পুলিশি বাধায় পণ্ড উদীচী’র সম্মেলন, মঞ্চ ভাঙচুর

বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কাফরুল শাখা সম্মেলনের উন্মুক্ত অনুষ্ঠান পুলিশের বাঁধায় পণ্ড হয়েছে। এছাড়া অনুষ্ঠানের মঞ্চ ভেঙ্গে দিয়েছে পুলিশ। শুক্রবার (০২ সেপ্টেম্বর) এ ঘটনা ঘটে। যথাযথ প্রক্রিয়ায় কাফরুল উদীচীর সম্মেলনের অনুষ্ঠানের বিষয়ে পুলিশকে আগেই অবহিত করা হওয়ার পরেও পুলিশি বাঁধার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে উদীচীর কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন জেলা-শাখার নেতৃবৃন্দ।

শুক্রবার বিকেলে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কেন্দ্রীয় সংসদ এবং ঢাকা মহানগর সংসদের এক যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে উদীচী’র এ প্রতিবাদ জানানো হয়।

যথাযথ প্রক্রিয়ায় আগে থেকে জানানোর পরও উদীচী কাফরুল শাখার দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের উন্মুক্ত অনুষ্ঠানে পুলিশ বাধাদান করে  বলে বিবৃতিতে জানানো হয়। 

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সাংগঠনিক গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি দু’বছর পরপর উদীচী’র প্রতিটি জেলা ও শাখা সংসদ নিজ নিজ সম্মেলন আয়োজন করে। সেই মোতাবেক গত ০২ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর সংসদের আওতাভুক্ত কাফরুল শাখা উদীচী’র সম্মেলন আয়োজন করা হয়। সম্মেলনের সাংগঠনিক অধিবেশনের পর বিকেলে মিরপুর-১০ নম্বর এলাকায় উন্মুক্ত স্থানে সাংস্কৃতিক সমাবেশ আয়োজন করা হয়। এ বিষয়ে স্থানীয় পুলিশকে যথাযথভাবে চিঠি দিয়ে জানানোর পরও ওইদিন বিকেলে অনুষ্ঠান শুরুর কিছুক্ষণ আগে সুনির্দিষ্ট কোন কারণ ছাড়াই পুলিশ অনুষ্ঠানস্থলে গিয়ে বাধা দেয়। উদীচী নেতৃবৃন্দের বারবার অনুরোধ ও আপত্তি সত্ত্বেও এক পর্যায়ে অনুষ্ঠানের মঞ্চ ভেঙ্গে দেয় পুলিশ।’

বিবৃতিতে আরোও বলা হয়, এই মুহূর্তে দেশে কোন জরুরী অবস্থা জারি নেই। অথবা উন্মুক্ত স্থানে সভা-সমাবেশও নিষিদ্ধ ঘোষণা করেননি ঢাকা মহানগর পুলিশ কর্তৃপক্ষ। তারপরও অযৌক্তিকভাবে উদীচী’র কাফরুল থানা সম্মেলনের উন্মুক্ত অনুষ্ঠানে বাধা দেয় পুলিশ। সম্মেলনে বাধা দেওয়ার প্রতিবাদে মিরপুরে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ সমাবেশ করে উদীচী। 

দেশের অন্যতম বৃহত্তম প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী’র কাফরুল শাখার সম্মেলনে বাধা দেওয়ার মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে প্রগতিশীল সংস্কৃতি চর্চাকে বাধাগ্রস্ত করা হলো বলেও মনে করে উদীচী।

উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি কামাল লোহানী ও সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরদার এবং ঢাকা মহানগর সংসদের সভাপতি কাজী মোহাম্মদ শীশ ও সাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খান যৌথ বিবৃতিতে পুলিশের এ ধরনের আচরণের তীব্র নিন্দা জানান এবং এর সাথে জড়িত পুলিশ সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। 

এদিকে উদীচী কাফরুল শাখার সম্মেলনে পুলিশি বাধার প্রতিবাদে শনিবার (০৩ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করেছে সংগঠনটি। সকল স্তরের প্রগতিশীল মানুষদের উক্ত সমাবেশে উপস্থি থাকারও আহ্বান জানানো হয় বিবৃতিতে। 

উল্লেখ্য, ১৯৬৮ সালের ২৯ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী মহান স্বাধীনতা সংগ্রামসহ দেশের প্রতিটি অসাম্প্রদায়িক, মৌলবাদবিরোধী এবং মানুষের ন্যয়সঙ্গত অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছে। উগ্র ধর্মান্ধতা, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে উদীচী’র শিল্পী-কর্মীরা সর্বদাই রাজপথে সোচ্চার থেকেছেন। এর ফলে ১৯৯৯ সালে যশোর এবং ২০০৫ সালে নেত্রকোনায় দু’দফা উগ্র মৌলবাদী অপশক্তির ঘৃণ্য বোমা হামলার শিকারও হতে হয় উদীচীকে। শুধু অন্যায়-অবিচারের প্রতিবাদ নয়, বাংলার আবহমান সংস্কৃতির সংরক্ষণ এবং প্রচার ও প্রসারেও ভূমিকা রেখে চলেছে উদীচী।