এসো পা বাড়াই (১৫ তম পর্ব)
প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০১৭, ০০:৪৫
"মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে এমন সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে পুরুষের সাথে সাথে নারীদের অংশগ্রহণ সীমিত, কিন্তু কেন? ফেসবুক এর চিফ অপারেটিং অফিসার শেরিল স্যান্ডবার্গ (Sheryl Sandberg) এর বই 'Lean In'- এ তিনি দেখিয়েছেন এ সমস্যার মূলে কি, কিভাবে নারীরা নেতৃত্ব অর্জন করতে পারে, তার পূর্ণ ক্ষমতার ব্যবহার করতে পারে। তার নিজের জীবন এবং পাশ্চাত্যের প্রেক্ষাপটে রচিত হলেও সারা পৃথিবীর নানা পরিসংখ্যান আর গবেষণার রেফারেন্স দিয়ে তিনি এই বইকে সমৃদ্ধ করেছেন সমস্ত মানব জাতির জন্য। আমার আন্তরিক ইচ্ছা বাংলাদেশের মানুষও এই বই পড়ে উপকৃত হোক। সেই ইচ্ছা থেকেই অনুবাদের এই প্রচেষ্টা। ইতোমধ্যেই ২০টিরও অধিক ভাষায় এই বইয়ের অনুবাদ করা হয়েছে। এই বইয়ের নামে একটি আন্তর্জাতিক চক্রও গড়ে উঠেছে (http://leanin.org/) যেখানে সারা পৃথিবী থেকে যে কেউ চাইলে যুক্ত হতে পারে। মূল বইয়ে রেফারেন্স গুলোর বিস্তারিত দেয়া আছে।"
LEAN IN এসো পা বাড়াই
WOMEN, WORK AND THE WILL TO LEAD নারী, কাজ এবং নেতৃত্বের ইচ্ছা
WRITER: SHERYL SANDBERG অনুবাদ: আফরিন জাহান হাসি
লিঙ্গের বাঁধাধরা যে বিষয়গুলো শৈশবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়, তা আমাদের সারা জীবন ধরে আরও মজবুত হয় এবং একসময় ভবিষ্যতের স্ব-পরিপূরক হয়ে উঠে। অধিকাংশ নেতৃত্বের পদগুলো পুরুষদের দ্বারা দখল হয়ে থাকে, তাই নারীরা তা অর্জনের আশা করেন না, এবং এটাই একটা কারণ হয়ে ওঠে না পাওয়ার। পারিশ্রমিকের ক্ষেত্রেও এটাই সত্যি। পুরুষ সাধারণত নারীদের চেয়ে বেশী আয় করে, তাই মানুষ আশা করে নারীরা কম আয় করবে এবং তারা তাই করে।
সমস্যাটি যৌগিকভাবে একটি সামাজিক-মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার যাকে বলা হয় 'বাঁধাধরা হুমকি (stereotype threat)'। সমাজবিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণ এই যে যখন একটি দলের সদস্যদের নেতিবাচক বাঁধাধরা (negative stereotype) গুলো অবহিত করা হয়, তখন তাদের সেই বাঁধাধরা নিয়ম অনুযায়ী কাজ করার সম্ভাবনা বেশি। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, বাঁধাধরা নিয়ম অনুযায়ী ছেলেরা অংক এবং বিজ্ঞানে মেয়েদের চেয়ে ভালো। যখন মেয়েদের এই বিষয়টা মনে করিয়ে দেয়া হয় অংক অথবা বিজ্ঞান পরীক্ষার আগে, তখন তারা আরও খারাপ করে। এমনকি খুবই সাধারণভাবে পরীক্ষার খাতার উপর যদি লিঙ্গ অনুযায়ী এম (Male) অথবা এফ (Female) টিক চিহ্ন দিতে বলা হয় তবুও মেয়েদের পরীক্ষা তুলনামূলক ভাবে খারাপ হয়। বাঁধাধরা হুমকিগুলো মেয়ে এবং নারীদেরকে নিরুৎসাহিত করে প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে প্রবেশ করতে, এবং এটাই একটা মূল কারণ যে খুবই স্বল্প সংখ্যক নারী কম্পিউটার বিজ্ঞান অধ্যয়ন করে।
যেমন ফেসবুকের একজন গ্রীষ্মকালীন শিক্ষানবিস একবার আমাকে বলেছিলেন, “আমার বিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স বিভাগে মেয়েদের চেয়ে ডেভ এর সংখ্যা বেশী।”
কর্মজীবি নারীদের নিয়ে যে গৎবাঁধা ধারণা প্রচলিত তা কদাচিৎ আকর্ষণীয়। জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে দীর্ঘ সময় ধরে চিত্রিত হয়েছে, সফল কর্মজীবি নারীরা তাদের কর্মক্ষেত্র নিয়ে এত বেশী ভারাক্রান্ত যে তাদের কোন ব্যক্তিগত জীবন নেই [মনে কর, ওয়ার্কিং গার্ল (Working Girl) এর সিগর্নী উইভার (Sigourney Weaver) এবং দ্যা প্রপোজাল (The Proposal) এর স্যান্ড্রা বুলক (Sandra Bullock) কে।] একজন নারী চরিত্রকে যদি তার সময়কে, কাজ ও পরিবারের মধ্যে ভাগ করতে হয় তবে প্রায় সবসময়ই সে বিধ্বস্ত ও অপরাধবোধে জর্জরিত থাকে [সারাহ জেসিকা পার্কার (Sarah Jessica Parker) এর কমেডি চলচ্চিত্র, আই ডোন্ট নো হাউ সি ডাজ ইট (I Don't Know How She Does It) এর কথা চিন্তা কর]। এবং এইসব চরিত্রাঙ্কন গল্প-উপন্যাসকে ছাড়িয়ে গেছে।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মিলেনিয়াল (সাধারণত ১৯৮০ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে জন্মগ্রহনকারীদের মিলেনিয়াল হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়) নারী এবং পুরুষ যারা এমন কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করেন যার উচ্চপদস্থ ভূমিকায় রয়েছেন নারী, তাদের মধ্যে মাত্র শতকরা ২০ জন ঐ নারীর কর্মজীবন অনুসরণ করতে চান। এই বাঁধাধরা চরিত্রাঙ্কন আবেদনপূর্ণ নয় বরং বিশেষভাবে দুর্ভাগ্যজনক, যেহেতু অধিকাংশ নারীর কর্মক্ষেত্রে লেগে থাকা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। প্রায় ৪১ শতাংশ মা প্রাথমিক উপার্জনকারী এবং পারিবারিক আয়ের বেশিরভাগ অংশই তারা আয় করে। আরও ২৩ শতাংশ মা সহ-উপার্জনকারী, পারিবারিক আয়ের অন্তত এক চতুর্থাংশে তারা অবদান রাখে। নিজের পরিবার নিজেই চালানো নারীদের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে ; ১৯৭৩ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে একক মা দ্বারা পরিচালিত পরিবারের অনুপাত বৃদ্ধি পেয়ে প্রতি দশ জনের মধ্যে একজন থেকে পাঁচ জনের মধ্যে একজন- এ পরিণত হয়েছে। এই সংখ্যা নাটকীয়ভাবে উচ্চতর হিস্পানিক এবং আফ্রিকান-আমেরিকান পরিবারগুলোর মধ্যে। ২৭ শতাংশ ল্যাটিনো শিশু এবং ৫২ শতাংশ আফ্রিকান-আমেরিকান শিশু বেড়ে উঠছে একক মা দ্বারা।
(চলবে...)