কর্মক্ষেত্র আর মাতৃত্বের মেলবন্ধনে ‘মাদার কপ’ অর্চনা
প্রকাশ : ২৯ অক্টোবর ২০১৮, ২১:৪৩
সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তোলা ঝাঁসির ‘মাদার কপ’ খ্যাত অর্চনা জয়ন্তকে অবশেষে তার বাড়ির পাশে আগ্রায় বদলির নির্দেশ দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের ডিজিপি ওপি সিংহ।
২৯ অক্টোবর (সোমবার) সকালে এক নির্দেশনায় এ তথ্য জানানো হয়। পাশাপাশি অর্চনাকে তার কাজের প্রতি নিষ্ঠার জন্য অভিনন্দনও জানিয়েছেন ডিজিপি।
এর আগে এক ছবির মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেন অর্চনা জয়ন্ত। খ্যাতি মেলে ‘মাদার কপ’ হিসেবে। ভাইরাল হওয়া এক ছবিতে দেখা যায়, ইউনিফর্ম পড়া অর্চনা চেয়ারে বসে খাতায় কিছু লিখছেন। তার ঠিক সামনেই রয়েছে উঁচু একটা টেবিল। আর সেই টেবিলের মধ্যেই শোয়ানো রয়েছে একটি শিশু। যেখানে বাচ্চাটিকে শোয়ানো রয়েছে টেবিলের সেই অংশটা সামনের দিক থেকে আটকানো। ফলে সামনে থেকে কারও বোঝাই সম্ভব নয় যে ওখানে একটি শিশু রয়েছে। পাশে দুধের ফিডার। ঘুমন্ত শিশুকে কাছে রেখে দায়িত্ববান এক মা আর নিষ্ঠাবান এক অফিসারের ছবি সাধারণ মানুষের মনে আলোড়ন তোলে।
জানা যায়, ছবিতে পুলিশের পোশাকে থাকা ঐ নারী ঝাঁসির কোতয়ালি থানার এক কনস্টেবল, নাম অর্চনা জয়ন্ত। কর্মসূত্রে তিনি এখন ঝাঁসিতে। স্নাতকোত্তর পড়াশোনা শেষ করার পর ২০১৬ সালে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন অর্চনা। বর্তমানে তিনি দুই সন্তান, ১০ বছর বয়সী কনক ও শিশু অনিকার মা। তার স্বামী হরিয়ানার গুরগাঁওতে একটি গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থায় কাজ করেন, থাকেন আগ্রাতে। চয় মাস বয়সী কন্যাসন্তান অনিকাকে নিয়ে ঝাঁসিতে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন। পরিবার-পরিজন কাছে না থাকায় সন্তানকে দেখাশোনার পুরো দায়িত্ব তার উপর।
ভাইরাল হওয়া ছবি দেখে অনেকেই টুইটারে বলেন, পুলিশের অবশ্যই উচিৎ কর্মরত পুলিশ মা ও বাচ্চাদের জন্য বিশেষ সুবিধা দেওয়া। বিশেষ করে যাদের অল্পবয়সী শিশু রয়েছে।
অর্চনার এই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পরে রাজ্য পুলিশের শীর্ষ কর্তারাও তার প্রশংসা করেছেন। ডিআইজি সুভাষ সিংহ বাঘেল অর্চনাকে বলেন, “যে ভাবে অর্চনা দুটো দায়িত্বই নিখুঁত ভাবে সামলাচ্ছেন, সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।”
উত্তর প্রদেশের একজন সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা রাহুল শ্রীবাস্তব টুইট করেছেন, ‘এই হলেন পুলিশ মা অর্চনা! ঝাঁসির কোতয়ালিতে পোস্টেড তিনি। মাতৃত্ব ও কাজ একই সঙ্গে সামাল দিচ্ছেন! অর্চনা স্যালুট পাওয়ার যোগ্য’।
স্থানীয় গণমাধ্যম জানায়, অর্চনার উর্ধতন অফিসারেরা এই ঘটনা দেখার পর তার কর্মনিষ্ঠার জন্য ১০০০ টাকা পুরষ্কার দেন।
সন্তান আর পুলিশের মত চাকুরী কীভাবে সামলান, এমনই এক প্রশ্নের জবাবে ভারতীয় সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অর্চনা বলেন, এ কাজে তো বাইরে যেতেই হয়। কখনও ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেগে যায় ফিরে আসতে। তখন অনিকাকে সামাল দেন সহকর্মীরা।
অর্চনা হেসে জানান, তার এই চ্যালেঞ্জিং কাজই এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশংসার ঝড় তুলেছে।
তিনি আরও বলেন, “অনেক সময় ইমারজেন্সিতে ডাকা হয়। তখন উপায় থাকে না। অনিকাকে সঙ্গে নিয়েই থানায় চলে আসি। ওখানেই ওকে ঘুম পাড়ানো, খাওয়ানো সব কিছুই করাতে হয়। সমস্যা তো হয়ই। কিন্তু আমার কাছে দু’টোই সমান গুরুত্বপূর্ণ। সে কারণেই কাজ করার সঙ্গে সঙ্গে মেয়ের দেখাশোনাও করি।”
অর্চনা জানান, আগ্রাতে তিনি ট্রান্সফারের জন্য আবেদন করেছেন। ওখানে গেলে অনিকাকে তার পরিবার দেখাশোনা করতে পারবে। আর তার পক্ষেও ভালভাবে কাজ করা সম্ভব হবে।
অবশেষে সে ট্রান্সফারের নির্দেশনা হাতে পেলেন ‘মাদার কপ’ অর্চনা।
সূত্র: আনন্দবাজার, এনডিটিভি।