এসো পা বাড়াই (১৮ তম পর্ব)
প্রকাশ : ০৫ এপ্রিল ২০১৭, ১৭:৩০
"মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে এমন সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে পুরুষের সাথে সাথে নারীদের অংশগ্রহণ সীমিত, কিন্তু কেন? ফেসবুক এর চিফ অপারেটিং অফিসার শেরিল স্যান্ডবার্গ (Sheryl Sandberg) এর বই 'Lean In'- এ তিনি দেখিয়েছেন এ সমস্যার মূলে কি, কিভাবে নারীরা নেতৃত্ব অর্জন করতে পারে, তার পূর্ণ ক্ষমতার ব্যবহার করতে পারে। তার নিজের জীবন এবং পাশ্চাত্যের প্রেক্ষাপটে রচিত হলেও সারা পৃথিবীর নানা পরিসংখ্যান আর গবেষণার রেফারেন্স দিয়ে তিনি এই বইকে সমৃদ্ধ করেছেন সমস্ত মানব জাতির জন্য। আমার আন্তরিক ইচ্ছা বাংলাদেশের মানুষও এই বই পড়ে উপকৃত হোক। সেই ইচ্ছা থেকেই অনুবাদের এই প্রচেষ্টা। ইতোমধ্যেই ২০টিরও অধিক ভাষায় এই বইয়ের অনুবাদ করা হয়েছে। এই বইয়ের নামে একটি আন্তর্জাতিক চক্রও গড়ে উঠেছে (http://leanin.org/) যেখানে সারা পৃথিবী থেকে যে কেউ চাইলে যুক্ত হতে পারে। মূল বইয়ে রেফারেন্স গুলোর বিস্তারিত দেয়া আছে।"
LEAN IN এসো পা বাড়াই
WOMEN, WORK AND THE WILL TO LEAD নারী, কাজ এবং নেতৃত্বের ইচ্ছা
WRITER: SHERYL SANDBERG অনুবাদ: আফরিন জাহান হাসি
আজকে এই মঞ্চ থেকে বেরিয়ে যাবার পর থেকেই তোমাদের প্রাপ্তবয়স্ক জীবন শুরু হবে। লক্ষ্য উঁচুতে রেখে শুরু কর। চেষ্টা করো- এবং আরো কঠোরভাবে চেষ্টা করো।
এখানকার সবার মতই, আমারও অনেক বড় আশা এই স্নাতক সদস্যদের জন্য। আমি আশা করি তোমরা তোমাদের জীবনের সত্যিকারের অর্থ, পরিতৃপ্তি এবং কামনা খুঁজে পাবে। আমার আশা, তোমরা কঠিন সময় সঠিকভাবে পাড়ি দিতে পারবে এবং অনেক বেশি শক্তি আর স্থির সংকল্প নিয়ে বের হয়ে আসবে। বিস্ময়বিমূঢ় দু'চোখে যেই সামঞ্জস্য তোমরা খুঁজে পেতে চাও, তাই যেন পাও। এবং আমি আশা করি যে তোমরা- হ্যাঁ, তোমাদেরই উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকবে পেশাগত ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার এবং পৃথিবী পরিচালনা করার। কারণ পৃথিবী তোমাদের চায় এর পরিবর্তনের জন্য। সারা বিশ্বব্যাপী নারীরা তোমাদের উপর ভরসা করছে।
তাই অনুগ্রহ করে নিজেকে জিজ্ঞেস কর: আমি যদি ভয় না পেতাম তবে কি করতাম? এবং তারপর যাও তা কর।
যখন স্নাতকদের সনদ নিতে মঞ্চে ডাকা হয়েছিল, আমি প্রত্যেকের সাথে হাত মিলিয়েছিলাম। অনেকেই থেমে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল। এমনকি একজন তরুণী আমাকে বলেছিল, আমি হচ্ছি , 'নিকৃষ্টতম ডাইনী' ('the baddest bitch') (যা পরে একজনের সাথে অনুসন্ধানের পর, আসলে একটি প্রশংসাবাক্য হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে)।
আমি জানি, আমার বক্তৃতাটি ছিল তাদেরকে অনুপ্রাণিত করার জন্য, কিন্তু আসলে তারা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছিল। পরের মাসে আমার মধ্যে চিন্তা শুরু হলো যে, আমার আরো বেশি বেশি এই সমস্যা নিয়ে, আরো বেশি জনসম্মুখে কথা বলা উচিত। আরো বেশি নারীদেরকে আমার প্ররোচনা দেয়া উচিত, নিজেদের উপর বিশ্বাস করতে এবং নেতৃত্বে উচ্চাভিলাষী হতে। আমার উচিত আরো বেশি পুরুষদের প্ররোচনা দেয়া যেন তারা এই সমস্যা সমাধানের অংশ হয়ে ওঠে, নারীদেরকে কর্মক্ষেত্রে এবং বাড়িতে সহযোগিতা করার মাধ্যমে। আর আমার উচিত নয়, শুধু মাত্র বার্নার্ড এর মত বন্ধুত্বপূর্ণ সমাবেশেই কথা বলা। বরং আমার উচিত আরো বড় পরিসরে, পারলে কম সহানুভূতিশীল শ্রোতাদের মাঝে কথা বলা। আমার নিজের উপদেশ নিজেরই নেয়া উচিত এবং উচ্চাভিলাষী হওয়া উচিত।
অন্যদেরকে পা বাড়াতে উৎসাহিত করার জন্যই শুধু এই বই লেখা নয়। এটাই আমার পা বাড়ানো। আমি ভয় না পেলে কি করতে পারি তারই ফল হচ্ছে এই বই লেখা।
(চলবে...)