প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর স্থগিতের কারণ
প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০১৬, ১২:৪৭
প্রায় দুই মাসের প্রস্তুতির পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শেষ পর্যায়ে এসে তার ভারত সফর স্থগিত করেছেন।
এবিষেয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যস্ততার কারণে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচি নির্ধারণে সমস্যা, অনেক জটিল ইস্যুর প্রস্তুতি শেষ না হওয়া এবং তিস্তা চুক্তির বিষয়ে অগ্রগতি না হওয়াই এ সফর স্থগিতের কারণ।আগামী ফেব্রুয়ারি নাগাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর হতে পারে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর তিন দফা পেছাল। প্রথমে ৩ ও ৪ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী দিল্লি যাবেন বলে কথা ছিল। তারপর তা পরিবর্তন করে ১০ ও ১১ ডিসেম্বর ঠিক হয়। সর্বশেষ ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বর ভারত সফরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাও স্থগিত হয়।
তবে স্থগিত হওয়ার কথা বাংলাদেশ ও ভারত কেউই আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি।
শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, "প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের কর্মসূচি ঢাকা ও দিল্লি থেকে একযোগে ঘোষণা করার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই তা বন্ধ হয়ে গেছে। যেহেতু সফর আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণাই হয়নি, তাই তা স্থগিত হওয়ার কথাও ঘোষণা করা হয়নি"।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, "দুই দেশের মধ্যে কোনো মত পার্থক্যের কারণে সফর স্থগিত করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কর্মসূচিগুলো মেলানো সম্ভব হচ্ছিল না। ১৭ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের বিজয় দিবসের কর্মসূচি আছে। এছাড়া ১৮, ১৯ ও ২০ ডিসেম্বর ভারতে আরও তিনজন শীর্ষ নেতা সফর করবেন। তারা হলেন- ইন্দোনেশিয়া, কাজাখস্তান ও কিরঘিস্তানের শীর্ষ নেতা। ফলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ব্যস্ততা থাকবে তাদের নিয়েও। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হল যে, শেখ হাসিনার সফর আপাতত পিছিয়ে দেওয়া হোক। এতে দিল্লিও আপত্তি করেনি। এখন ফেব্রুয়ারিতে এ সফর করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এতে কোনো মতপার্থক্য নেই"।
এদিকে জানুয়ারিতে ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেডে দেশটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান অতিথি করার আমন্ত্রণ জানাতে পারে বলে গণমাধ্যমের খবরকে উড়িয়ে দিয়েছেন ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে এবারের অতিথি ইউরোপীয় একজন যুবরাজ। এটা আগেই নির্ধারিত হয়ে আছে।
গত অক্টোবরের মাঝামাঝি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের গোয়ায় ব্রিকস-বিমসটেক সম্মেলনে যোগদানের সময়েই প্রথম জানা যায়, ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তিনি দ্বিপক্ষীয় সফরে দিল্লি যেতে পারেন। এরই মধ্যে সফরের প্রস্তুতির লক্ষ্যে পররাষ্ট্র সচিব মোঃশহীদুল হক দিল্লি যান। সেখানে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুব্রামনিয়াম জয়শংকরের সঙ্গে বৈঠক করে সফরের নতুন দিনক্ষণ নির্ধারণ করেন ১৮-১৯ ডিসেম্বর। প্রস্তুতির শেষ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরের সারসংক্ষেপ অনুমোদন করেন। এর একদিন পরই সফরটি স্থগিতের জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন তিনি। এ সিদ্ধান্ত ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
অপরদিকে শেখ হাসিনার সফরকালে দুই দেশের মধ্যে দুই ডজনের বেশি চুক্তি সই করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল, যেগুলো প্রধানত ভারতের প্রস্তাবিত। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পার্ররিকর বাংলাদেশ সফরকালে দুই দেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে একটি চুক্তির প্রস্তাব করেন। এর খসড়া বাংলাদেশ পর্যালোচনা করে দেখছে, কোনো সিদ্ধান্ত এখনও নেয়নি। আর ভারত শেখ হাসিনার সফরকালেই চুক্তিটি সই করতে চায়। এছাড়া চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহারে ভারতের প্রস্তাবিত চুক্তিও চূড়ান্ত হয়নি। এর বাইরে আরও অনেক চুক্তির বিষয়ে তড়িঘড়ি করতে হচ্ছিল।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভারত সফরে যাওয়ার দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসার পরিপ্রেক্ষিতে তিস্তা চুক্তির কোনো অগ্রগতি আছে কিনা, সে ব্যাপারে পররাষ্ট্র ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কাছে খোঁজ নেন। তারা এ ব্যাপারে অগ্রগতি নেই বলে জানান। তারা আরও জানান, প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে তিস্তা চুক্তি সই হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
ঢাকায় সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর পিছিয়ে যাওয়ায় তিস্তা চুক্তি সম্পাদনের বিষয়ে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারি নাগাদ প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে যেতে পারেন। কেননা এ সময়ে উভয় প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচিতে যথেষ্ট ফাঁকা আছে।’