তনুর পরিবারকে ক্যান্টনমেন্টের নিষেধাজ্ঞা!

প্রকাশ : ১৩ জুন ২০১৬, ১২:৩৭

জাগরণীয়া ডেস্ক

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী এবং নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুর দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেছেন, ‘ডাক্তাররা আমার মেয়ে সম্পর্কে এসব মিথ্যা কথা বলছে। কেননা আমার মায়ে অত্যন্ত ধার্মিক ছিল। আমার সাথে সব কিছু শেয়ার করতো। আমি বারবার এটাও বলেছি আমার মেয়ের শরীরে এত আঘাত ছিল, নাকে, মাথার পেছনে থেঁতলানো, চুল কেটে নেওয়া হয়েছে। এরপরও কেন তাঁরা মৃত্যুর কারণ খুঁজে পাচ্ছে না!’

রবিবার (১২ জুন) সকালে প্রতিবেদনটি সিআইডির কাছে হস্তান্তরের পর কুমিল্লা ময়নামতি সেনানিবাসের বাইরে সাংবাদিকদের সামনে এসব কথা বলেন তিনি।

এদিকে তনুর বাবা ইয়ার হোসেনকে মিডিয়ার সাথে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, সেনানিবাস থেকে ‘অজানা’ কারণে তনুর পরিবারের উপর এক অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন সময় জিজ্ঞাসাবাদের নামে হয়রানির অভিযোগও পাওয়া গেছে।

এদিকে তনুর হত্যার ৭৪ দিন পর দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন সিআইডির কাছে হস্তান্তর করে ময়নাতদন্তকারী ফরেনসিক বোর্ডের প্রধান কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কামদা প্রসাদ সাহা বলেন, মৃত্যুর আগে তনুর ‘সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্সের’ আলামত পাওয়া গেছে। তবে এবার সম্পূর্ণভাবেই তনুকে ধর্ষণের বিষয়টি এড়িয়ে গেলেন ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কামদা প্রসাদ সাহা।

ক্যান্টনমেন্ট এর ভেতর এমন চাঞ্চল্যকল ঘৃণ্যতম হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে এড়িয়ে যান তিনি। তবে পূর্বে তনুর মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে সার্জেন্ট জাহিদ ও সিপাহী জাহিদ এর বিষয়ে নিয়ে প্রশ্ন করায় ডা. কামদা প্রসাদ সাহা সরাসরি এড়িয়ে গিয়ে ভিন্নভাবে সাংবাদিকদের বলেন, ‘পঁচা লাশ পরীক্ষা করে শরীরে আঘাত চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। আর হত্যার কারণ জানতে আরো পুলিশি তদন্ত প্রয়োজন।’

এর আগে গত ১০ মে কুমিল্লায় সিআইডি কার্যালয়ের সামনে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে তনুর মা-বাবা অভিযোগ করে বলেছিলেন, ‘সার্জেন্ট জাহিদ ও সিপাহি জাহিদের বাসায় তনু টিউশনি করতো। গত ১৭ মার্চ তনু ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারের সদস্যদের সঙ্গে শ্রীমঙ্গল যান। সেখান থেকে ফেরার পর ২০ মার্চ বিকেলে টিউশনির কথা বলে তনুকে সালমা আক্তার নামের এক মেয়ের মাধ্যমে ডেকে নেন সিপাহি জাহিদ। সেদিন রাতে মেয়ের লাশ পাই। সে রাতে রাস্তা ৩ ঘণ্টা বন্ধ রাখা হয়েছিল। কেন রাস্তা বন্ধ রাখা হয়েছিল, আমার মেয়েকে মেরে জঙ্গলে ফেলছে। বাসায় মারছে। সার্জেন্ট জাহিদ আর জাহিদের বউ জানে সব।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সেনা কর্মকর্তা সাহস২৪-কে জানান, সার্জেন্ট জাহিদকে ঘটনার পর থেকে দেখা যায়নি। তিনি কোথায় আছেন কিংবা তাঁর পরিবার কোথায় সে বিষয়েও কিছুই জানাতে চাননি কোনো কর্মকর্তা। কেন এমন লুকোচুরি তা নিয়ে জেগেছে প্রশ্ন। 

এ অভিযোগকৃতদের কেন সামনে আনা হচ্ছে না বা কি কারণে তনু হত্যা তদন্তে এমন ধোঁয়াশা এ বিষয়ে সাহস২৪-কে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এছাড়া সার্জেন্ট জাহিদ ও সিপাহি জাহিদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে ক্যান্টনমেন্ট থেকে তা দেওয়া হয়নি। 

এর ফলে তনু হত্যা নিয়ে ক্রমশঃ সন্দেহের ধোঁয়াশা বাড়ছে। তদন্তের ধীরগতির ফলে কাকে কিংবা কাদের সুবিধাপ্রদান হচ্ছে এবং ক্যান্টনমেন্ট কতোটা সুরক্ষিত এসব নিয়ে বহু প্রশ্নের জন্ম নিয়েছে জনমনে।

উল্লেখ্য, গত ২০ মার্চ কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের ভেতরেই নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় সোহাগী জাহান তনুকে। ওই রাতে ময়নামতি সেনানিবাসের ভেতর একটি ঝোপ থেকে তাঁর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপর দুইবার হস্তান্তর করে তদন্তভার এখন সিআইডির কাছে। আর দুইবার ময়নাতদন্তের পর এখনও পাওয়া যায়নি ধর্ষণের আলামত ও  মৃত্যুর সুনিশ্চিত কারণ। তবে সিআইডির করা ডিএনএ টেস্টে ধর্ষণের আলামত পাওয়ার কথা স্বীকার করেছিলেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার ড. নাজমুল করিম খান। তিন জন পুরুষের বীর্য পাওয়ার কথা জানান তিনি।

ঘটনার এতো দিন পরও তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি তনু হত্যার তদন্তে এখনও কুলকিনারা করতে না পারায় হতাশা প্রকাশ করেছেন দেশব্যাপী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত