আফসানা হত্যা

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাকে খুঁজে পাচ্ছেনা পুলিশ!

প্রকাশ : ১৮ আগস্ট ২০১৬, ১৩:১৫

জাগরণীয়া ডেস্ক

রাজধানীর মিরপুরের সাইক ইনস্টিটিউটের স্থাপত্যবিদ্যার শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্র ইউনিয়ন কর্মী আফসানা ফেরদৌসের (২৪) মৃত্যুরহস্য এখনো উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। গত শনিবার রাতে মিরপুরের আল-হেলাল হাসপাতাল থেকে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে। অজ্ঞাত দুই যুবক অচেতন আফসানাকে হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যান। পুলিশ ইতিমধ্যে হাসপাতালের সিসিটিভির ফুটেজে পর্যবেক্ষণ করলেও গত চার দিনেও অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি। পুলিশ বলছে, ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

এ ঘটনায় কাফরুল থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। আফসানার পরিবার বলছে, তাকে হত্যা করা হয়েছে। এর সঙ্গে তেজগাঁও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমান রবিন জড়িত বলে অভিযোগ তাদের। রবীনের পরিবার থেকেও এই মামলা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে হুমকি দেয়া হচ্ছে আফসানার পরিবারকে। আর কাফরুল থানার ওসি কার্যকর পদক্ষেপ না নিয়ে বরং হত্যা ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে প্রচার করে দায়ী ছাত্রলীগ নেতাকে বাঁচাতে চাইছে বলে অভিযোগ করেন আফসানার পরিবার। 

পরিবারের পাশাপাশি ছাত্র ইউনিয়নের নেতারাও অভিযোগ করেন, আফসানাকে তেজগাঁও কলেজ ছাত্রলীগের নেতা রবিন ও তার সহযোগীরা হত্যা করেছেন। এখন 'আত্মহত্যার নাটক' সাজিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। কাফরুল থানা পুলিশও একই ধরনের কথা বলে ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গতকাল ঢাকা ও ঠাকুরগাঁওয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন হয়েছে। ঢাকার সমাবেশ থেকে আগামী শনিবার সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ছাত্র ইউনিয়ন। একইসঙ্গে ২২ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে পদযাত্রার ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে।

পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আহাম্মদ বলেন, অভিযুক্ত রবিনসহ তার সহযোগীদের গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।

এদিকে খুনিদের বিচার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছেও আবেদন করেছেন আফসানার স্বজনরা। 
তাদের দাবি, এ ঘটনার পর রবিনের চাচাতো ভাই পরিচয়ে একটি নম্বর থেকে তাদের সমঝোতার প্রস্তাব দেওয়ার পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে 'বাড়াবাড়ি' না করার জন্য হুমকি দেওয়া হচ্ছে। রবিনের মা তাদের মোবাইল ফোনে ঢাকায় আসার জন্যও বলেছেন।

আফসানার ভাই ফজলে রাবি্ব বলেন, আফসানাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে তাদের ধারণা। তার গলায় দাগ দেখা গেছে। আফসানা মিরপুরের মানিকদীতে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে বান্ধবীদের সঙ্গে থাকতেন। রবিনের সঙ্গে তার একটা সম্পর্ক ছিল বলে তারা জানতে পেরেছেন।

অভিযুক্ত আসামীদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে কাফরুল থানার ওসি শিকদার মোহাম্মদ শামীম হোসেন বলেন, শনিবার সন্ধ্যার পর আফসানার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়। তার শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এ কারণে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া না গেলে নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়। আপাতত ওই ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে হত্যার আলামত মিললে মামলাটিই হত্যা মামলায় রূপান্তর হবে।

পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আহাম্মদ বলেন, অভিযুক্ত রবিনসহ তার সহযোগীদের গ্রেফতারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। এখনো অভিযুক্তদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

ওসি আরও বলেন, দুই যুবক তাকে হাসপাতালে রেখে পালিয়ে গেছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। হাসপাতালের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ সংগ্রহ করে তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।

এদিকে আফসানা হত্যার প্রতিবাদ ও জড়িতদের গ্রেপ্তারে ১৭ আগস্ট বুধবার বিকেলে শাহবাগে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা। এতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম অভিযোগ করেছেন, আফসানা হত্যাকাণ্ড ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা হচ্ছে। হত্যার চার দিন পরও পুলিশ রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি। বরং আফসানা হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।

সমাবেশে তেজগাঁও কলেজ শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অন্তু চন্দ্র নাথ জানান, গতকাল তাদের কলেজ শাখা ছাত্র ইউনিয়নের কয়েকজন নেতাকর্মী শাহাবাগের বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দিতে বের হলে তাদের ওপর হামলা করেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে তিনিসহ কয়েকজন আহত হন। পরে তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত