‘নারীর মেধার চেয়ে বেশি প্রাধান্য পায় শরীর’
প্রকাশ : ০৭ জুন ২০১৬, ০২:৫৩
দেশীয় র্যাম্প মডেলিং ধীরে ধীরে তৈরি করে নিচ্ছে আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা। সেইসাথে একঝাঁক নতুন মুখ যুক্ত হয়েছে মডেলিং জগতে। সেইসব স্বপ্নবাজদের মাঝে কেউ কেউ নিজের মেধা আর সৌন্দর্যের সমন্বয়ে সবার নজর কাড়ছেন সহজেই। ওয়াহিদা আদর, ফ্যাশন ও মডেলিং জগতের নবাগত আলোকিত মুখ। আজকে জাগরণীয়ার মুখোমুখি ওয়াহিদা আদর।
জাগরণীয়া: কেমন আছেন?
ওয়াহিদা আদর: জ্বী ভালো
জাগরণীয়া: বর্তমান ব্যস্ততা কি নিয়ে? কি কি কাজ করছেন?
ওয়াহিদা আদর: আমি মূলত বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে কাজ করি। আর ঈদের মৌসুম বলে এই ক্ষেত্রে কাজের ব্যস্ততা এখন বেশি। পাশাপাশি র্যাম্পের বেশকিছু কাজ করছি ঈদ ফ্যাশন নিয়ে।
জাগরণীয়া: টেলিভিশনে অভিনয় করা হচ্ছে না কেন?
ওয়াহিদা আদর: আসলে আপাতত অভিনয় নিয়ে ভাবছি না। কারণ আমি প্রথমত আমার কাজের ক্ষেত্র হিসেবে ফ্যাশনটাকেই প্রাধান্য দিচ্ছি। তবে বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করা হচ্ছে। আর কাজের কোয়ান্টিটি থেকে আমি কোয়ালিটিকে অগ্রাধিকার দেই তাই আমি খুব বেছে বেছে কাজ করি।
জাগরণীয়া: কোন কোন টিভিসি তে কাজ করেছেন?
ওয়াহিদা আদর: বাংলালিংকের একটা কাজ করেছি সেটা অনএয়ার হচ্ছে। এছাড়া গ্রামীণফোন, প্রাণের বিজ্ঞাপন প্রচার শুরু হবে শীঘ্রই।
জাগরণীয়া: মিডিয়ার অনেকগুলো মাধ্যম থাকতে ফ্যাশনটাকেই কেনো বেছে নিলেন?
ওয়াহিদা আদর: আসলে ফ্যাশনের প্রতি আমার ভালবাসাটা আগেরই আর আমার পড়াশোনার বিষয়টাও ফ্যাশন নিয়ে। এই কারণেই ফ্যাশনে আসা। কারণ আমি সেই সেক্টরেই কাজ করবো যেই সেক্টর নিয়ে আমার পড়াশোনা আছে বা যেই কাজটাকে আমি ভালোবাসি।
জাগরণীয়া: পড়াশোনার বিষয়ে জানতে চাই
ওয়াহিদা আদর: আমি ঢাকা সিটি কলেজ থেকে ইন্টারমেডিয়েট শেষ করে এখন শান্তা মরিয়ম ইউনিভার্সিটিতে বিএ পড়ছি ক্রিয়েটিভ টেকনোলোজি ও ফ্যাশন ডিজাইনিং বিষয়ে। কারণ ফ্যাশন বিষয়টা আমাকে আগে থেকেই আগ্রহী করে তুলেছিলো।
জাগরণীয়া: নতুন যারা ফ্যাশন মাধ্যমে কাজ করতে আসছে তাদেরকে কাজের ক্ষেত্রে কি কি প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়?
