চট্টগ্রামে দ্বিগুণ লাভের ফাঁদে বস্তিবাসী

প্রকাশ : ১৯ নভেম্বর ২০১৬, ১৭:৪০

জাগরণীয়া ডেস্ক

চট্টগ্রামে ‘অরগানাইজেশন অব সোস্যাল সার্ভিস অ্যান্ড এলিমিনেশন অব পোভার্টি (ওসেপ)’ নামের একটি হায় হায় কোম্পানি দ্বিগুণ মুনাফার লোভ দেখিয়ে বস্তিবাসীর মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে। 

গত মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) থেকে নগরীর এনায়েত বাজারের বাটালি রোডের চারতলা ভবনের নিচতলায় অবস্থিত ওসেপের কার্যালয়ে তালা ঝুলছে। এদিকে পাওনা টাকা ফেরত পেতে শত শত নারী-পুরুষ ক্ষোব প্রকাশ করেছে। তারা গত মঙ্গলবার বিকালে ও গত বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) বিকালে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেছেন। 

এ বিষয়ে জালালাবাদ এলাকার ভুক্তভোগী আরজু কলোনির বাসিন্দা কোহিনূর বেগম জানান, ২০১৩ সালের ৩ মার্চ তিনি সদস্য হয়েছিলেন ওসেপ এনজিও কোম্পানির। এরই মধ্যে তাদের কাছে তার জমা হয়েছে ২৮ হাজার টাকা। 

অনুরূপভাবে ভুক্তভোগী সুরমা বেগম জানান, তার দৈনিক ২০ টাকা করে ৩০ হাজার টাকা জমা হয়েছে ওসেপে। কথা ছিল চার বছরে দ্বিগুণ লাভ দেওয়া হবে। 

আরেক ভুক্তভোগী গার্মেন্টস কর্মী রিমা আক্তার জানান, তিনিসহ একই পরিবারের ৬ গ্রাহক ওসেপের। কেউ কেউ ৪ বছর ধরেও টাকা জমা করছেন এখানে। এর মধ্যে রিমা আক্তারের জমা হয় ৩১ হাজার ২০০ টাকা, আমেনা বেগমের ১৩ হাজার ৭১০ টাকা, ময়না আক্তারের ১২ হাজার টাকা, হেলাল উদ্দিনের ১১ হাজার ৬০০ টাকা, মো. হূদয়ের ২৮৮০ টাকা ও তানহা আক্তারের ২২০০ টাকা পাওনা  হয়েছে। আরেক গার্মেন্টস কর্মী রেহানা বেগমের পাওনা হয়েছে প্রায় এক লাখ টাকা। 

জানা যায়, এভাবে কাজের বুয়া, অল্প বেতনের গার্মেন্ট কর্মী, খেটে খাওয়া গরিব-দুঃখী ও অসহায় মানুষদের ঘামে ঝরা আয় করা টাকা হাতিয়ে উধাও হয়ে গেছে কোম্পানিটি। 

এদিকে দুই দফায় বিক্ষোভ এবং সড়ক অবরোধের সময় পুলিশ পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণে রাখে। 

কোতোয়ালি থানার ওসি জসিম উদ্দিন বলেন, টাকা ফেরত পাওয়ার দাবিতে প্রথম দিন প্রায় শতাধিক নারী-পুরুষ দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে সড়ক অবরোধ করে রাখে। এ অভিযোগে এখনো পর্যন্ত কেউ কোনো ধরনের লিখিত অভিযোগ করেননি। তারপরও এ বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছি।’ 

এনায়েত বাজার ওয়ার্ড বা স্থানীয় কাউন্সিলর মোহাম্মদ সলিম উল্লাহ বলেন, ওসেপ এনজিও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যারা জড়িত সবাই অন্য জেলার। ঘটনার আগেই প্রতিষ্ঠান ফেলে সবাই চলে গেছে। তবে মূল মালিকের যে জায়গা বা বিল্ডিং রয়েছে, তা বিক্রি করলে গ্রাহকের আসল টাকা ফেরত দেয়া যাবে। 

এ বিষয়ে এখন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ডা. জসিম উদ্দিন। তবে তিনি বেঁচে নেই। তার তিন স্ত্রী রয়েছেন। এক স্ত্রী থাকেন ঢাকায়। একজন থাকেন নরসিংদীতে। আরেকজন থাকেন চট্টগ্রামে। প্রায় ছয় মাস আগে মারা যান জসিম। নগরীর অ্যাপোলো শপিং সেন্টারে তার কয়েকটি ভেষজ ওষুধ বিক্রির দোকান ছিল। তার মৃত্যুর আগে ওসেপ-এ কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিল ১২৫ জন। মারা যাওয়ার পর তা ৬৫টিতে এসে দাঁড়ায়। গত সোমবার রাতে ওই ৬৫ কর্মকর্তা-কর্মচারী একযোগে অফিসের প্রধান ফটকে তালা দিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছেন। এর আগে তারা বিপুল সংখ্যক গ্রাহকের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র নষ্ট করে ফেলেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত