আন্তর্জাতিক নারী দিবস আজ
প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০১৭, ০০:৩৫
আজ ৮ মার্চ শনিবার আন্তর্জাতিক নারী দিবস। বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতায় দিবসটি পালন করবে। জাতিসংঘ এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য করেছে, ‘পরিবর্তনের জন্য সাহসী হও’।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এক বাণীতে বলেছেন, বর্তমান সরকার নারী-পুরুষের সমতা আনয়নে নারী শিক্ষার বিস্তার, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা, নারীর ক্ষমতায়নসহ নারীর প্রতি সকল ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধে নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।
দেশ গড়ার সকল কাজে নারীরা তাই আজ পুরুষের সহযোদ্ধা হিসেবে অবদান রাখছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতি, বিচার, প্রশাসন, কূটনীতি, সশস্ত্র বাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সর্বক্ষেত্রে নারীর সফল ও গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা এখন যথেষ্ট দৃশ্যমান।
সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকে বিশ্বের সকল উন্নয়নের সমঅংশীদার হিসেবে পুরুষের পাশাপাশি নারীর অবদান অনস্বীকার্য উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশের নারীসমাজও একইভাবে বেগম রোকেয়ার দেখানো পথ ধরে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধসহ দেশ গঠনে অসামান্য ভূমিকা রেখে চলেছেন।
বাংলাদেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী -এ কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতীয় উন্নয়নের সর্বক্ষেত্রে সমঅংশীদারিত্ব নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশের সার্বিক চিত্র পরিবর্তন করা সম্ভব, যা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও সহায়ক হবে।
নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের সমন্বিত প্রয়াসে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়াও সম্ভব বলে তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সেই সাথে নারী পুরুষের সম্মিলিত প্রয়াস বাংলাদেশ ভিশন-২০২১ ও ভিশন-২০৪১ এর গন্তব্যে সফলভাবে পৌঁছতে পারবে বলে তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন।
বিশ্বের সমগ্র নারী জাতির জন্য ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’কে একটি অর্থবহ ও গৌরবের দিন হিসেবে আখ্যায়িত করে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, বর্তমান বিশ্বে নারীর অধিকার ও মর্যাদা লাভের ক্ষেত্রে দিবসটির তাৎপর্য ও গুরুত্ব অপরিসীম।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০১৭’ উদযাপিত হচ্ছে জেনে তিনি আনন্দিত এবং এ উপলক্ষে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল নারীকে তিনি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। সেই সাথে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০১৭’ সাফল্য কামনা করেছেন।
পৃথক আরেক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্মক্ষেত্রে নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করে জাতীয় উন্নয়নের মূল ধারায় নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আসুন আমরা সকলে মিলে কর্মক্ষেত্রে নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করে জাতীয় উন্নয়নের মূল ধারায় নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি।’
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নারী জাগরণের অগ্রদূতদের, যাঁদের আত্মত্যাগ ও নিষ্ঠায় নারীর সমঅধিকার এবং মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন সফল হয়েছে তাদের এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে সম্ভ্রম হারানো ২ লাখ মা-বোন যাঁদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি মহান স্বাধীনতা - প্রধানমন্ত্রী বাণীতে তাদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের সময়োপযোগী ও বলিষ্ঠ পদক্ষেপের ফলে রাজনীতি, বিচার বিভাগ, প্রশাসন, শিক্ষা, চিকিৎসা, সশস্ত্র বাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীসহ সর্বক্ষেত্রে নারীরা যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখছে।
জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশের নারী উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাণীতে বলেন, “আমরা জাতিসংঘের এমডিজি অ্যাওয়ার্ড, সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড, প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন, এজেন্ট অভ্ চেঞ্জ, শিক্ষায় লিঙ্গ সমতা আনার স্বীকৃতিস্বরূপ ইউনেস্কোর ‘শান্তি বৃক্ষ’সহ অসংখ্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছি। গ্লোবাল জেন্ডার গেপ রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায় সকল দেশের ওপরে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সাল থেকে বিগত আট বছরে নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি- ২০১১ প্রণয়ন করে এর বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। ‘বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ আইন-১৯২৯’ এর স্থলে ‘বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭’ পাশ করা হয়েছে। পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন ২০১০’ পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) বিধিমালা ২০১৩’ ডিএনএ আইন ২০১৪ এবং নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৩-২০২৫ প্রণয়ন করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাসে উন্নীত এবং মাতৃত্বকালীন ভাতা ও ল্যাকটেটিং মাদার ভাতা চালু করা হয়েছে । এছাড়াও বয়স্ক ভাতা, বিধবা-তালাকপ্রাপ্ত ও নির্যাতিত নারীদের ভাতা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধীদের ভাতা চালু করা হয়েছে। ভিজিএফ, ভিজিডি ও জিআর কার্যক্রম সম্প্রসারণের মাধ্যমেও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি জাতীয় ও স্থানীয় সরকার কাঠামোতে প্রত্যক্ষ ভোটে নারীর অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়গুলোতে জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধানে রাষ্ট্রীয় ও সমাজ জীবনের সকল কর্মকাণ্ডে নারীর সমান অধিকার নিশ্চিত করেছেন। এর ফলে সরকারি ও বেসরকারি সকল পেশায় নারীরা নিয়োগে সমান সুযোগ পাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, এই দিবসটি উদযাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মজুরিবৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা। সেই মিছিলে চলে সরকার লেঠেল বাহিনীর দমন-পীড়ন। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হলো। ক্লারা ছিলেন জার্মান রাজনীতিবিদ; জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির স্থপতিদের একজন। এরপর ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছিলেন। এ সম্মেলনে ক্লারা প্রতি বৎসর ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন। সিদ্ধান্ত হয়ঃ ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ থেকে নারীদের সম-অধিকার দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হবে। দিবসটি পালনে এগিয়ে আসে বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রীরা। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ পালিত হতে লাগল। বাংলাদেশেও ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতার লাভের পূর্ব থেকেই এই দিবসটি পালিত হতে শুরু করে। জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালে আন্তর্জাতিক নারীবর্ষে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন শুরু করে। এর দু'বছর পর ১৯৭৭ সালে জাতিসংঘ দিনটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
বাংলাদেশেও সমান ভাবগাম্ভীর্য নিয়ে পালিত হচ্ছে নারী দিবস। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে আয়োজন করা হয়েছে নানা অনুষ্ঠান। দিবসটি উপলক্ষে সংবাদপত্র বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। সরকারি টেলিভিশন ও বেতার এবং বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। অনলাইন পত্রিকাগুলো নারী সংক্রান্ত বিশেষ সংবাদ প্রকাশ করেছে।