ঘূর্ণিঝড় মোরা: নিহত ৭, নিখোঁজ ৭১

প্রকাশ : ৩১ মে ২০১৭, ০১:৪৯

জাগরণীয়া ডেস্ক

ঘূর্ণিঝড় মোরায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে অন্তত সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে উপকূলীয় এলাকায় গাছচাপা পড়ে চারজন, আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে ও কেন্দ্রে অসুস্থ হয়ে দুজন এবং সাগরে ডুবে একজন মারা গেছেন।

এছাড়া বঙ্গোপসাগরে ছয়টি মাছ ধরার ট্রলারসহ ৭১ জন মাঝি-মাল্লা এখনো নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে।

প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ অনুযায়ী, কক্সবাজারের চকরিয়ায় ঝড়ের সময় গাছ চাপায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। তাছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রে ‘হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে’ মারা গেছেন এক বৃদ্ধা।

চকরিয়া থানার ওসি বখতিয়ার আহমদ জানান, মঙ্গলবার ভোরে ঝড়ের সময় গাছচাপা পড়ে রহমত উল্লাহ ও সায়রা খাতুন নামে দুইজনের মৃত্যু হয়। রহমত উল্লাহ ডুলাহাজারা পূর্বজুমখালী এলাকার আব্দুল জব্বারের ছেলে। আর সায়রা খাতুন বড় ভেওলা ইউনিয়নের সিকদারপাড়া এলাকার নুরুল আলমের স্ত্রী। এছাড়া কক্সবাজার পৌরসভার একটি আশ্রয়কেন্দ্রে মরিয়ম বেগম নামে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়। তিনি নুনিয়ারছড়া এলাকার বদিউল আলমের স্ত্রী।

পরিবারের বরাত দিয়ে কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, “মরিয়ম আগে থেকেই শারীরিকভাবে দুর্বল ছিলেন। রাতে বাতাস শুরু হওয়া পর তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে"।

এদিকে ভোলার মনপুরা উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার সময় প্রচণ্ড বৃষ্টিতে মায়ের কোলে থাকা এক বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

কলাতলীর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির স্বেচ্ছাসেবক ইউনিটের টিম লিডার মো. নাজিমউদ্দিন জানান, কলাতলীচরের পুরাতন আবাসন বাজার থেকে মনির বাজার সংলগ্ন মনপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার পথে মায়ের কোলে রাশেদ মনি নামে এক বছর বয়সী ওই শিশুর মৃত্যু হয়। রাশেদ কলাতলীচর আবাসন বাজার এলাকার ছালাউদ্দিনের ছেলে।

নাজিমউদ্দিন বলেন, “ছালাউদ্দিনের স্ত্রী জরিফা খাতুন ছেলেকে নিয়ে রাত ১টার দিকে আশ্রয়কেন্দ্রের পথে রওনা হন। পথে প্রচণ্ড বৃষ্টি ও ঠাণ্ডা বাতাসে শিশুটি মারা যায়"।

মনপুরার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমানতউল্যাহ আলমগীর বলেন, “কলাতলীচরে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার সময় মায়ের কোলে এক শিশুর মৃত্যুর খবর পেয়েছি। তবে খোঁজ নিয়ে জেনেছি শিশুটি আগে থেকেই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছিল।”

রাঙামাটি শহরে ঘূর্ণিঝড় মোরায় গাছচাপা পড়ে এক নারী ও এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এরা হলেন- শহরের আসামবস্তি এলাকায় হাজেরা খাতুন (৪৫) ও মসলিনপাড়ার নাসিমা আক্তার (১৩)।

৩০ মে (মঙ্গলবার) ঝড়ের সময় গাছচাপা পড়ে তাদের মৃত্যু হয় বলে রাঙামাটি কোতোয়ালি থানার ওসি মো. রশিদ জানান।

সর্বশেষ ঝড়ের মধ্যে গভীর সাগরে একটি নৌকা থেকে পড়ে একজন জেলের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সুজন চৌধুরী।

নৌকা মালিক সমিতির বরাত দিয়ে তিনি বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে ঝড়ো বাতাসের মধ্যে সাগরে থাকা কুতুবদিয়া অঞ্চলের একটি নৌকা থেকে একজন জেলে পড়ে যান। সহকর্মীরা চেষ্টা করেও তাকে বাঁচাতে পারেনি। ওই জেলের নাম-পরিচয় এখনো জানা যায়নি।

এদিকে মঙ্গলবার রাত ১১টা পর্যন্ত কুতুবদিয়া থেকে ৬৩ জন মাঝি-মাল্লা নিয়ে গভীর সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া চারটি নৌকার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি।

এছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মো. চাহেল তস্তুরী জানিয়েছেন, চার দিন আগে চট্টগ্রামের বাঁশখালী থেকে আটজন মাঝি-মাল্লা নিয়ে গভীর সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া দুটি ট্রলারের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।

এদিকে মঙ্গলবার ভোরে উপকূলে আঘাত হানার পর স্থলভাগে এসে দুর্বল হতে শুরু করেছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোরা। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ক্ষয়ক্ষতির চিত্রও স্পষ্ট হতে শুরু করেছে।

উপকূলীয় জেলাগুলোতে ঝড়ে প্রায় ২০ হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, মঙ্গলবার সারাদিনই চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ উপকূলীয় জেলাগুলোতে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া থাকতে পারে। 

রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মো. মানজারুল মান্নান জানান, জেলার বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে এবং গাছপালা ভেঙে পড়েছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে কাজ চলছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত