অযত্ন অবহেলায় মুন্সীগঞ্জের বধ্যভূমি

প্রকাশ : ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬, ২২:৪৬

জাগরণীয়া ডেস্ক

মুন্সীগঞ্জ জেলায় ৬টি উপজেলার মধ্যে ৩টি উপজেলায় অর্থ্যাৎ গজারিয়ায়, মুন্সীগঞ্জ সদর ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলায় বধ্যভূমির তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবছর ১৪ ডিসেম্বর এখানে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করা হলেও বছরের বাকি সময়টা পড়ে থাকে অবহেলিতভাবেই। 

গজারিয়া উপজেলায় অন্তত ৭টি বধ্যভূমি রয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে - গজারিয়া টিএন্ডটি অফিসের কাছের পাকা ব্রিজের কাছের গোসইরচর বধ্যভূমি, এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় গণকবর। এখানে শতাধিক শহীদদের গণকবর দেয়া হয়। ’৭১ সালের ৯ মে গোসইরচর গ্রামে ১৩৫ জন নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালিকে হত্যা করে হানাদার বাহিনী। অনেক লাশ পার্শ্ববর্তী ফুলদী নদীতে ভেসে যায়। এর দক্ষিণের দিকে নয়ানগর বধ্যভূমি। ’৭১ সালের মে মাসে গজারিয়ার যে ১০টি গ্রামে গণহত্যায় ৩৬০ জন বাঙালিকে হত্যা করা হয়েছিল তার একটি গ্রাম হচ্ছে নয়ানগর। এছাড়াও প্রধানের চর, বালুরচর, নাগেরচর, কলসেরকান্দি ও দড়িকান্দি এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে গণকবর।

অন্য গণকবরগুলের মধ্যে রয়েছে ফলদী নদী বধ্যভূমি (অসংখ্য মানুষকে হত্যার পর গজারিয়ার সোনারী মার্কেটের কাছে এই নদীতে ভসিয়ে দেয়া হয়), কাজীপুরা বধ্যভূমি (২ জনের গণকবর), করিংখা বধ্যভূমি (৫/৬ জনের গণকবর এখানে), ভবেরচর কলেজ রোড বধ্যভূমি (১২/১৩ জনের রয়েছে গণকবর এখানে)। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বর্তমান মেঘনা-গোমতী সেতুর পাশে বাউশিয়া ফেরিঘাট বধ্যভূমি (পুরনো সিএন্ডবি ফেরিঘাট), এই বধ্যভূমিতেই চির নিদ্রায় শায়িত আছেন একেএম নজরুল ইসলাম কিরণ।

মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার সাতানিখিল খাল বধ্যভূমি (কেওয়ার খাল বধ্যভূমি) এখানে ১৪ জন বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে ফেলে রাখা হয়। লাশগুলো সৎকার করারও সাহস পায়নি কেউ। টঙ্গীবাড়ি উপজেলার আব্দুল্লাপুর পালবাড়ি বধ্যভূমি। এখানে অন্তত ১৭ জনকে হত্যা করে পালবাড়ি পুকুর পাড়ে ফেলে রাখা হয়।

১৯৭১ সালের ৯ মে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী শহরে প্রবেশ করে হরগঙ্গা কলেজে ক্যাম্প স্থাপন করে। মুক্তিযোদ্ধা বা স্বাধীনতাকামী মানুষদের ধরে এনে এখানে নির্যাতন চালাতো। নির্যাতন শেষে তাদের গুলি করে হত্যা করার পর কলেজ ক্যাম্পাসের দক্ষিণ পূর্ব একটি গর্তের মধ্যে লাশগুলো ফেলা হতো। ২০০৬ সালে সরকারি হরগঙ্গা কলেজের দেয়া ২০ শতাংশ জায়গার উপর ২৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় জেলার কেন্দ্রীয় বধ্যভূমি যেখানে ৩৬ জনের লাশ পাওয়া যায়।

প্রত্যক্ষদর্শী সরকারি হরগঙ্গা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সুখেন চন্দ্র ব্যানার্জী বলেন, ‘একাত্তরে পাকিস্তানি সৈন্যরা যখন ক্যাম্প স্থাপন করতে এই কলেজে আসে তখন আমি এই কলেজের ছাত্রাবাসে থাকতাম। তখন এসব দৃশ্য দেখে চোখের জল ফেলা ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার ছিল না। নিরুপায় ছিলাম।’

এই বধ্যভূমিগুলো এখনও রয়েছে অযত্ন অবহেলায়। শুধুমাত্র সরকারি হরগঙ্গা কলেজ বধ্যভূমিটিতে সরকারিভাবে স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে, তাও অসম্পূর্ণ। স্থানীয়ভাবে আব্দুল্লাপুর পালবাড়ি বধ্যভূমি ও গজারিয়া টিএন্ডটি অফিসের কাছের বধ্যভূমিতে স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে কোন রকম। বাকি বধ্যভূমিগুলো রয়েছে অরক্ষিত অবস্থায়।

এছাড়া শ্রীনগর, লৌহজং ও সিরাজদিখান উপজেলায় কোন বধ্যভূমির সন্ধান এখনও পাওয়া যায়নি।

এর বাইরেও অজানা রয়েগেছে আরও অনেক বধ্যভূমি জানালেন মুক্তিযোদ্ধা মো. ইকবাল হোসেন ও সাবেক পৌর মেয়র এ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান। তাঁরা জানান, স্থানীয়ভাবে তথ্যাদি সংগ্রহ করে বধ্যভূমিগুলো চিহ্নিত করে সংরক্ষণ করা জরুরি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত