সালিশে মারধর করে ‘তালাকনামায় সই’

প্রকাশ : ৩০ জুন ২০১৬, ১৯:২৬

জাগরণীয়া ডেস্ক

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় পারিবারিক বিরোধ মেটাতে সালিশ ডেকে এক গৃহবধূকে মারধর করে তালাকনামায় সই করানোর অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সাবেক এক ইউপি সদস্যের ছেলেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।   

হাতীবান্ধা থানার এসআই আনিছুর রহমান আনিছ জানান, গ্রেপ্তার হামিদুল ইসলাম নামের ২৫ বছর বয়সী ওই তরুণকে বুধবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। 

নির্যাতিতা ওই গৃহবধূ (২৫) মামলায় অভিযোগ করেছেন, সোমবার উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়নের দোলাপাড়া গ্রামে সালিশে মারধরে তিনি আহত হন।

বুধবার তিনি বলেন, বড়খাতা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল গফুরের নির্দেশে মঙ্গলবার সালিশ বৈঠকে ডেকে তাকে এবং তার বাকপ্রতিবন্ধী স্বামীকে মারধর করা হয়।

স্থানীয়দের বরাত দিয়ে এসআই আনিছ বলেন, "সম্প্রতি ওই গৃহবধূ কাজের সন্ধানে ঢাকা যান। ফেরার পর শ্বশুরবাড়ির লোকজন ‘পরকীয়ার অভিযোগ তুলে’ তাকে তাড়িয়ে দেয়। মেয়েটি স্থানীয়দের কাছে বিচার চাইলে সোমবার বিকালে স্থানীয় এক বাড়ির উঠানে সালিশ বসে। সালিশ চলাকালে মেয়েটির শাশুড়ি ও স্থানীয় এক নারী সবার সামনে মেয়েটিকে মারধর করে। পরে স্থানীয় এক কাজী ডেকে জোর করে তালাকের কাগজে মেয়েটির সই নেওয়া হয় বলে তার অভিযোগ”।

পরে স্থানীয়দের সহায়তায় ওই তরুণীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বলে জানান এই পুলিশ সদস্য। 

ওই ঘটনায় পরদিন তিন নারীসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে ওই তরুণী হাতীবান্ধা থানায় মামলা করলে বড়খাতা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল গফুরের ছেলে হামিদুলকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুল গফুর বলেন, “ঘটনাটি ৬ নম্বর ওয়ার্ডের। আত্মীয়তার সূত্রে আমি সেখানে গিয়েছিলাম। ঘটনাস্থলে আমার ছেলে হামিদুল উপস্থিত ছিল না। অথচ পুলিশ তাকে বাড়ি থেকে আটক করে নিয়ে গেছে।”

তার নির্দেশে ওই গৃহবধূকে মারধরের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গফুর বলেন, “আমরা নিষেধ করার পরেও ওই মেয়েকে তার শাশুড়ি মারধর করছে।”

এ বিষয়ে মেয়েটির শাশুড়ির ভাষ্য, “আমার ছেলের বউ, তাই আমি তাকে শাসন করছি।”

বড়খাতা ইউনিয়নের কাজী আবুল হাশেম দাবি করেছেন, মেয়েটির ‘সম্মতিতেই’ তার তালাক হয়েছে। নির্যাতনের কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, “উভয় পক্ষের সম্মতিতে স্বামীর বাড়িতে ওই গৃহবধূ তালাক নামায় স্বাক্ষর করেছে। ”

মামলার বাকি আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে বলে এসআই আনিছ জানান।

এদিকে নির্যাতিতাকে হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার নাঈম হাসান নয়ন বলেছেন, “মেয়েটির শরীরে আঘাতের চি‎হ্ন রয়েছে। তার চিকিৎসা চলছে।”

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত