অনিচ্ছায় বিয়ে দেওয়ায় তরুণীর আত্মহত্যা
প্রকাশ : ১১ মে ২০১৭, ১৯:১২
রাজধানীর চকবাজারে জোর করে এক কিশোরের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার পরদিন শিউলী আক্তার (১৯) নামের এক তরুণী আত্মহত্যা করেছেন। এই ঘটনায় তরুণীর মা নার্গিস বেগম বাদি হয়ে চকবাজার থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার পর চার আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নিহত তরুণীর স্বজন ও চকবাজার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আ স ম আতিকুর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘শিউলী আক্তার তার বাবা-মায়ের সঙ্গে চকবাজারের একটি টিনসেড বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। বাড়িটির মালিকের পক্ষে ওই বাড়িটি দেখভাল করেন বাবুল নামের এক ব্যক্তি। ওই বাড়ির একটি কক্ষে ভাড়া থাকেন শাকিল (১৭) নামের তরুণ। এই তরুণের সঙ্গে শিউলীর অবৈধ সম্পর্ক থাকার ওজুহাতে গত ৮ মে রাতে দু’জনকেই তার কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে তার পরিচিত কাজী ডেকে বাবুল তাদের অমতেই জোর করে বিয়ে দেন।’
এসআই আ স ম আতিকুর রহমান জানান, জোর করে বিয়ে দেওয়ার সময় শিউলীর মা বাসায় থাকলেও তার বাবা সিরাজ মাতবর বাইরে ছিলেন। বিয়ে পড়ানো শেষে রাত ৩টার দিকে শাকিলকে শিউলীদের বাসায় পাঠানো হয়। এরপর ভোর ৬টার দিকে শিউলী চিৎকার দিয়ে ওঠে। এ ঘটনার পর শিউলীকে মিডফোর্ট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে আবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে গত ৯ মে বেলা পৌনে ১২টায় চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এরপর বাবুল তথ্য গোপন করে স্বাভাবিক মৃত্যু বলে তার লাশ নিয়ে যায় বাসায়। এই খবর পুলিশ জানতে পেরে লাশ উদ্ধার করে। গত ৯ মে (মঙ্গলবার) বিকালেই তার লাশ ময়না তদন্তের জন্য মিডফোর্ড হাসপাতালে পাঠায়। তবে ঢামেক হাসপাতালে তার মৃত্যু হওয়ায় মিডফোর্ট কর্তৃপক্ষ তার লাশ ময়না তদন্তের জন্য বুধবার (১০ মে) ফের ঢামেক হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। ময়না তদন্তের জন্য বর্তমানে লাশটি মর্গেই রাখা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায় ‘মেয়েটিকে যখন অপবাদ দিয়ে বিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছিল, তখনই সে বলছিল জোর করে বিয়ে দিলে সে বিষপাণ করে আত্মহত্যা করবে। কিন্তু বাবুলসহ তার সহযোগীরা তা শুনেনি। তাকে জোর করেই বয়সে ছোট শাকিলের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। তাকে ওই বাড়ির ভাড়াটিয়া শাহজাহান, মাকসুদা ও কাজী মো. জাহাঙ্গীর আলম সহযোগিতা করেছে। ঘটনার পর নিহতের মা নার্গিস বেগম বাদি হয়ে আত্মহত্যা প্ররোচনায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। আমরা চারজনকেই গ্রেপ্তার করেছি। তাদের আদালতে পাঠালে, আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।’
শিউলীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, তিন ভাইবোনের মধ্যে শিউলী সবার বড়। সে পুরান ঢাকার একটি পিতল কারখানায় কাজ করতো। শরীতপুরের পালং উপজেলার শৈলপাড়ায় তার গ্রামের বাড়ি।