তাজরীন ট্র্যাজেডির ৬ বছর আজ

প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০১৮, ১৫:০১

জাগরণীয়া ডেস্ক

২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর আশুলিয়ার তাজরীন গার্মেন্টসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ১১৩ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। আহত হন আরও তিন শতাধিক শ্রমিক। ভয়াবহ ঐ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় স্তব্দ হয়ে যায় পুরো দেশ। তাই দেশের তৈরি পোশাক খাতের জন্য এই দিনটি এক শোকাবহ দিন। এ ঘটনার পর নতুন করে গার্মেন্টস কারখানা ও তার শ্রমিকদের নিরাপত্তা বিষয়ক ইস্যুগুলো সামনে আসে।

২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর ইয়ারপুর ইউনিয়নের আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তোবা গ্রুপের মালিকানাধীন তাজরীন ফ্যাশনস পোশাক কারখানাটি সন্ধ্যার দিকে নিচতলার তুলার গুদাম থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহুর্তের মধ্যে আগুন পুরো আটতলা কারখানায় ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু আগুন লাগার বিষয়টিকে গুজব হিসেবে উড়িয়ে বের হওয়ার গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয় নিরাপত্তা কর্মীরা। আর এতেই হতাহতের সংখ্যা বেড়ে যায়। অনেকেই ছাদ থেকে লাফিয়ে বা পাইপ বেয়ে নামার সময় মারা যান। তবে বেশিরভাগই কারখানার ভেতরে দগ্ধ হয়ে মারা যান।

এ ঘটনার পরের দিন আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) খায়রুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। সেই মামলায় নাশকতার পাশাপাশি অবহেলাজনিত মৃত্যুর দণ্ডবিধির ৩০৪ (ক) ধারা যুক্ত করা হয়।

২০১৩ সালের ২২ ডিসেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক এ কে এম মহসিনুজ্জামান খান ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিজিএম) আদালতে তাজরীন ফ্যাশনস-এর এমডি দেলোয়ারসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। মামলায় সাক্ষী রাখা হয় ১০৪ জনকে। 

মামলার আসামিরা হলেন- প্রতিষ্ঠানের মালিক দেলোয়ার হোসেন, চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার, লোডার শামীম, স্টোর ইনচার্জ (সুতা) আল আমিন, সিকিউরিটি ইনচার্জ আনিসুর রহমান, সিকিউরিটি সুপার ভাইজার আল আমিন, স্টোর ইনচার্জ হামিদুল ইসলাম লাভলু, অ্যাডমিন অফিসার দুলাল উদ্দিন, প্রকৌশলী এম মাহবুবুল মোর্শেদ, সিকিউরিটি গার্ড রানা ওরফে আনোয়ারুল, ফ্যাক্টরি ম্যানেজার আব্দুর রাজ্জাক, প্রোডাকশন ম্যানেজার মোবারক হোসেন মঞ্জুর ও শহীদুজ্জামান দুলাল।

আসামিদের মধ্যে মো. শহিদুজ্জামান দুলাল, মোবারক হোসেন মঞ্জু, মো. রানা ওরফে আনোয়ারুল ও মো. শামিম মিয়া পলাতক রয়েছেন।

মামলাটির বিচার শুরু হওয়ার তিন বছর পার হয়ে গেলেও দুই বছরে ১০৪ জন সাক্ষীর মধ্যে সাক্ষ্য দিয়েছেন মাত্র ৭ জন। ২০১৭ সালে  কোনো সাক্ষীই আদালতে যাননি।

রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত কৌঁসুলি কাজী শাহানারা ইয়াসমিন জাগো নিউজকে বলেন, তাজরীন ফ্যাশনস-এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলার অভিযোগপত্রে অধিকাংশ সাক্ষীর বর্তমান ঠিকানা দেয়া হয়েছে। তবে বর্তমান ঠিকানায় অধিকাংশ সাক্ষীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। 

এ প্রসঙ্গে আসামি পক্ষের আইনজীবী এটি এম গোলাম গাউস বলেন, অধিকাংশ তারিখে মামলার সাক্ষীকে আদালতে হাজির করতে না পারায় মামলাটি গতি পাচ্ছে না। আমরা চাই মামলাটি যেন দ্রুত শেষ হয়।

এদিকে, তাজরীন ফ্যাশনস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও মালিকের শাস্তির দাবিতে গত ২৩ নভেম্বর (শুক্রবার) মানববন্ধন করে গ্রীন বাংলা গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন। এসময় তারা তাজরীন ট্র্যাজেডির সাথে জড়িতদের দ্রুত শাস্তি আওতায় আনার দাবী জানিয়েছেন। 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত