রাজশাহীতে সমাহিত মডেল রাওদা

প্রকাশ : ০১ এপ্রিল ২০১৭, ১৯:৫০

জাগরণীয়া ডেস্ক

রাজশাহীতে পড়তে এসেছিলেন মালদ্বীপের নীলনয়না মডেল রাওদা আতিফ। তারপর আর দেশে ফেরা হলো না। মৃত্যুর পর তাকে রাজশাহীর মাটিতেই সমাহিত করা হলো। শনিবার দুপুর ২টায় রাজশাহী মহানগরীর হেতেমখাঁ কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়েছে।

দাফনকার্যে তার পরিবারের সদস্যরাই অংশ নেন। এর আগে জোহরের নামাজের পর কবরস্থান সংলগ্ন রওজাতুস সালেহীন জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে তার জানাযার নামায অনুষ্ঠিত হয়। এতে তার পরিবারের সদস্য, সহপাঠি আর স্থানীয় লোকজন অংশ নেন।

জানাযার আগে দুপুর ১টার দিকে রাজশাহীর পর্যটন মোটেল থেকে মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূত আইশাদ শান শাকির ও কমনওয়েলথের সেকেন্ড সেক্রেটারি ইসমাইল মুফিদ কবরস্থানে আসেন। এরপর দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের একটি গাড়িতে করে রাওদার মা, বাবা ও ভাইসহ ৮-৯ জন নিকটাত্মীয়কে আনা হয়।

জানাযার আগে কবরস্থানের ভেতর একটি ঘরে রাওদা আতিফকে শেষবারের মতো গোসল করানো হয়। দাফনের সময় রাওদা আতিফের মা আমিনাথ মুহারমিমাথ কবরস্থানের ভেতর জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে পরিবারের সদস্যরা তাকে নিয়ে চলে যান।

এর আগে রওজাতুস সালেহীন মসজিদের ভেতর শেষবারের মতো সহপাঠি ও পরিবারের সদস্যদের রাওদার লাশ দেখানো হয়। এ সময় রাওদার মা আমিনাথ মুহারমিমাথ মেয়ের সহপাঠিদের সঙ্গে কথা বলেন। তবে তারা কোনো গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেননি।

লাশ দাফনের সময় রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া বোয়ালিয়া, রাজপাড়া ও শাহমখদুম থানার ওসিসহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় রাওদার লাশের দাফন সম্পন্ন হয়।

গত বুধবার বেলা ১১টার দিকে রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হোস্টেল থেকে এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাওদার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে। রাওদার বাড়ি মালদ্বীপের মালেতে। তার বাবা মোহাম্মদ আতিফ পেশায় একজন চিকিৎসক।

২০১৬ সালের অক্টোবরে বিখ্যাত ‘ভোগ ইন্ডিয়া’ সাময়িকীর নবম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর সংখ্যায় এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মডেলদের নিয়ে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ‘বৈচিত্রের সৌন্দর্য উদযাপন’ (সেলিব্রটিং বিউটি ইন ডাইভার্সিটি) শিরোনামের ওই প্রতিবেদনে স্থান পেয়েছিলেন মালদ্বীপের নীলনয়না এই মডেল। উঠতি মডেল হিসেবে মাত্র ২০ বছর বয়সী রাওদার রয়েছে আন্তর্জাতিক খ্যাতি।

রাওদার লাশ উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছিল। এরপর ওই দিনই নগরীর শাহমখদুম থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করে ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। তবে লাশের ময়নাতদন্ত করা হবে কী না সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পরিবারের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছিল।

পরে বৃহস্পতিবার রাজশাহী আসেন মালদ্বীপের মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূতসহ পরিবারের সদস্যরা। এরপর তারা লাশের ময়নাতদন্তের সিদ্ধান্ত নেন। পরে শুক্রবার দুপুরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) মর্গে তার লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়। এর আগে লাশের ময়নাতদন্ত করতে রামেকের পক্ষ থেকে তিন সদস্যবিশিষ্ট টিম গঠন করা হয়।

ময়নাতদন্ত শেষে টিমের প্রধান ডা. মনসুর রহমান জানিয়েছিলেন, মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে ভিসেরা পরীক্ষা করা হচ্ছে। দু’একদিনের মধ্যে ময়নাতন্তের প্রতিবেদন পুলিশকে দিয়ে দেওয়া হবে। তখন মৃত্যুর কারণ নিশ্চিতভাবে বলা যাবে। এর আগে তিনি এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

এদিকে ময়নাতদন্তের পর লাশ দেশে নিয়ে যাওয়া হবে কী না তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় পড়েন পরিবারের সদস্যরা। ফলে ময়নাতদন্তের পরেও লাশ রামেক হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়। এরপর শনিবার সকালে তারা রাজশাহীতেই রাওদাকে দাফনের সিদ্ধান্ত নেন।

নগরীর শাহমখদুম থানার ওসি জিল্লুর রহমান জানিয়েছেন, রাওদার লাশ রাজশাহীতে দাফনের জন্য মালদ্বীপের দূতাবাস থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়। মন্ত্রণালয়ে সে আবেদন মঞ্জুর হয়। এরপর লাশ দাফনের জন্য পুলিশকে অনুমতি দেওয়া হয়।

এদিকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি পাওয়া মডেল রাওদা কেন আত্মহত্যা করেছেন তা এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। তবে পুলিশের একটি সূত্র বলছে, বাবা-মায়ের দাম্পত্য কলহের জের ধরে তিনি আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন। রাওদার বাবা থাকেন ভারতে। আর মা থাকেন মালদ্বীপে। তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ ছিল। এ জন্য লাশ দেশে নিয়ে যাওয়া নিয়েও তৈরি হয়েছিল জটিলতা।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত