মহিলা পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সকল নারীকে যুক্ত করার আহ্বান
প্রকাশ : ০৫ এপ্রিল ২০১৭, ১৫:২৩
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ৪৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে ৪ এপ্রিল ২০১৭, মঙ্গলবার বিকাল তিনটায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সুফিয়া কামাল ভবন মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ‘সকল শ্রেণী পেশার নারীদের যুক্ত করি, অন্তর্ভুক্তিমূলক সংগঠন গড়ে তুলি’-এই শ্লোগান নিয়ে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের রোকেয়া সদনের শিল্পীদের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন এবং জাতীয় পতাকা, সংগঠনের পতাকা উত্তোলন ও ৪৭টি মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর উদ্বোধনী অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডাঃ ফওজিয়া মোসলেম। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদে সংগঠন সম্পাদক উম্মে সালমা বেগম।
আয়োজকরা বলেন, ৪ দশকের অধিক সময় ধরে নারীর মানবাধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কাজ করছে। বর্তমান সময়ে এসে আমরা দেখি আজকের মহিলা পরিষদের কাছে সমাজের চাহিদা অনেক। মহিলা পরিষদ নারী আন্দোলনকে এগিয়ে নেয়ার জন্য বিভিন্ন প্রজন্মের চিন্তা ভাবনাকে সংগ্রহ করার প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ মনে করে বিভিন্ন প্রজন্ম কিভাবে নারী আন্দোলন গড়ে তুলেছে, কিভাবে নারী আন্দোলনকে অগ্রসর করে নিয়ে যাচ্ছেন এবং এখনকার প্রজন্ম নারী আন্দোলন নিয়ে কি ভাবছে তার একটি মেলবন্ধন হওয়া দরকার আর এই লক্ষেই এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আন্তঃপ্রজন্ম সংলাপের আয়োজন করা হয়েছে।
সভায় সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডাঃ ফওজিয়া মোসলেম উপস্থিত সকলকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, আজকে যে স্লোগান নিয়ে আমরা এই প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন করছি সেখানে মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নারী আন্দোলনের বিভিন্ন প্রজন্মের মতামত নিয়ে নারী আন্দোলনের কর্মকৌশল ঠিক করা।
তিনি বলেন, এই উপমহাদেশের নরী আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে মহিলা পরিষদের উদ্ভব। নারীর মানবাধিকার রক্ষায় মহিলা পরিষদ কাজ করছে।
তিনি বলেন, সামাজিক বিকাশ ও অবস্থানের পরিবর্তনের বিষয়টি বৈশ্বিকভাবে সম্পৃক্ত। আর তাই নতুন চ্যালেঞ্জের সাথে সাথে ধারাবহিক চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নারীর প্রতি সহিংসতা। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সকলকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ৪৭ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে সকলকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। ৪৭ বছরের পথ চলায় তিনি প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কবি সুফিয়া কামাল ও সাধারণ সম্পাদক মালেকা বেগমকে বিশেষ ভাবে স্মরণ করে বলেন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নারী আন্দোলনের সামগ্রিক ধারাকে সাথে নিয়ে পথ চলছে। এই পথচলায় মহিলা পরিষদের সকল নেতা এবং কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সকল সংগঠককে বিশেষভাবে স্মরণ করছি।
তিনি বলেন, নারী আন্দোলনের অভিজ্ঞতায় আছে অনেক সাফল্য ও অনেক চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নারীর মানবাধিকার রক্ষায় এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে চলছে প্রতিনিয়ত। এই পথ চলায় সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
তিনি বলেন, নারী আন্দোলন অতীতের অভিজ্ঞতা নিয়ে বর্তমানকে সাথে নিয়ে ভবিষ্যতের পথচলা ঠিক করবে যার জন্য আজকে আমাদের এই আয়োজন। সকলের সর্বাত্মক সহযোগিতায় নারী আন্দোলনকে এগিয়ে নেয়ার এবং নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইকে এগিয়ে নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ফেরদৌস আজিম, বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানিয়া হক, ওয়াইডাব্লিউসিএর হেলেন সাধারণ সম্পাদক মনীষা সরকার, এ্যাকশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবীর। আরো বক্তব্য রাখেন নারী পক্ষের সদস্য রিতা দাশ রায়, রাখী ম্রং, ব্র্যাকের পরিচালক আন্না মিনজ, ফিনানশিয়াল এক্সপ্রেসের স্পেশাল করস্পন্ডেন্ট মুনিমা সুলতানা, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ঢাকা মহানগর শাখার সদস্য জুয়েলা জেবুন নেসা খান, ইডেন মহিলা কলেজের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী শাফকাত আলম আখি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের মানব সম্পদ ব্যবস্থাপক পলি মহন্ত।
বক্তারা নারী আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে নারী আন্দোলন অগ্রসর হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে সময়ের সাথে সাথে নারীর প্রতি সহিংসতার ধরণ, নারীর অবস্থা ও অবস্থানের পরিবর্তন হয়েছে। আর তাই নারী আন্দোলন নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখিন হচ্ছে। বর্তমানে সাইবার ক্রাইম, নারী জঙ্গির উত্থান নারী আন্দোলনের নতুন চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সোশ্যাল মিডিয়াকে কাজে লাগাতে হবে পাশাপাশি নারী আন্দোলনে ব্যাপক নারী সমাজকে সম্পৃক্ত করতে হবে এবং একই সাথে নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় শুধু মাত্র নারীদের নয় পুরুষদেরও সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন।
বক্তারা আরো বলেন, নারী ক্রমাগত যে সহিংসতার শিকার হচ্ছে এই বলয় থেকে বের হয়ে আসতে হলে নতুন কর্মকৌশল নিতে হবে, প্রযুক্তির ব্যবহারে নারীকে সম্পৃক্ত করতে হবে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমনে হেল্প লাইন আছে, নারী ও শিশু নির্যতন দমন আইন আছে, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে যে আইনগুলো আছে এরকম বিভিন্ন বিষয়ে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলকে সচেতন করতে হবে। নারীবাদ, নারীবাদী এবং নারী আন্দোলন এই বিষয় নিয়ে এখনো অনেক মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। বাংলাদেশে আমাদের প্রান্তিক পর্যায়ে নারীদের জন্য কাজ করতে হবে। নারীর অধিকার রক্ষায় আমরা এর সাথে সম্পূরক বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন করি না, এগুলোকে এড়িয়ে যেতে চাই। বর্তমানে নারীদের একটি ব্যাপক অংশ শ্রম বাজারে কাজ করছে কিন্তু কত সংখ্যক পুরুষ ঘরের কাজে সম্পৃক্ত হচ্ছে তা নিয়ে কি আমরা ভাবছি?
বিশেষ বিধান রেখে বাল্য বিবাহ আইনটি পাশ হওয়ায় নারীরা নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখিন হবে বলেও বক্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
মুক্ত আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের হিরা, টার্নিং পয়েন্ট ফাউন্ডেশনের শিখা, ব্র্যাকের তাহমিনা ইয়াসমিন নিলা, অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের নাহার, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ঢাকা মহানগর শাখার সদস্য রেবা নার্গিস, তামান্না ছাত্রী।
অনুষ্ঠানে একক নৃত্য পরিবেশনা করেন রূপশ্রী চক্রবর্তী।
সংগঠনের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবর্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের টঙ্গি জেলা শাখার উদ্যোগে শ্রমিক নারীদের সাথে মতবিনিময় সভা, নরসিংদীর বেলাবোতে জেলা শাখায় কৃষক নারীদের সাথে মতবিনিময় সভা ও সুনামগঞ্জ জেলা শাখায় বাল্যবিবাহ নিরোধ বিষয়ে মতবিনিময় সভা করা হবে বলে সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়।