ওয়াহিদা আদর: আসলে ফ্যাশন জগতে কাজ করতে গেলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রথম বাধাটা আসে নিজের পরিবার থেকেই। এরপর কাজ শুরু করলে শুরু হয় নানান ধরণের বাধা। আমি একজন নারী হিসেবে বলবো ফ্যাশন জগতে কাজ করতে গেলে নারীর শরীরটাই নারীর জন্য সবচেয়ে বেশি প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে, আমাদের দেশে কাজের ক্ষেত্রে এখনো নারীর মেধার চাইতে বেশি প্রাধান্য পায় তার শরীর। এটাকেই অনেকে বিনিময়ের পণ্য বানিয়ে ফেলেছে যেখানে বিনিময় হবার কথা ছিলো মেধা ও সৃষ্টিশীলতা। তবে এটা সত্য যে নারী যদি তার সৎ অবস্থান ধরে রাখতে পারে তবে তার সাফল্য দেরীতে হলেও নিশ্চিত ভাবেই আসবে। এর জন্য নারীদেরকে আত্মবিশ্বাসী হয়ে নেতিবাচক ভাবনা পাল্টাতে হবে।
জাগরণীয়া: মিডিয়ায় নারীবান্ধব কাজের ক্ষেত্র তৈরিতে কোন কোন বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেবেন?
ওয়াহিদা আদর: প্রথমত দরকার নারী পুরুষ উভয়ের মানসিকতার পরিবর্তন। তারপর গ্রহণযোগ্য ও নিরাপদ কাজের পরিবেশ দরকার। এরপর কাজের প্রতিটি মাধ্যমে নারীর সমান অংশগ্রহণ ও শক্তিশালী অবস্থান তৈরি জরুরী। এই কিছু কাজ করতে পারলেই এদেশে আন্তর্জাতিক মানের গুণী শিল্পী তৈরি হবে।
জাগরণীয়া: ফ্যাশন নিয়ে আপনার স্বপ্ন কি?
ওয়াহিদা আদর: একজন ফ্যাশন ডিজাইনার ও একজন মডেল হিসেবে আমার স্বপ্ন আমি বাংলাদেশের ফ্যাশন ট্রেন্ডকে বিশ্বের ফ্যাশন অঙ্গনে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। আর নিজেকে একজন সফল ও সৃষ্টিশীল মডেল ও ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।
জাগরণীয়া: নাটক বা সিনেমায় অভিনয়ের ইচ্ছে নেই?
ওয়াহিদা আদর: সিনেমায় অভিনয়ের জন্য আমি এখনো নিজেকে প্রস্তুত মনে করি না। তবে নাটকের ব্যপারে ভাবছি। নিজের পছন্দমতো চরিত্র পেলে হয়তো নাটকে অভিনয় করবো। কিন্তু আগেই বলেছি যে আমি আসলে নিজেকে মডেল ভাবতেই পছন্দ করি।
জাগরণীয়া: নতুন যারা মডেলিং এ আসবে তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কি?
ওয়াহিদা আদর: আমি বলবো মিডিয়া বা ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে জেনে বুঝে এখানে আসা উচিত। আর কাজের ক্ষেত্রে নিজের শতভাগ ডেডিকেশন থাকা উচিত। নিজের উপর আস্থা রেখে নিজের অবস্থান তৈরি করে নিতে হবে। কাজ করতে এসে হেরে যাওয়া যাবে না। আর নিজের কাজটাকে সম্মান করতে হবে।
জাগরণীয়া: বাংলাদেশের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির বিস্তারে সরকারের সহযোগিতা কি যথেষ্ট রয়েছে?
ওয়াহিদা আদর: বেসরকারি খাতের উপরেই মূলত ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি নির্ভরশীল। সরকারি সহযোগিতার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে যদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় তবে বাংলাদেশের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি আরও অনেকদূর এগিয়ে নেয়া সম্ভব।
জাগরণীয়া: আপনার ফ্যাশন আইডল কারা?
ওয়াহিদা আদর: আমি আমার ফ্যাশন ক্যারিয়ারে দুজন মানুষকে গুরু মানি। একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাংলাদেশি ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেল আর ফরাসী ফ্যাশন আইডল কোকো শ্যানেলকে। আমি এদের ফ্যাশন ভাবনাকে অনুসরণ করি।
জাগরণীয়া: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
ওয়াহিদা আদর: আপনাকেও ধন্যবাদ।