নওগাঁয় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে হাবিবা
প্রকাশ : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৯:২১
নওগাঁয় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে স্বামীর পরিবারের বর্বর নির্যাতনের শিকার হাবিবা খাতুন নামে এক গৃহবধূ। ভারি আঘাতে তার মাথা ও পিঠে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। খাবার দেওয়া হচ্ছে নাক দিয়ে। শরীরের কোন অঙ্গই কাজ করছে না তার। কথাও বলতে পারছেন না হাবিবা। শুধু বিছানায় শুয়ে মাঝে মধ্যে একটু করে চেয়ে আশপাশের মানুষ দেখছে।
যৌতুকের দাবিতে বিয়ের মাত্র দুই মাসের মাথায় যৌতুকের জন্য অমানবিক নির্যাতন করেছে হাবিবার স্বামী ও শাশুড়ি। বর্তমানে চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে না পারায় অচেতন মেয়েকে নিয়ে অমানবিক জীবন কাটাচ্ছে পরিবারটি। এ বিষয়ে হাবিবার বাবা হাফিজুর রহমান বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। মামলার পর হাবিবার স্বামী ও শ্বশুরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মামলার এজাহারে জানা যায়, গত ২৩ আগষ্ট হাবিবা খাতুনের সাথে বিয়ে হয় একই মহল্লার শামসুজ্জোহা খান বিদ্যুতের ছেলে তামভি হাসান অভির। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই বাবার বাড়ি থেকে ২ লাখ টাকা নিয়ে আসতে বলা হয় হাবিবাকে। কিন্তু হাবিবার গৃহশিক্ষক বাবা হাফিজুর রহমানের পক্ষে তা দেওয়া কোনভাবেই সম্ভব ছিল না।
এক পর্যায়ে গত ৩০ নভেম্বর বিকেলে হাবিবার বাবার কাছে খবর পাঠানো হয় তার মেয়ে গলায় দড়ি দিয়ে মারা গেছে। কিন্তু ছেলের পরিবার ওইদিন হাবিবাকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক জীবিত আছে জানিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে। রাজশাহী মেডিকেলে ভর্তি করানোর মাত্র ৪ দিন পর অচেতন হাবিবাকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে পালিয়ে যায় তারা।
মেয়েকে দেখতে হাবিবার পরিবার রাজশাহীতে গেলে হাসপাতালের নির্ধারিত ঠিকানায় তাদের মেয়েকে খুঁজে না পেয়ে নওগাঁর স্থানীয় কমিশনার মজনু হোসেন ও ছেলের বাবা শামসুজ্জোহার শরনাপন্ন হন। তাদের সহযোগিতায় প্রায় ছয় দিন পর রাজশাহীতে তামভির এক আত্মীয়ের বাসায় অচেতন হাবিবাকে পাওয়া যায়। এরপর হাফিজুর রহমান তার মেয়েকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখে। দীর্ঘ ১৬ দিন লাইফ সাপোর্টে রাখার পর তাকে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তির পরামর্শ দেওয়া হয়। সেখানে তিন দিন থাকার পর বাড়ি নিয়ে যেতে বলেন চিকিৎসকরা।
হাবিবার বাবা হাফিজুর রহমান জানান, মেয়েকে বাড়ি নিয়ে আসার পর স্থানীয় নিউরোলোজিষ্ট ডা.মিলন বাদশার কাছে চিকিৎসা শুরু করেন তারা। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের মেয়ের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। খাওয়াতে হয় নাক দিয়ে। হাত পায়ে কোন শক্তি নেই। কথাও বলতে পারে না।
তিনি বলেন, মেয়ের এমন অবস্থার জন্য যারা দায়ী তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান তিনি।
হাবিবার মা সফুরা আখতার জানান, ৩০ নভেম্বর মেয়ের খবর পাওয়া মাত্রই চিকিৎসার কথা বলছিলেন তারা। কিন্তু রাজশাহীতে নেয়ার পর থেকেই মোবাইল ফোনে ছেলের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয় তাদের মেয়ে সুস্থ আছে। কিন্তু মিথ্যা সান্তনা দিয়ে দিনের পর দিন তাদের মেয়েকে চিকিৎসা না করিয়ে মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন তারা।
এ বিষয়ে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল হাসপাতালের সহকারী রেজিষ্টার ডা.মিলন বাদশা জানান, শরীরের বেশ কিছু ফাংশন নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারনে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না। এ অবস্থা থেকে আদৌ তাকে বাঁচানো যাবে কি না তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।
নওগাঁ সদর মডেল থানার ওসি তরিকুল ইসলাম জানান, মামলা হওয়া মাত্রই অভিযুক্ত তামভি হাসান ও তার বাবা শামসুজ্জোহা খানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর আরেক আসামি ছেলের মা সৈয়দা তাহমিনাতুলকে গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।