মিতু থেকে রিশা, খাদিজা থেকে পূজা
প্রকাশ : ২৯ অক্টোবর ২০১৬, ১২:৩১
পথেঘাটে প্রকাশ্যে স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের ওপর ছুরি-চাপাতি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে বখাটেরা। মিতু থেকে রিশা, খাদিজা থেকে পূজা— তালিকাটা দিন দিন বেড়েই চলেছে। একেকটা ঘটনা ঘটে, দেশজুড়ে তোলপাড় হয়; আসামি ধরা পড়ে, দায়ও স্বীকার করে—তবু চার্জশিট দিতে দেরি করে পুলিশ। বিচারে শুরু হয় দীর্ঘসূত্রতা। দ্রুত বিচার না হওয়াতেই আরও ভয়ংকর হয়ে উঠছে বখাটেরা। এ ক্ষেত্রে বিশ্লেষকরা বলছেন, নারীকে সম্মানের দৃষ্টিতে দেখার শিক্ষা শুরু করতে হবে পরিবার থেকেই।
মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায় স্কুলে যাওয়ার পথে নবম শ্রেণির ছাত্রী নিতু মণ্ডলকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে বখাটে যুবক মিলন মণ্ডল। জনতা হাতেনাতে ধরে তাকে পুলিশে দেয়। হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছে সে। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের ৪০ দিন পার হলেও এখনও এ মামলায় চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেয়নি পুলিশ।
পুলিশের তথ্যসূত্র, হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়ায় চার্জশিট দেওয়া যাচ্ছে না। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দিতে দেরি হচ্ছে কেন—এ প্রশ্নের জবাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দিতে সময় লাগে। তাই এখনও দেওয়া হয়নি।
রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশা হত্যাকাণ্ডের পর বখাটে ওবায়দুল হক ধরা পড়েছে। আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে সেও হত্যার দায় স্বীকার করেছে। এ মামলায় সে-ই একমাত্র আসামি। কিন্তু দুই মাস পার হলেও এখনও পুলিশ চার্জশিট দেয়নি।
সিলেটে কলেজছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসের ওপর হামলার পর বখাটে বদরুল আলমও ধরা পড়েছে। আদালতে দায়ও স্বীকার করে নিয়েছে। কিন্তু ২৫ দিনেও এ মামলার চার্জশিট দেয়নি পুলিশ।
স্কুল-কলেজছাত্রীদের ওপর বখাটেদের নৃশংসতার সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর বেশির ভাগের ক্ষেত্রেই আসামি শনাক্ত হয়েছে, তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তারা আদালতের কাছে জবানবন্দিতে অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছে, সাক্ষ্য-প্রমাণও আছে। তবু চার্জশিট দিচ্ছে না পুলিশ। নানা অজুহাত খাড়া করছে তারা। এই দীর্ঘসূত্রতার কারণে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো সুষ্ঠু বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় ভুগছে। নিরাপত্তাহীনতা ঘিরে ধরেছে তাদের। কারণ অনেক ক্ষেত্রে আসামিদের স্বজনরা ভুক্তভোগীদের হয় মীমাংসার জন্য চাপ দিচ্ছে, নয়তো মামলা তুলে নিতে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে।
রিশা, আফসানা হত্যা মামলায় চার্জশিট হয়নি : প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় গত ২৪ আগস্ট (বুধবার) রিশাকে ছুরিকাঘাত করে ওবায়দুল। ২৮ আগস্ট ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সে। হামলার ঘটনায় ২৪ আগস্টই (রবিবার) মামলা করেছিলেন রিশার মা তানিয়া হোসেন। পরে সেটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।
রিশা রাজধানীর সিদ্দিকবাজার এলাকার রমজান হোসেনের মেয়ে। ওবায়দুলের বাড়ি দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের মীরাটঙ্গী গ্রামে। রাজধানীর ইস্টার্ন মল্লিকা শপিং মলের বৈশাখী টেইলার্সে দর্জির কাজ করত সে। দীর্ঘদিন ধরে সে রিশাকে উত্ত্যক্ত করেছিলো।
রিশার ওপর হামলা ও তার মৃত্যুর ঘটনা দেশজুড়ে আলোড়ন তোলে। ওবায়দুলকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। ৩১ আগস্ট (বুধবার) নীলফামারী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। স্থানীয় লোকজন তাকে ধরিয়ে দেয়।
১ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) আদালতের মাধ্যমে ওবায়দুলকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয় রমনা থানার পুলিশ। ৫ সেপ্টেম্বর (সোমবার) রিশাকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেয় সে। ওবায়দুল যে দোকান থেকে ছুরি কিনেছিল সেই দোকানি মোঃ হোসেনও ওই দিন সাক্ষী হিসেবে এ মামলায় জবানবন্দি দেন। পরে সেই ছুরিটিও উদ্ধার করে পুলিশ। কিন্তু সব সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া সত্ত্বেও এখনো চার্জশিট দেয়নি পুলিশ। এ নিয়ে হতাশ রিশার বাবা রমজান হোসেন।
তারা বলেন, ‘এ কারণেই আমাদের দেশে মানুষ তদন্ত আর বিচারে আস্থা রাখতে পারে না। কী বিচার পাব জানি না। আমাদের মেয়েটাকে এভাবে মেরে ফেলল...। আমরা এর কঠিন বিচার দেখতে চাই।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার পরিদর্শক আলী হোসেন বলেন, রিশা হত্যা মামলাটি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত চলছে। তদন্ত এখন প্রায় শেষ। শিগগিরই ওবায়দুলকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করা হবে। মামলায় অন্য কারো সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় একমাত্র ওবায়দুলকেই আসামি করা হচ্ছে।
আফসানার মৃত্যু, রবিন এখনও অধরা : মিরপুরের সাইক ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজির স্থাপত্যবিদ্যার শিক্ষার্থী ও ছাত্র ইউনিয়ন কর্মী আফসানা ফেরদৌসের মৃত্যুর ঘটনায় প্রায় তিন মাস পার হলেও এখনও অভিযুক্ত ছাত্রলীগ হাবিবুর রহমান রবিনকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। রবিন তেজগাঁও সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। এখন পর্যন্ত চার্জশিটও দেয়নি পুলিশ।
আফসানার বাড়ি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কানিকশালগাঁওয়ে। রাজধানীর মানিকদী এলাকার একটি বাসায় থেকে তিনি লেখাপড়া করতেন। গত ১৩ আগস্ট (শনিবার) দুই যুবক সিএনজিতে করে আফসানাকে মিরপুরের আল-হেলাল হাসপাতালে নিয়ে যায়। তাঁকে জরুরি বিভাগে রেখেই পালিয়ে যায় তারা।
কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, হাসপাতালে আনার আগেই আফসানার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় পরে কাফরুল থানার পুলিশ অপমৃত্যু মামলা করে। আফসানার মৃত্যুর ঘটনায় রবিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন স্বজনরা। বিচার দাবিতে সহপাঠী ও বন্ধুদের আন্দোলনে সারাদেশে তোলপাড় শুরু হয়।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ আফসানার ময়নাতদন্তের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন কাফরুল থানায় পাঠিয়েছে। তাতে বলা হয়, আফসানা আত্মহত্যা করেছেন। গত ১১ অক্টোবর (মঙ্গলবার) আফসানাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা ও লাশ গুমের চেষ্টার অভিযোগে তাঁর (আফসানা) ভাই ফজলে রাব্বি কাফরুল থানায় মামলা করেন। স্বজনদের অভিযোগ, বখাটে রবিন প্রেমের সম্পর্ক গড়ে আফসানার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। গোপনে বিয়ে করে আফসানার কাছে সে ২০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে এবং মৃত্যুর পর তাঁর লাশ গুম করে পালানোর চেষ্টা করে।
পুলিশ জানায়, গত ২৫ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) মিরপুর থেকে রবিনের বন্ধু মুসাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর কাজীপাড়ার রবিনদের বাসা থেকে তার বাবা আব্দুল হাইকে এবং পরে রবিনের বন্ধু আশিকুর ও সিফাতকে গ্রেপ্তার করে। রবিনের তিন বন্ধুকে ৫৪ ধারার মামলায় তিন দিনের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। আদালতের নির্দেশে আব্দুল হাইকে জেলগেটে তিন দিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
কাফরুল থানার ওসি শিকদার শামীম হোসেন বলেন, রবিনকে গ্রেপ্তারের জন্য ধারাবাহিকভাবে অভিযান চালানো হচ্ছে।
অনিশ্চয়তায় মীম-জীম (যমজ বোন): কবে আবার কলেজে যেতে পারব জানি না। প্রতিবাদ করেছি বলে বখাটেরা আমাদের এ হাল করেছে। এই বখাটেদের কঠিন বিচার হওয়া দরকার। শাস্তি না হলে তারা আরও সাহস পেয়ে যাবে। বিছানায় শুয়ে যন্ত্রণায় কাতর যমজ দুই বোন সানিয়া হাবীব মীম (১৭) ও আসওয়াদ হাবীব জীম এভাবেই তাদের আকুতি জানায়। মিরপুরের বিসিআইসি কলেজে প্রথম বর্ষে পড়ে তারা। গত ১৯ অক্টোবর উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় দুর্বৃত্তরা তাদের পিটিয়ে গুরুতর জখম করেছে। এ ঘটনায় থানায় মামলাসহ আসামিও গ্রেপ্তার হয়। পুলিশের কাছে অপরাধও স্বীকার করছে সে। তবু বিচার পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছে ভুক্তভোগীরা।
দুই বোনের ওপর হামলায় জড়িত জীবনের সহযোগী লুৎফর রহমান বাবুকে গত ২০ অক্টোবর গ্রেপ্তার করে আদালতের নির্দেশে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। গত সোমবার (২৪ অক্টোবর)জীবনকেও গ্রেপ্তার করে র্যা ব। পরদিন আদালতের মাধ্যমে তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহ আলী থানার এসআই অনুজ কুমার সরকার বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে জীবন অপরাধ স্বীকার করছে। লুৎফর তার বন্ধু। হামলার পর সে জীবনকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করে। এ ছাড়া আর কেউ হামলার সঙ্গে জড়িত বলে তথ্য পাওয়া যায়নি। শিগগিরই তদন্তকাজ শেষ করা হবে। যার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যাবে তার বিরুদ্ধেই আমরা চার্জশিট দেব।
পুলিশ-হাসপাতালের ঠেলাঠেলি : মাদারীপুর প্রতিনিধি জানান, নিতুর বাড়ি কালকিনি উপজেলার ডাসার থানার নবগ্রাম ইউনিয়নের আইসারকান্দি গ্রামে। নবগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ত সে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর স্কুলে যাওয়ার পথে তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে একই গ্রামের মিলন মণ্ডল। দীর্ঘদিন ধরে সে নিতুকে উত্ত্যক্ত করত।
ঘটনার পরপরই জনতা মিলনকে ধরে পুলিশে দেয়। সেই ছুরিটিও উদ্ধার করা হয়। ঘটনার রাতেই মিলনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন নিতুর বাবা নির্মল মণ্ডল। পরদিন হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেয় মিলন। মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে নিতুর সৎকার করে স্বজনরা।
কিন্তু সব সাক্ষ্য-প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও ৪০ দিনেও চার্জশিট দিতে পারেনি পুলিশ। মামলাটি তদন্ত করছেন কালকিনির ডাসার থানার এসআই বায়েজিদ মৃধা।
ওই থানার ওসি মোঃ এমদাদুল হক বলেন, হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়ায় চার্জশিট দিতে পারেনি পুলিশ। সাধারণত ডাকযোগে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আসে। কিন্তু এখনো পাইনি। তাছাড়া তদন্ত কর্মকর্তা মাঝে কিছুদিন প্রশিক্ষণে ছিলেন। এ জন্য হাসপাতালে যোগাযোগও করা হয়নি।
যোগাযোগ করলে মাদারীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) শশাঙ্ক ঘোষ বলেন, দুই-এক দিনের মধ্যেই আমরা প্রতিবেদন দিয়ে দেব। দেরির বিষয়ে জিজ্ঞেস করায় তিনি বলেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করতে সাধারণত একটু দেরি হয়।
তদন্ত কর্মকর্তা এসআই বায়েজিদ মৃধা বলেন, আসামি মিলন কারাগারে আছে। তদন্ত চলছে।
নিতুর বাবা নির্মল মণ্ডল বলেন, আমি কাঠমিস্ত্রির কাজ করি। দিন আনি, দিন খাই। কাজ না করলে পরিবারের সবাইকে না খেয়ে থাকতে হয়। কিন্তু মেয়ের মুখ চোখের সামনে ভাসলেই সব কিছু যেন অন্ধকার হয়ে যায়। আমি মেয়ে হত্যার বিচার চাই।
মীমাংসার জন্য চাপ : রাজবাড়ী প্রতিনিধি জানান, স্কুলছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ রয়েছে রাজবাড়ী জেলা সদরের লক্ষ্মীনারায়ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সালাউদ্দিন খান বা আলম মাস্টারের বিরুদ্ধে। বাড়িতে প্রাইভেট পড়ানোর সময় শিশুটিকে হয়রানি করেছেন—এমন অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে গত ২৬ আগস্ট (শুক্রবার)রাজবাড়ী থানায় মামলা করেছেন ছাত্রীর বাবা। এ বিষয়ে তিনি ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগও করেছেন।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা শিক্ষা অফিস আলম মাস্টারকে সাময়িক বরখাস্ত করে। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও হয়। কিন্তু ঘটনার পর থেকেই আলম মাস্টার আত্মগোপনে রয়েছে। এখন মীমাংসার জন্য ওই ছাত্রীর পরিবারকে চাপ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ওই ছাত্রীর বাবা বলেন, তাঁরা খুবই দরিদ্র। আত্মীয়ের জমিতে ঘর তুলে বসবাস করেন। ঘটনার পর পরই আলম মাস্টারের লোকজন বিষয়টি চেপে যাওয়ার জন্য হুমকি-ধমকি দেয়। এখন আলম মাস্টারের ভাগনি জামাই জাফর, মকু মেম্বার, জয়না মেম্বারসহ অনেকেই আসছেন তাঁদের কাছে। গ্রাম্য সালিসে বসে বিষয়টি মীমাংসা করতে তাঁরা চাপ দিচ্ছেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও রাজবাড়ী থানার ওসি (তদন্ত) ওবায়দুর রহমান জানান, তদন্ত চলছে। আলম মাস্টার পলাতক রয়েছেন। তাঁকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
তদন্ত শেষ, তবু চার্জশিট হয়নি : সিলেট অফিস জানায়, সিলেটে কলেজছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসের ওপর হামলার পর ২৫ দিন পার হয়েছে। এখনো মামলার চার্জশিট দিতে পারেনি পুলিশ। চার্জশিট দাখিল না হওয়ায় মামলার বিচার শুরু হচ্ছে না।
খাদিজার ওপর হামলার মামলায় একমাত্র আসামি বখাটে ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলম। ইতোমধ্যে সে দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছে। গত ২৩ অক্টোবর (রবিবার) বদরুলকে আদালতে হাজির করা হয়। তবে চার্জশিট না দেওয়ায় আদালত শুনানির নতুন তারিখ নির্ধারণ করেন ১৫ নভেম্বর (মঙ্গলবার)।
প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে প্রতিশোধ নিতে গত ৩ অক্টোবর (সোমবার) বিকেলে সিলেট এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে খাদিজাকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে বদরুল। জনতা হাতেনাতে ধরে তাকে পুলিশে দেয়।
সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী খাদিজা পরীক্ষা দিতে এমসি কলেজে গিয়েছিলেন। বদরুল শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে চতুর্থ বর্ষে দ্বিতীয় সেমিস্টারে পড়ত। ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে বহিষ্কার করে। খাদিজা বর্তমানে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
হামলার ঘটনায় খাদিজার চাচা আব্দুল কুদ্দুস বাদি হয়ে ৪ অক্টোবর বদরুলকে একমাত্র আসামি করে সিলেটের শাহপরান থানায় মামলা করেন। পরে আদালতে জবানবন্দিতে বদরুল স্বীকার করে প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়েই সে খাদিজাকে হত্যার চেষ্টা চালায়।
সিলেটের অতিরিক্ত জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকউটর শামসুল ইসলাম বলেন, পুলিশ অভিযোগপত্র দাখিল না করা পর্যন্ত বিচারিক কাজ শুরু করা সম্ভব হবে না। অভিযোগপত্র দাখিলের পর আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচারকাজ শুরু করা যায়। প্রয়োজনে পরে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিলের সুযোগও রয়েছে পুলিশের জন্য।
মহানগর পুলিশের শাহপরান থানার ওসি মোঃ শাহজালাল মুন্সী বলেন, তদন্ত শেষ হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও অন্য সাক্ষীদের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। এখন সব কিছু গোছানো হচ্ছে। শিগগিরই আদালতে চার্জশিট দেওয়া হবে। কবে নাগাদ চার্জশিট দেওয়া হতে পারে—জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা যেকোনো দিন হতে পারে। ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত পাওয়ামাত্রই জমা দেব।
খাদিজার বাবা মাসুক মিয়া বিচার প্রসঙ্গে বলেন, বদরুলের এমন শাস্তি চাই, যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ এভাবে হামলার চিন্তা করতেও ভয় পায়। দ্রুত বিচারকাজ শেষ করার বিষয়ে তিনি সরকারের সহযোগিতা চান।
গ্রেপ্তার হয়নি সব আসামি : ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় গত সোমবার বখাটে লিটু হোসেনের ছুরিকাঘাতে আহত পূজা মজুমদারের অবস্থা এখন উন্নতির দিকে। হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছে সে। পুলিশ লিটুকে গ্রেপ্তার করেছে। তার দুই সহযোগীকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার করতে গেলে লিটু পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা ছুড়েছিল। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি করে। তাতে লিটু আহত হয়। ওই অবস্থায় তাকে গ্রেপ্তার করে প্রথমে ঝিনাইদহ হাসপাতালে, পরে ফরিদপুর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ বলছে, আহত লিটু কথা বলতে না পারায় মামলার তদন্তের অগ্রগতি হচ্ছে না।
পূজা স্থানীয় জামিলা খাতুন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ে। হামলার ঘটনার পর তার বাবা বিপুল মজুমদার বাদি হয়ে লিটুসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ঝিনাইদহ সদর থানায় মামলা করেন।
তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মিজানুর রহমান জানান, অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে। লিটু কথা বলতে পারলেই তদন্তের আরো অগ্রগতি হবে।