শেকলে বাধা অন্তঃসত্ত্বা মা!
প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০১৭, ১৬:৩৫
২ সন্তানের জননী অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ রুবি বেগম। বিয়ের শুরুর দিন থেকেই মানসিক নিপীড়ন এবং ২ বছর পর থেকে চরম শারীরীক নির্যাতনের মধ্যে শ্বশুর বাড়িতে কাটিয়েছে দীর্ঘ ৮টি বছর। বিয়ের প্রথম দিনই জানতে পারেন স্বামীর প্রথম স্ত্রীর কথা ও মেয়ের কথা। ৮ বছর মুখ বুজে অসহনীয় নির্যাতন সহ্য করে আসা এই গৃহবধূকে শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাড়িয়ে দিলে সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। বর্তমানে ঠাঁই নিজ হয়েছে মায়ের কাছে। শেকলে বেধে রাখতে হচ্ছে সারাক্ষণ।
জানা গেছে, রুবি বেগম পিরোজপুর ইন্দুরকানী উপজেলার বালিপাড়া গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের মেয়ে। ২০০৬ সালে পাশের মোড়েলগঞ্জ উপজেলার চর হোগলা বুনিয়া গ্রামের হোসেন আলীর ছেলে জয়নাল উদ্দিনের সাথে পারিবারিকভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন রুবি। দুই বছর যেতে না যেতে রুবির কোলজুড়ে আসে একটি ছেলে সন্তান। এর ঠিক দুই বছর পর আরেকটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। তবে রুবিকে বিয়ে করার আগে জয়নালের আরো এক স্ত্রী ও মেয়ে ছিল। সে কথা গোপন করে রুবিকে বিয়ে করে জয়নাল।
শ্বশুর বাড়িতে ২ বছর পর থেকেই নানা অজুহাতে রুবির উপর অত্যাচার নির্যাতন শুরু করে স্বামী, শ্বাশুড়ি, ননদ ও জয়নালের প্রথম স্ত্রী। শ্বশুর বাড়ি থেকে বিভিন্ন সময় টাকা পয়সা এনে দেয়ার জন্য জয়নাল চাপ দেয় রুবির উপর। নিরুপায় হয়ে রুবি ভাইদের কাছ থেকে মাঝে মধ্যে কিছু টাকা এনে দিলেও তাতে মন ভরেনি জয়নালের। রুবিকে তাড়ানোর জন্য জয়নালের পরিবারের অত্যাচারের মাত্রা দিনদিন বাড়তে থাকে। এভাবে কেটে যায় ৮টি বছর।
অত্যাচার নির্যাতনে প্রায় ৭ মাস আগে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন রুবি। সারাদিন সে আবোল-তাবোল প্রলাপ বকে এবং দিগ্বিদিক ছুটোছুটি করতে থাকে। এ অবস্থায় রুবি ছয় মাস পূর্বে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাকে পাগল বলে তাড়িয়ে দেয়। রুবি বর্তমানে তার মায়ের আশ্রয় রয়েছেন। তার বৃদ্ধ মা হালিমা খাতুন মানসিক ভারসাম্যহীন এ মেয়েকে নিয়ে পড়েছেন চরম বিপদে। রুবিকে সারাক্ষণ শেকলে বেধে রাখতে হচ্ছে। প্রায় ৩ মাস যাবৎ হাতে শেকল বাধা অবস্থায় দিন কাটছে তার। রুবির উন্নত চিকিৎসার জন্য তার মায়ের আর্থিক সংগতি না থাকায় দিনদিন তার অবস্থা আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে।
রুবির প্রথম সন্তানের বয়স এখন ৭ বছর এবং দ্বিতীয় সন্তানের বয়স ৩ বছর। বড় সন্তান বর্তমানে তার বাবার কাছে রয়েছে। সন্তানরা মায়ের কাছে গেলে হাতে শেকল পড়া অবস্থায় তাদের দিকে ফেল ফেল করে তাকিয়ে থাকে রুবি।
এ অবস্থায় রুবির মা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে নালিশ দিলে পাগল রুবিকে নিয়ে সংসার করবে না বলে জানায় জয়নাল। এজন্য জয়নাল স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে ২৫ হাজার টাকা দেয় রুবিকে তালাকের মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসা করানোর জন্য। এতে রাজি হননি রুবির মা। বিষয়টি নিয়ে এর আগেও স্থানীয়ভাবে সালিশ বৈঠক বসলেও তাতে কোনো কাজ হয়নি।
এ ব্যাপারে রুবির মা হালিমা খাতুন বলেন, আমার মেয়েটাকে ওরা বছরের পর বছর ধরে অত্যাচার করে পাগল বানিয়ে ঘর থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। দুইটা সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়েও ওদের কোনো মায়া হয় না। এমনিতেই মেয়েটি এখন পাগল তার উপর আবার ছয় মাসের গর্ভবতী। মেয়েটিকে নিয়ে এখন আমি কোথায় যাব কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।
রুবির ভাই রুবেল হাচান জানান, জয়নাল ও তার মা লোভী প্রকৃতির। শ্বশুর বাড়ি থেকে বিভিন্ন সময় টাকা পয়সা এনে দেওয়ার জন্য আমার বোনের উপর নির্যাতন চালাতো। আর এ জন্যই এখন তার এ অবস্থা।
এ ব্যাপারে রুবির স্বামী জয়নালের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
৩নং বালিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন বলেন, উভয় পক্ষই এর আগে আমার কাছে এসেছিল। আমি উভয় পক্ষকে নিয়েই বিষয়টির একটা মীমাংসার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।