পা দিয়ে লিখে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে তামান্না

প্রকাশ : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২১:১০

জাগরণীয়া ডেস্ক

পা দিয়ে লিখেই এবারের এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষা দিচ্ছে তামান্না নূর। 

জন্ম থেকেই দুই হাত এবং একটি পা ছাড়া জন্ম নেয় যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া ইউনিয়নের আলিপুর গ্রামের রওশন আলীর মেয়ে তামান্না। স্থানীয় বাঁকড়া ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসেই পরীক্ষা দিচ্ছে সে।

পড়াশুনার প্রতি তার অদম্য ইচ্ছে শারিরীক প্রতিবন্ধকতার কাছে হার মানে। মানুষের তাচ্ছিল্য, উপেক্ষা আর সহানুভূতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণির প্রতিটি ফলাফলে মেধাতালিকায় প্রথম হয়ে প্রাথমিকের গণ্ডি পেরোয় তামান্না। ২০১৩ সালে পিইসি এবং ২০১৬ সালে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখে তামান্না। পরিবার, শিক্ষক, সহপাঠীদের ধারণা, প্রাথমিক বৃত্তি ও জেএসসি’র ধারাবাহিকতা রক্ষা করে এসএসসিতেও ভালো ফলাফল করবে তামান্না।  

তামান্নার মা খাদিজা পারভীন জানান, শারিরীক অবস্থার কারণে তামান্নাকে প্রথমে কেউই স্কুলে ভর্তি করাতে রাজি হননি। কিন্তু আমি দমে যায়নি। এক পা দিয়ে চক ধরা, কলম ধরা, বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টানো, অক্ষর জ্ঞানসহ চামচ দিয়ে খাওয়া, চুল আঁচড়ানো সবই তাকে আয়ত্ত্ব করা শেখানো হয়েছে। এমনকি এক পায়ে ছবিও আঁকে সে। দক্ষ তামান্নার এই প্রতিভা আর নিরলস চেষ্টায় মুগ্ধ হয়ে এগিয়ে আসে স্থানীয় আজমাইন এডাস স্কুল কর্তৃপক্ষ। তারা সানন্দে মেয়েটিকে ভর্তি করে নেয়। এরপর থেকে হুইল চেয়ারে করে তামান্নাকে স্কুলে আনা-নেওয়া করেন তার বাবা। আজমাইন স্কুলের পাশাপাশি বর্তমান স্কুল জোনাব আলী খান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও তামান্নাকে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন।

তামান্নার বাবা রওশন আলী সাংবাদিকদের বলেন, প্রতিবন্ধী মেয়ে জন্ম নেওয়ার খবর পেয়ে বিদেশের চাকরি ছেড়ে বাড়ি চলে আসি। সামান্য কিছু জমি থেকে আসা আয়েই চলে তার সংসার। সম্প্রতি তিনি চাকরি নিয়েছেন একটি নন এমপিও মাদ্রাসায়। সেখান থেকে কোনো বেতন পান না। তাই ঠিকমতো সংসার চালানোই দায়। জন্মের পর থেকে অর্থাভাবের পাশাপাশি সামাজিকভাবে অনেক প্রতিকূলতার মোকাবেলা করতে হয়েছে তামান্নাকে। তার অসাধারণ শ্রবণশক্তি আর মেধা। খুব সহজেই সে অনেক জটিল জিনিস আয়ত্ত্ব করতে পারে।

এখনকার মতো ব্যবস্থা হলেও মেয়ের ভবিষ্যত শিক্ষাব্যয় নিয়ে দিশেহারা মাদ্রাসা শিক্ষক বাবা রওশন আলী। মুখ ফুটে মেয়ের জন্য সাহায্যও চাইতে পারেন না তিনি।

তামান্নার স্কুলের প্রধান শিক্ষক হেলাল উদ্দিন খান জানালেন, ভর্তির পর থেকে তামান্নার জন্য স্কুলের সেশন ফিসহ অন্যান্য সব ফি মওকুফ করা হয়েছে। শুধু প্রতিবন্ধী ভাতা ছাড়া সরকারি আর কোনো সহায়তা সে পায়নি। তাই তার আগামী দিনের পড়াশুনা এগিয়ে নিতে সরকারি-বেসরকারি সহায়তা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

খুব ভালো প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছেন উল্লেখ করে তামান্না নূর বলেন, আমার জন্য দোয়া করবেন যেন ভালো ফলাফল করতে পারি। পাশাপাশি সব শিক্ষক, বাবা-মা, সহপাঠী সবার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই।

ক্যারিয়ার প্রশ্নে তামান্না জানান, বড় হয়ে মেডিসিনের ডাক্তার হতে চান তিনি। কিন্তু শারিরীক প্রতিবন্ধী অবস্থায় আদৌ সেটি সম্ভব হবে কীনা তা তিনি জানেন না। সেই সাথে এসএসসির পর ভালো কলেজে পড়তে শহরে যেতে চান তিনি। কিন্তু সেটি সম্ভব হবে কীনা জানেন না মেধাবী তামান্না।

সূত্র: ইটিভি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত