'এই আইন আরো আগেই হওয়া উচিত ছিল'

প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৩:০৫

জাগরণীয়া ডেস্ক

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি এবং দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের সব স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে সংসদের সিদ্ধান্তকে ‘ঐতিহাসিক’ বলেছে বিভিন্ন সংগঠন।

বৃহস্পতিবার আইনসভায় এই সিদ্ধান্ত প্রস্তাব পাসের পর একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের সর্বোচ্চ সাজার দাবিতে আন্দোলন করে আসা একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, গণজাগরণ মঞ্চ এই প্রতিক্রিয়া জানায়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কৌঁসুলি তুরিন আফরোজও সংসদের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ বলেন, "দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের সম্পত্তির অধিকার থাকে না। এটা বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত একটি বিষয়। পৃথিবীর অন্য দেশগুলোতেও তাই করা হয়েছে। আমি মনে করি, দেরিতে হলেও এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। এটা আরো আগেই হওয়া উচিত ছিল। সবচেয়ে ভালো হত যদি ১৯৭৩ সালের আইনে থাকত”।

যুদ্ধাপরাধীদের বিত্তের বিপরীতে স্বাধীন দেশে অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের কথাও বলেন এই আইনজীবী।

“আমাদের ট্রাইব্যুনালে দুইজন মুক্তিযোদ্ধা সাক্ষ‌্য দিয়েছেন, যাদের একজন ভিক্ষা করেন, অন্যজন রিকশা চালান। যারা দেশ গড়েছেন, তারা ভিক্ষা করবেন-রিকশা চালাবেন, সেই দেশে যুদ্ধাপরাধীরা এত সম্পদের মালিক-এটা মানা যায় না।”

তুরিন বলেন, “বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সম্পদ বাজেয়াপ্তের সিদ্ধান্তও সঠিক। কারণ বঙ্গবন্ধু শুধু ব্যক্তি নন, তিনি একটি প্রতিষ্ঠান। তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। তার নেতৃত্বেই স্বাধীনতা এসেছে। তাই জাতির জনকের খুনিদের সম্পদ বাজেয়াপ্তের সিদ্ধান্তও সঠিকই হয়েছে।”

সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক হারুন হাবীব বলেন, “বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ আজ ঐতিহাসিক একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। আমি মনে করি, এই দুটো সিদ্ধান্ত একইসূত্রে গাঁথা। কারণ যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীরা পাকিস্তানি আদর্শে বিশ্বাসী। যুদ্ধাপরাধী যারা আজও বাংলাদেশের মাটিতে আরেকটি পূর্ব পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছে। তাদের সর্বোতভাবে সহায় সম্বলহীন করা উচিৎ। অনেক দেরিতে হলেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে একই ধরনের চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।” “জাতীয় সংসদের এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে, বাংলাদেশ মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শিক পথে অগ্রসর হচ্ছে এবং বাংলাদেশের মাটিতে নতুন পাকিস্তান গড়ার স্বপ্ন যারা দেখছে, তাদের বিরুদ্ধে কার্যক্রম গ্রহণ করেছে”।

একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সহ সভাপতি শহীদজায়া শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী বলেন, “সংসদের এই সিদ্ধান্তে আমরা খুবই খুশি। এখন যত দ্রুত আইন পাস হবে, এটা কার্যকর হবে, ততই মঙ্গল। এটা আরও আগেই হওয়া দরকার ছিল”।

গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেন, “শোনা যাচ্ছে সম্পদ বাজেয়াপ্ত হতে পারে শুনে তারা বিদেশে অর্থপাচার শুরু করেছে। এ কারণে যতদিন আইন কার্যকর না হচ্ছে, ততদিন তাদের সম্পদগুলো যাতে ফ্রিজ করে রাখা হয় সেই ব্যবস্থা করা প্রয়োজন”।

বাজেয়াপ্ত সম্পদ সহায়সম্বলহীন এবং মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিতদের মধ্যে পুনর্বণ্টনের জন্য আইন-বিধি স্পষ্ট করার পক্ষে মত দিয়ে ইমরান বলেন, “যুদ্ধাপরাধীদের হাতে নির্যাতিতরা এখনও অবহেলিত। তাদের সম্পদগুলো লুট করা হয়েছে। তারা অনেক কষ্টে জীবন চালাচ্ছে। আমার আবেদন থাকবে, এই সম্পদের অপব্যবহার না করে পরিকল্পিতভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের কল্যাণে ব্যবহার করা হয়।”

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ বলেন, “বঙ্গবন্ধুকে যারা হত্যা করেছে তারা জাতির স্বপ্নকে হত্যা করেছে। যারা বাংলাদেশ মানতে চায় নি, পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছে...লক্ষ লক্ষ মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেছে, তাদের এদেশে বাঁচার অধিকার যেমন নেই, তেমনি স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি থাকার কোনো যৌক্তিকতা নেই। তাদের কোনো অস্তিত্ব বাংলার মাটিতে থাকতে পারে না। এটা বাংলাদেশের জনগণের দাবি”।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত