বাঁধা ডিঙ্গিয়ে নারীর প্রাণিপ্রেম!
প্রকাশ : ০৯ মার্চ ২০১৮, ০০:৫০
কিছুদিন আগে অনলাইন পত্রিকায় পড়েছিলাম আলেপা খাতুনের গল্প। যিনি পাবনার চাটমোহর পৌরসভার ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী আসনের পরপর দুইবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর। কর্মব্যস্ততায় ভোর শুরু হওয়া এই নারীর ব্যস্ততা একটু অন্যরকম। কারণ তিনি ৪১টি বিড়ালের ‘মা’। অন্য জনপ্রতিনিধিরা যখন শুধু মানুষের ভালো করা নিয়ে ব্যস্ত, সেখানে আলেপার প্রাণিপ্রেম হতবাক হওয়ার মতোই। আর আলেপা তো পৌর এলাকার একজন নারীও বটে।
আলেপা বিড়াল লালন-পালনে প্রতিদিন ২৫০ টাকার নীচে খরচ করে থাকেন। তবে তাঁর আক্ষেপ বিড়ালগুলোর থাকার জন্য একটা ঘর হলে ভালো হয়, কিন্তু টাকা পাবেন কোথায়? অনেকে তার বিড়াল খাওয়ানোকে বাঁকা চোখে দেখেন। তবুও তিনি সব কিছু উপেক্ষা করে তার সন্তানতুল্য বিড়ালদের অন্ন জুগিয়ে চলেছেন। যদিও আলেপার এ আক্ষেপ আসলে প্রাণিদের ভালোবাসা ও কল্যাণে কাজ করা বেশিরভাগ মানুষেরই মতোই। অন্যান্য দেশে প্রাণিদের জন্য রাষ্ট্রের পরিকল্পিত ব্যবস্থা থাকলেও বাংলাদেশে তা অপ্রতুল। হাতে গোনা কিছু কাজ হলেও তা একান্তই শহরকেন্দ্রিক। শহরের স্ট্রে কুকুর-বিড়াল ব্যবস্থাপনা থাকলেও গ্রাম-গঞ্জে তা নেই বললেই চলে। তবু এ সকল কিছু প্রাণি মানুষের ভালোবাসায় নিজেদের টিকিয়ে রাখতে পারছে।
যাইহোক, পৌর কাউন্সিলর ও সাধারণ বাংলার একজন নারী আলেপার গল্প এ যুগে অনেকটা হতবাক করার মতো ঘটনা বটে। কিন্তু এক সময় গ্রামের বাড়িগুলোতে কুকুর-বিড়ালসহ অন্যান্য প্রাণিদের দেখভাল করতেন বাড়ির নারীরাই। কিন্তু যুগ বদলের ধারাবাহিকতায় সময় পরিবর্তনের সাথে পাল্টেছে সেই চিত্র। যদিও এখনো সেখানে নারীরা অবলা প্রাণিদের প্রতি নিজেদের ভালোবাসা ধরে রেখেছেন..তবে শহরের পরিধি বাড়ার সাথে সাথে কমছে তাও। শহুরে অনেক শিক্ষিত নারীদের মধ্যে প্রাণিভীতি প্রবল। অনেক নারীই মনে করেন, কুকুর কাকড় দিলে পেটে বাচ্চা হয়ে মানুষ মারা যায়। বাচ্চাদের কুকুর-বিড়ালের ধারেকাছে ঘেষতে দেন না।
তবে এখন শহরের রাস্তায় চলাচলের সময় অনেক নারীকেই দেখা যায় কুকুর-বিড়ালদের খাবার ও ভালোবাসা দিতে। শুধু তাই নয় শহরের স্ট্রে কুকুরদেরও রেসকিউ ও চিকিৎসা দেয়াসহ অবলা প্রাণিদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের বিরুদ্ধে পথে নামছেন নারীরা। এমন উদাহরণ দিতে গেলে হয়তো অনেকেরই নাম বলতে হবে। যাইহোক, ফেসবুকের বিভিন্ন প্রাণি বিষয়ক কাজ সংগঠনগুলোর গ্রুপে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন নারীরা। যাদের অধিকাংশ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার। এখানে রয়েছেন ছাত্রীরাও। যারা পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নানা বাঁধা-নিষেধ উপেক্ষা করেও প্রাণি কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এতে বলা যায়, নারীরা এখন অন্য যেকোন ক্ষেত্রের মতো পরিবেশ ও প্রাণিকল্যাণেও পিছিয়ে নেই, সময়ের সাথে তালমিলিয়ে এখানেও নারীরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আমি মনে করি, এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামিতে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও বাংলাদেশের প্রকৃতি ও প্রাণি সংরক্ষণে ঐক্যবদ্ধ হতে পারবেন।
লেখক: পরিবেশ ও বন্যপ্রাণি বিষয়ক সাংবাদিক