শেষ হলো নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ক কোর্স ২০১৬
প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০১৬, ০০:৩৯
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে ১২ নভেম্বর, ২০১৬; শনিবার বিকাল ৩:৩০ মিনিটে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সুফিয়া কামাল ভবনের আনোয়ারা বেগম, মুনিরা খান মিলনায়তনে “জেন্ডার, নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন বিষয়ক সার্টিফিকেট কোর্স, ২০১৬ সমাপনী ও সনদপত্র প্রদান” অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আ.আ.ম.স. আরেফিন। বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক তানিয়া হক, আইনজীবী অ্যাড. হিরন্ময় হালদার। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পাঠাগার সম্পাদক রীনা আহমেদ। ৮টি মডিউলে ৩ মাসের এই কোর্সটি ৪২ টি ক্লাশের মাধ্যমে শেষ হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আ.আ.ম.স. আরেফিন সিদ্দিক বলেন, “মহিলা পরিষদ নিয়মিতভাবে এই প্রশিক্ষণ পরিচালনা করে যাচ্ছে যা সত্যিই প্রশংসনীয়। নারীরা নিজেরা গুছিয়ে যে কোন কাজ করে তারই প্রতিফলন দেখছি আমি এই সংগঠনে”।
তিনি বলেন, “নারীর অগ্রযাত্রা যেই সংগঠনের লক্ষ্য সেখানে আমরা সম্পৃক্ত থাকতে চাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ে ছাত্র-ছাত্রীর অনুপাত প্রায় কাছাকাছি। কোন কোন অনুষদে ছাত্র-ছাত্রী প্রায় সমান। এবছর ডিনস অ্যওয়ার্ড পেয়েছেন ১০০ শতাংশ ছাত্রী, জীব বিজ্ঞান অনুষদে ৮০ শতাংশ ছাত্রী। বহুদিন ধরে মেয়েরা পিছিয়ে ছিল। তাই মেয়েদের এগিয়ে আসতে হবে”।
তিনি আরো বলেন, “বর্তমানে প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়েরা সাইকেলে চড়ে স্কুলে যাচ্ছে। একটি সমাজ এগিয়ে যাওয়ার জন্য নারীর ক্ষমতায়ন যে কত গুরুত্বপূর্ণ তার প্রতিফলন আমরা উন্নত দেশগুলোতে দেখি”।
তিনি আরো বলেন, “মানুষের নীতি নৈতিকতা আজ নিম্নমুখী। কেন স্বাধীন দেশের নাগরিক মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তির সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে তাও আমাদের দেখতে হবে”।
সবশেষে তিনি বলেন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে সবাইকে দেশকে ভালবাসতে হবে তবেই দেশের উন্নতি সম্ভব।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম বলেন, “বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ পাঁচ বছর ধরে এই কোর্সটি পরিচালনা করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের বহুমাত্রিক কাজের ছোট একটি নমুনা এই কাজ”।
তিনি বলেন, “পাঁচ দশকের কাজের তিনটি ভাগ করলে একেক দশকের কাজে আমরা একেক রকমের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। একে আরো অধিকতর ফলপ্রসূ করত হলে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। আজ আমরা অস্তিত্বের সংকট, আত্মপরিচয়ের সংকটে ভুগছি। দীর্ঘ কয়েক শতকের আন্দোলন করে দেখতে পাচ্ছি নারী আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন হয়েছে। নাগরিক হিসেবে নারীকে দুইমুখী দায়িত্ব পালন করতে হয়। ঐতিহাসিক ভূমিকার ভিতর দিয়েই নারীকে এই ভূমিকা পালন করতে হচ্ছে”।
তিনি বলেন, “দুটি বাংলাদেশ দেখি। আলো এবং অন্ধকার। নারী এগিয়ে যাচ্ছে আবার সহিংসতার শিকার হচ্ছে। এই সহিংসতা থেকে মুক্তি দিতে আমাদের সকলকে একসাথে কাজ করতে হবে। নারী আন্দোলন শুধু নারী পুরুষের সমতার জন্য নয় সমাজের সকল অসমতা দূর করে একটি মানবিক, অসাম্প্রদায়িক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। পিতৃতন্ত্র সমাজের সকল পর্যায়ে বিদ্যামান। কিভাবে এই পিতৃন্ত্রকে আমরা চিহ্নিত করে কাজ করবো তাও নারী আন্দোলন দেখে। নারী আন্দোলনের জন্য চ্যালেঞ্জ হচ্ছে তারা রাজনৈতিক শক্তির মত বড় একটি শক্তি হয়ে উঠতে পারে নাই। তার ফলে সামাজিক আন্দোলনে নারী আন্দোলনের বিষয়টি যেভাবে বিবেচনায় নেয়া হতো তা ক্ষীণ হয়ে এসেছে। মানবিক মূল্যবোধ ও বিবেকের সমাজ গড়ে তুলতে হলে আমাদের শক্তি আমাদের মতাদর্শ”।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পদক সীমা মোসলেম বলেন, “বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ চার দশকের অধিক সময় ধরে নারীর অধিকার আদায়ের লক্ষে কাজ করছে যার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নারীর মানবাধিকার রক্ষা। মহিলা পরিষদ নারীর ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে তার সৃষ্টিলগ্ন থেকেই।
তিনি আরও বলেন, “আজকে বাংলাদেশের যে চিত্র আমরা দেখি সেখানে একদিকে দেখি নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ আবার অন্যদিকে দেখি নারী নানা ধরনের সহিংসতার শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ মনে করে নারীর জীবনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে নারীর প্রতি সহিংসতা। তাই নারী অধিকার আদায়ের পাশাপাশি বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আইন সংস্কারের কাজ, আইন প্রণয়ন এবং নির্মূলের কাজ করছে এবং সরকারের সাথে যৌথভাবে কাজ করছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ মনে করে রাষ্ট্রের জন্য আইন প্রণয়ন করতে হলে প্রয়োজন জেন্ডার সংবেদনশীল সমাজ প্রতিষ্ঠা। মহিলা পরিষদ কর্মী ও সংগঠকদের পাশাপাশি পেশজীবীদের জন্যও বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষক কোর্স করিয়ে থাকে যার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নারী আন্দোলনের বৈশ্বিক রুপের সাথে মানুষকে পরিচিত করা”।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক ড. তানিয়া হক, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাড. হিরন্ময় হালদার শিশির সহ অন্য বক্তারা বলেন, মহিলা পরিষদের আন্দোলনের ফসল এই বিভাগ। যেখানে মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সমাজে নারী-পুরুষ সমতাপূর্ণ একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। নারী আন্দোলন এবং এই বিভাগ একসাথে কাজ করলে আমরা নারী-পুরুষের জন্য পাবো এক সমতাপূর্ণ পৃথিবী। তারা আরো বলেন বর্তমানে আমরা এমন স্থানে এসে পড়েছি যেই সমাজে নানা ধরনের জেন্ডার বৈষম্য বিরাজমান। বিরাজমান এই পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে হলে আর কোথায় কোথায় আমাদের কাজ করতে হবে এই বিষয়গুলো নিয়ে নারী আন্দোলনকে আরো ভাবতে হবে বলে তারা উল্লেখ করেন।
৬ষ্ঠ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের মোকাদ্দেসা কাদের করবী, ফরিদা ইয়াসমিন- পুলিশ সুপার, বাংলাদেশ পুলিশ ঢাকা। তারা কয়েকটি কোর্সের কথা উল্লেখ করে বলেন, এই কোর্সগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সকলেরই উচিত এই ধরনের কোর্স করা।