মেক্সিকোর এক নারী, নাম জুয়ানা বাজারার। পেশায় ছিলেন একজন পপকর্ন বিক্রেতা, সেই সাথে ছিলেন পেশাদার সার্কিটে রেসলার। কিন্তু মুদ্রার ঠিক উল্টোপিঠে তিনি ছিলেন একজন সিরিয়াল কিলার এবং খুন করতেন বয়স্ক নারীদের। সম্পূর্ণ বিপরীত সত্ত্বার এই নারীকে ধরতে পুলিশকে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল।

 ২৭ ডিসেম্বর ১৯৫৭ সালে মেক্সিকোর হিডালগো শহরে জন্মগ্রহণ করেন এই নারী। তিনি ছিলেন ৪ সন্তানের জননী। তিনি রেসলিং মঞ্চে দ্য লেডি অব সাইলেন্স নামে খেলতেন। তিনি ফ্রি স্টাইল রেসলিং খেলতেন এবং সে অনুযায়ি একটি মুখোশ ব্যবহার করতেন।

জুয়ানার ভিক্টিমদের বেশিরভাগেরই বয়স ৬০ বা তার ঊর্ধ্বে এবং তারা একা থাকতেন। পপকর্ন বিক্রির কারণে তিনি সহজেই ক্রেতাদের মনযোগ আকর্ষণ করতেন, বিশেষ করে বয়স্কদের। তাছাড়া তিনি নিজেকে সোশ্যাল ওয়ার্কার হিসেবে পরিচয় দিতেন এবং বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে তাদের অংশগ্রহণের জন্য ফরম পূরণের কথা বলে বয়স্ক নারীদের ঘরে ঢুকতেন। 

খুন করার জন্য তিনি কোন অস্ত্র ব্যবহার করতেন না। হাতের কাছে যা পেতেন তা দিয়েই নারীদের খুন করতেন তিনি। খুন করার পর ঐ বাড়ি থেকেই কিছুই চুরি করতেন না তিনি। তার চেয়ে বরং স্মৃতিস্বরূপ কোন একটা ছোট কিছু পকেটে নিয়ে চলে আসতেন। তিনি বেশিরভাগই খুন করেছেন ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে। পুলিশ সবসময় খুনীকে একজন ছেলে হিসেবে গণ্য করেছেন। তাই এই দীর্ঘ সময় পুলিশ এতগুলো খুনের কোন ক্লু তো ধরতে পারলোই না, বরং বার বার তদন্ত পথভ্রষ্ট হয়েছে।

এদিকে, একের পর এক খুনে রাজ্য জুড়ে ছিল আতঙ্ক আর পুলিশকে করা হচ্ছিল তাচ্ছিল্য। সেই সময় এই খবরটি ছিল মিডিয়ার মূল সেনসেশন। সরকারি হিসেব মতে নিহত নারীদের সংখ্যা ১১ হলেও, প্রকৃতপক্ষে তা ৫০ ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হয়।  ২০০৫ সালের দিকে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, খুনীর দেহ পুরুষালী হলেও তার পরণে ছিল মেয়েদের পোশাক। এরপর পুলিশের ধারণা হয়, খুনী কোন তৃতীয় লিঙ্গের একজন। সেভাবে তদন্ত চললেও আশানুরূপ কোন ফল পাওয়া যায়নি।

অবশেষে, ২৫ জানুয়ারী ২০০৬ সালে খুন করে বের হওয়ার সময় ধরা পড়েন জুয়ানা। ৮২ বছর বয়সী আলফারো নামে এক বৃদ্ধাকে স্টেথোস্কোপ দিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যাবার সময় তার পেয়িং গেস্টের মুখোমুখি পড়ে যান জুয়ানা। অবশেষে এই প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে অবশেষে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন জুয়ানা। এসময় তার কাছ থেকে একটি স্টেথোস্কোপ, পেনসন ফরম এবং সোশ্যাল ওয়ার্কারের পরিচয়পত্র উদ্ধার করা হয়।

এদিকে, জুয়ানাকে দেখে অবাক হয়ে যায় রাজ্যবাসী। কারোরই ধারণা ছিল না যে, রেসলিং মঞ্চ মাতানো এই খেলোয়াড় রাতের আঁধারে এমন কাজ করতে পারেন!

২০০৮ সালে জুয়ানার বিচার চলাকালীন সময়ে কেবল ঐ ৮২ বছরের বৃদ্ধাকে খুন করার কথাই স্বীকার করে। যদি তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ৪০ টি খুনের অভিযোগ আনে। খুনের কারণ হিসেবে জুয়ানা জানায়, খুনের নেপথ্য ছিল তার মায়ের প্রতি ঘৃণা আর বিদ্বেষ। নেশাগ্রস্ত মা মাতাল হয়ে বাড়ি ফিরত মাঝরাতে আর মেয়ের দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে রেখেছিল তার দ্বিতীয় স্বামীর উপরে। সেই সৎ বাবার কাছে দিনের পর দিন শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয় জুয়ানা, যা তাকে মাত্র ১২ বছর বয়সেই অপ্রকৃতস্থ করে তোলে।  জীবনের নোংরা দিকগুলো তাকে পেশা হিসেবে রেসলিংয়ের মতো লড়াকু খেলাকে বেছে নিতে সহায়তা করে। অপরদিকে মায়ের বয়সী যেকোন বৃদ্ধাকে খুন করান হয় তার নেশা।

জুয়ানার মতে, এতগুলো খুন সে একা করেনি। তার মত অনেকেই হয়ত এই পথ বেছে নিয়েছে। যদি পুলিশের হিসাব ভিন্ন। তাদের মতে, গোটা সিরিয়াল কিলিং জুয়ানা একাই করেছে। বেশ কয়েকটি অপরাধ সংঘটনের স্থান থেকে তার হাতের ছাপের প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ।

২০০৮ সালের ৩১ মার্চ জুয়ানার বিরুদ্ধে ১৬ টি খুনের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয় এবং প্রায় ১১ টি খুনের অভিযোগের তালিকায় তার নাম রাখা হয়। রায় হিসেবে মেক্সিকোর আদালত তাকে ৭৫৯ বছরের কারাদণ্ড ঘোষণা করেন। 

 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত