শর্টফিল্ম ফেস টু ফেস: পতিতার প্রতি আমার শ্রদ্ধা
প্রকাশ : ০৫ জানুয়ারি ২০১৮, ২১:০৪
হাতে সময় খুব কম তবুও তারই মধ্যে বলে ফেলতে হবে যা বলার তাই প্রতিটা শব্দ যেন আকুল তীব্রতায় নিজেকে খুলে দেখাচ্ছে আর বারবার ঘড়ি দেখছে- কিসের আশংকা? কি ফুরাবে ? সময়? না জীবন? দুটোই ফুরিয়ে যেতে পারে জানি। কিন্তু 'সত্য'?- সে তো ওই কবির মতো শেষ দৃশ্যে পতিতার কোলে ফুটপাতে শুয়ে অবচেতনে বলে উঠবে-"মা বাঁচাও" - তুমি এই বিপন্ন সত্যকেই বাঁচিয়েছ শাহাদাত রাসএল। মেরেছো ভণ্ডগুলোকে গুছিয়ে!
লক্ষ্মীকে আমি পতিতা বলে ডাকব না- ও পুরো সমাজের ছাল ছাড়িয়েছে- বা সিগারেটের মতো ফুঁকে উড়িয়ে দিয়েছে ঠিকই তো ও ধর্মের কাঁটা বেছে খায় না! অন্ধকারে জাত নির্বিশেষে খদ্দের এর আঁশ ছাড়ায়! ওর মুখে কাঠফাটা সত্যি কথা যে ভাষায় বেড়িয়েছে- তাকে অশ্লীল তারাই বলবে যারা নিজের মুখোমুখি হতে ভয় পায়! ডায়লগ আগুন দিয়ে লেখার জন্য সাবাশ রাসেল।
এক্ কবি তার পাপ স্বীকার করতে চাইছে পতিতার কাছে- এই কনসেপ্ট ভাবা যায় না!
কবির যখন লক্ষ্মীকে রূপার মতো লাগে- তখন যেন পতিতার অপমানিত উপসী নারীত্ব আচমকা প্রেমিকার অভিঘাতে ছিটকে উঠে। প্রহার করে বলতে চায়- এতদিন কোথায় ছিলে হে কাঙ্খিত পুরুষত্ব?
নারীত্বের গর্বে তুমি বাঁচতে দিলে পতিতা কে রাসেল! পতিত বা ভূপাতিত যারা হল তাদের সমবেদনা জানাই! পতিতার ব্যাগেও এক্ বোতল জল থাকে- অসুস্থ মনুষ্যত্বর মুখে ছেঁটাবার জন্য- অনেকের কাছে থাকে না!
থুতু থাকে অবশ্যই!
কবির ভূমিকায় জামশেদ শামীম vibrate করেছে behave করেছে- কুঁতে অভিনয় করেনি। ওর সারল্য, জড়সড় ভাব, আত্মহত্যার মুহূর্ত থেকে ফিরে আত্মসমর্পণে একটু ইতস্তত থেকে ক্রমশঃ প্রকাশিত কবিতার মতো! জামশেদ শামীম তুমি অনেকদূর যাবে যাযাবর অভিনেতা! হয়ত নিজে কবিতা লিখি তাই ওকে আমার male version মনে হয়েছে- কিছু মুহূর্তে
একজন কবি আত্মহত্যা করতে গিয়ে প্রথমে রেলিং চেপে ধরে কেন? শেষ আশা আঁকড়ে ধরবে- না ধীরে এক পা তুলে বাঁচবে না মরবে সেই দোলাচলে ভোগে তার অস্তিত্বের সংকটে- খুব কি আত্মহত্যার ইচ্ছে ছিল তার? না বোধহয়- না হলে পতিতার ডাকে সে সাড়া দিত না! তার পাপ স্বীকারের তাগিদটার তীব্রতা ছিল অনেক বেশী! ভাগ্যিস পতিতা এলো, না হলে নামাবলির "আ মরি বাংলা ভাষা"র ডেডবডি ভেসে উঠতো! পতিতার হাত ধরে শেষে জীবনমুখী হল "ধ্বনিময় বর্ণমালা"! চাদরটা তুমি রূপকের মতো গায়ে জড়িয়ে ছিলে কবি- মরলে বাংলা ভাষায় মরব তাই তো! ওটা তোমার সুইসাইড নোট থেকে মিউজিকাল নোট হয়ে উঠল আমার মতো দর্শকের কাছে!
কঠিন কথা লক্ষ্মীর মতো আমারও মাথার "উফইর দিয়া যায়" প্লেনের মতো- তাই তুমি সহজ ভাষায় কইয়া ফালাও- ভদ্দরলোকের পাপ! এটা লক্ষ্মীর কাছে নতুন বিষয় বটে! বেটা মাইনসের পাপের পাশে সে বড়ো নিষ্পাপ উচ্চারণে- বলতে পারে "আমারে ভগবান মনে কইরা কইয়া ফেলা"। কবি তখনও পাপ খুঁজে পায়। কিন্তু লক্ষ্মী যখন সহজ সুরে জুতায় যে সে
ভগবানের চেয়েও বড়ো- কবি পাপ বমি করে! করবে না! পালাবে কোথায়? সমাজ ধর্ম দেশসেবক পুলিশ সবাই যে এতকাল পতিতাকে ননভেজ ডিশ হিসেবে লুকিয়ে খেয়ে ধরা পড়ে গেল। লক্ষ্মী যে ওদের মুখ পা দিয়ে চেপে খুলিয়ে ভন্ডামীর আঁশটে গন্ধ বার করে দিল! ভগবান আল্লা ঈশ্বরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ঘটিয়ে দিল সিগারেট জ্বেলে!
কবি এ তুমি কাকে খুঁজে পেলে!!
লক্ষ্মী তো দর্পন!
তাই নিজের প্রতিবিম্ব যারা দেখতে ভয় পায়- তারা দেখবেন না এ ছবি। যান তো দূর হন- রবিবারে মাংস ভাত খেয়ে "এন্টারটেনমেন্ট" দেখুন গে। এ ছবি দেখলে আপনাদের বমি হয়ে যাবে! বরং ওরা মুখোমুখি বসে থাক- কখন যে ভোর হয়ে গেল ওরাই টের পাক! পাঁকে পড়ে কবি অস্পষ্ট ভাষায় আগামী কবিতা দিকে এগিয়ে যাক-
ফুরিয়ে যাক অতীতের সব লেনদেন থাকুক শুধু ভোরের আলো মুখোমুখি বসবার সমাজের ড্রেন! - 'জীবনানন্দ' তো এভাবেও আসতে পারে!
গাড়ির শব্দের গতি চাপা দিয়ে যাক লক্ষ্মীর পায়ের তলায় পড়ে থাকা মিথ্যার খোলস গুলোকে- রেলগাড়ির আওয়াজও পেলাম- সব বিতর্ক কেটে উড়িয়ে নতুন দিগন্তে যাত্রা শুরু হল যেন!
রাসেল তোমাকে প্রচলিত ফর্মাটে ফেলা যায় না- ফেলা যায় না আমাকেও- তাই যারা বলবে রিভিউ করতে গিয়ে ভুল ত্রুটি আমার চোখে পড়ল না কেন? তাদের বলি সিনেমা কি একটি মানুষের মতো ইচ্ছেমতো বাঁচতে পারে না? একটা মানুষকে সম্পূর্ণ গ্রহন করতে হলে তার ভাল ও মন্দ দুটোকেই মেনে নিতে হয়- তাহলে সিনেমা নয় কেন? কে আমরা যা বলতে চাই- তা সব ঠিক্ ঠাক বলে উঠতে পেরেছি জীবনে? তাই আমি টেকনিকাল মিস্ত্রির মতো এক্ Revolutionary Film কে ইস্ত্রি করতে পারলাম না- sorry
হুমাইরা হিমু, কিভাবে রপ্ত করলে এই don't care attitude? জাত অভিনেত্রী!
রাসেল শর্ট ফিল্মে দর্শক পাবে- কিন্তু ইনভেস্টর বা producer পাবে কম -এটা মেনে নাও- হিন্দী ফিল্মে টাকা ঢালা বেনিয়াদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে এগিয়ে যাও। যাবার আগে আমার দুলাইন আশা সঙ্গে নিয়ে যাও,
"হিমপড়া উঠান পেরিয়ে দুয়ারে দাঁড়িয়ে আছে ভোর
কিছু তারা নেভেনি এখনও - আয় ভোর মুখ দেখি তোর "
ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক সামাজিক পেজে দু মিনিট নীরবতা পালন করুক- যারা সত্যের মুখোমুখি হতে পারল না সেইসব অন্ধকারের আত্মার শান্তি কামনায়।