হালিম যেভাবে ধর্ষক নাঈম আশরাফ
প্রকাশ : ১৩ মে ২০১৭, ১৫:৫৭
ঢাকার বনানীর ‘দি রেইন ট্রি’ হোটেলে বন্ধুর জন্মদিনের পার্টিতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে অস্ত্র ঠেকিয়ে ধর্ষণ মামলার দুই আসামি সাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফকে ১১ মে (বৃহস্পতিবার) রাতে সিলেট থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে, এ মামলার অপর আসামি সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার নাঈম আশরাফ (প্রকৃত নাম হাসান মোহাম্মদ হালিম) এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে।
১১ মে (বৃহস্পতিবার) সকালে সরেজমিনে নাঈমের গ্রামের বাড়ি গেলে অভিযোগের ডালি নিয়ে হাজির হন এলাকাবাসী। তারা জানান, সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার গান্ধাইল গ্রামের ফেরিওয়ালা আমজাদ হোসেনের একমাত্র ছেলে হাসান মোহাম্মদ হালিম। প্রতারণার উদ্দেশে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিজেকে নাঈম আশরাফ বলে পরিচয় দিলেও এলাকাবাসী তাকে হালিম নামেই চেনেন। এছাড়া, সে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কাজিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল আলমের ছেলে নাঈম আশরাফের নাম ব্যবহার করতো।
হালিমের শিক্ষা জীবনের হাতেখড়ি কাজিপুর উপজেলার গান্ধাইল আহম্মদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে। ওই স্কুলে অধ্যয়নরত অবস্থায় দশম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অপরাধে তাকে জুতাপেটা খেতে হয় ওই স্কুলেরই প্রধান শিক্ষকের হাতে। ২০০৪ সালে এসএসসি পাস করে ভর্তি হয় বগুড়া পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে। সেখানে নিজেকে সিরাজগঞ্জ শহরের একজন ধনাঢ্য ঠিকাদারের ছেলে পরিচয় দিয়ে এক ধনীর দুলালিকে বিয়ে করে। কিছুদিনের মধ্যে আসল পরিচয় ফাঁস হলে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তাদের মেয়েকে ছাড়িয়ে নিয়ে উত্তমমাধ্যম দিয়ে তাড়িয়ে দেন হালিমকে। তার বিরুদ্ধে এমন প্রতারণার অভিযোগ আরও রয়েছে বলে জানান তারা। পরে বিষয়টি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অবগত হলে সেখান থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। বগুড়া থেকে চলে যায় ঢাকায়। তেজগাঁও পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে ভর্তি হয় এবং পাসও করে। ডিপ্লোমা পাস করে ঢাকার একটি বেসরকারি টেলিভিশনে ইন্টার্নি করে সেখানেই চাকরি নেয়। চেক জালিয়াতির কারণে তাকে সে চাকরিটি হারাতে হয়। পরে আরেকটি টেলিভিশনে চাকরি নিয়ে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটায় হালিম। শাস্তিও একই। এছাড়া, নিঃসন্তান হালিম বাবার নাম বদলিয়ে বিয়ে করে তিনটি। প্রতারণা করে বিয়ে করার বিষয়টি ফাঁস হলে গেলে আগের দুই স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। তৃতীয় স্ত্রীসহ বাবা-মাকে নিয়ে ঢাকার মিরপুরের কুলশীতে ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতো। সম্প্রতি প্রতারক হালিম নিজেকে কাজিপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি পরিচয় দিয়ে গান্ধাইল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জুয়েল রানার সৌজন্যে একজন জাতীয় নেতার ছবির পাশে নিজের নাম হাসান মোহাম্মদ হালিম ও ছবি দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যানার, বিলবোর্ড লাগানো হয়।
এর আগে দুই ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের একজনের বাড়ি কাজিপুরের গান্ধাইলে জানতে পেরে বুধবার সিরাজগঞ্জে অবস্থানরত স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে প্রয়োজনে তার পরিবারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে আসামিকে গ্রেপ্তার করার জন্য পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দেন।
কাজিপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সেলিম রেজা জানান, দলের সহ-সভাপতি পদ তো দূরে থাক আমি তাকে কোনো দিন দেখিইনি। তবে, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটিতে সহ-সভাপতি পদে আবদুল হালিম ওরফে কালা হালিম নামে একজন রয়েছেন। তিনি স্থানীয় একটি কারিগরি কলেজে শিক্ষকতা করেন।
সিরাজগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জিহাদ-আল ইসলাম বলেন, হাসান মোহাম্মদ হালিম বা নাঈম আশরাফ নামে কাজিপুরে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কোনো নেতা নেই। হালিম অপকর্ম ও প্রতারণার জন্যই মূলতঃ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতির পদ ব্যবহার করেছে।
সূত্র: যুগান্তর