গণধর্ষণের শিকার মুক্তারণ আজ নারীদের অহংকার
প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০১৬, ১৬:১১
উনি যখন হাঁটছিলেন, লাল গালিচাও যেন রক্তবর্ণ পদধ্বনি অনুভব করছিল। করাচির রাস্তায় যখন এক একটা পা রাখছিলেন তিনি, গোটা বিশ্ব তাকিয়ে ছিল তাঁর দিকেই। এতদিন উনি চিৎকার করেছেন নারীর ওপর হওয়া প্রত্যেকটা নারকীয় ঘটনার প্রতিবাদে। আজ নারীর অহংকার তিনি নিজেই। আজ একটি ‘আস্ত জাতির’ অহংকারও তিনি। গোটা বিশ্ব গর্বিত তাঁর জন্য।
পৃথিবীর কন্যা মুক্তারণ এখনও নারী মুক্তির পথ প্রদর্শক। মুসলিম প্রধান দেশ, পাকিস্তানে ফ্যাশন রানওয়েতে পথ হাঁটলেন মুক্তারণ মাই। এটাই প্রথমবার এবং মুক্তারণই প্রথম যিনি এই নজির তৈরি করলেন। এর আগে বিশ্বের কোথাও কখনও কোনও ‘ধর্ষিতার’ এই সৌভাগ্য হয়নি।
“আমার একটা পদধ্বনি যদি বাকিদের সাহস দেয়, নারীদের উৎসাহ দেয়, আমি তাহলে এমনটা বারে বারে করতে চাইব। আমি এমনটা করে খুশি”, পাকিস্তানের করাচির রাস্তায় ফ্যাশন রানওয়েতে হেঁটে নিজের এই অভিব্যাক্তিই জানিয়েছেন নারীদের ওপর নারকীয় অত্যাচারের প্রতিবাদের মুখ মুক্তারণ বিবি।
১৪ বছর আগে মুক্তারণের ‘শরীরটা ছিড়ে খেয়েছিল’ কিছু নেকড়ের দল। সেদিন সভ্যতার বর্বর ছবি দেখেছিল গোটা বিশ্ব। কেউ পাশে দাড়ায়নি সেদিন। পরিবারও না। দমে যায়নি মুক্তারণ। লড়াই, লড়াই আরও লড়াই। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে শাস্তি হয় অপরাধীদের। এরপর থেকেই মুক্তারণ ধর্ষণ বিরোধী মুখ। নারী স্বাধীনতার মুখ, নারীর অধিকারের মুখ।
প্রসঙ্গত, ১৪ জন পুরুষের হাতে ধর্ষিতা হয়েও দমে যাননি পাকিস্তানের মুখতার মাই ! তার জীবনে ঘটনাটি ঘটেছিল ১৪ বছর আগে। দেশটির যে গ্রামে থাকতেন মুখতার, সেখানে ছিল মাস্তোই বালোচ গোষ্ঠীর প্রতাপ। আর মুখতার ছিলেন তাতলা গোষ্ঠীর সদস্যা। দুই গোষ্ঠীর মধ্যে জাতি বিবাদ লেগেই থাকত। সেই বিবাদের জেরেই মুখতারের ছেলে শাকুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে, সে নাকি মাস্তোই গোষ্ঠীভুক্ত আব্দুল খালিকের মেয়ের সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছে। সেই অপরাধের শাস্তি হিসেবে মুখতারের ছেলেকে ধরে এনে আব্দুলের লোকজন তার শ্লীলতাহানি করতে থাকে। ছেলেটি তখন ভয়ে চিৎকার দিতে থাকে। ছেলের চিৎকারে ছুটে যান মা মুখতার ও তাতলা গোষ্ঠীর অন্যান্য নারীরা। মুখতারের ছেলের উপর তখনও চলছে অত্যাচার। বিষয়টি বুঝতে আব্দুলের বাড়ি ঘেরাও করে ছেলেটির মা মুখতার ও তার সঙ্গীরা। এতে আব্দুলের লোকজন রেগে মুখতারকে তুলে নিয়ে যায় একটি আস্তাবলে। সেখানে মুখতারের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে ১৪ জন মিলে তাকে ধর্ষণ করে! তারপর দীর্ঘ চিকিৎসার পরে যখন সুস্থ হয়ে উঠেন মুখতার, তখন শুরু হয় তার আসল লড়াই। নিজের লড়াইয়ের মাধ্যমে মুখতার হয়ে উঠেন নারীর প্রতিবাদের আন্তর্জাতিক মুখ। তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যারা তার উপর এ রকম অত্যাচার করেছিল, তাদের তিনি শাস্তি দেবেনই।
দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর অভিযুক্ত ১৪ জনকে গ্রেফতারও করা হয়, কিন্তু প্রভাব খাটিয়ে তারা মুক্তি পেয়ে যান। তবুও তিনি হার মানেনি! নিজের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তৈরি করে পাকিস্তানি মেয়েদের শিক্ষা ও প্রগতির ব্যাপারে সক্রিয় হয়ে উঠন তিনি। আত্মজীবনী লিখে নিজের জীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন সবার সামনে। আর তার সেই আত্মজীবনী বিশ্বজোড়া খ্যাতিও অর্জন করে।
সূত্র : জিনিউজ