ময়না তদন্ত ও ডিএনএ রিপোর্টের অপেক্ষায় জোড়া খুনের তদন্ত!

প্রকাশ : ০৭ মে ২০১৬, ২০:৪৪

জাগরণীয়া ডেস্ক
অধ্যাপক ড. এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকী। ছবি: আতিক হোসেন জিসান

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যাকাণ্ডের চাঞ্চল্যকর ঘটনার পর চাপা পড়েছে আবাসিক হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী জোড়া খুনের তদন্ত।

লোমহর্ষক এ ঘটনার দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও রাজশাহীর অভিজাত আবাসিক হোটেল নাইস ইন্টারন্যাশনালে দুই তরুণ-তরুণী খুনের রহস্যের জট খোলেনি।

ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া বিভিন্ন আলামত ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। নিহতদের ময়না তদন্তের রিপোর্টও হাতে আসেনি। তাই দুই রিপোর্টের অপেক্ষায় থেমে রয়েছে তদন্ত।   

রাজশাহী মহানগরীর ব্যস্ততম সাহেব বাজার এলাকায় অবস্থিত নাইস ইন্টারন্যাশনাল আবাসিক হোটেলের ৩০৩ নম্বর কক্ষ থেকে গত ২২ এপ্রিল দুপুরে তরুণ-তরুণীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

নিহতরা হলেন- পাবনা সদর উপজেলার পাঠানপাড়া গ্রামের উমেদ আলীর ছেলে মিজানুর রহমান (২৩) ও সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার রাধানগর গ্রামের আবদুল করিমের মেয়ে সুমাইয়া নাসরিন (২১)।

ঘটনার পর পুলিশ হোটেলের ৩০৩ নম্বর কক্ষে গিয়ে দেখতে পায়, সিলিং ফ্যান থেকে মিজানুরের দুই হাত বাঁধা যে মরদেহ ঝুলছিল তা মেঝে থেকে প্রায় ১০/১২ ফুট ওপরে ছিল।

কক্ষে তেমন উঁচু টেবিলও ছিল না। ফলে আলামত দেখে শারীরিক প্রতিবন্ধী ওই যুবকের পক্ষে ওই ফ্যানে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করা প্রায় অসম্ভব বলে অনেকটাই নিশ্চিত হয় পুলিশ।

এছাড়া পুলিশ যাওয়ার আগেই তড়িঘড়ি করে হোটেল কর্মচারীদের ওই কক্ষের অটোলক করা দরজা ভাঙার বিষয়টিও রহস্যজনক বলে ধারণা করা হয়।

মরদেহ দু’টি উদ্ধারের পর ওই আবাসিক হোটেল থেকে সন্দেহভাজন হিসেবে চারজনকে আটক করা হয়। এরা হলো হোটেলের সুপারভাইজার রবিউল ইসলাম (৩৫), হোটেলবয় নয়ন হোসেন (২৫), ফয়সাল আহম্মেদ (২৬) এবং বখতিয়ার হোসেন (৩০)।কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের ছেড়ে দেয় পুলিশ।

এর পরে আর কাউকেই আটক করা যায়নি। ফলে আপাতত এ মামলায় নতুন কোনো গ্রেফতারও নেই।

এরই মধ্যে গত ৩০ এপ্রিল দুপুরে ব্যবসায়ী নেতাদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে হোটেল মালিক হাসান কবীর এ জোড়া খুনের ঘটনায় হোটেল কর্তৃপক্ষের সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেন। সংবাদ সম্মেলনে এ অভিজাত আবাসিক হোটেল নিয়ে অপপ্রচার বন্ধেরও আহবান জানান তিনি।

তবে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে হোটেলের ওই কক্ষে গুপ্ত দরজা থাকার কথা স্বীকার করেন হাসান কবীর। কিন্তু এয়ার কন্ডিশনার বা এসি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তারা এসব দরজা রেখেছেন বলে জানান।

ওই কক্ষ ছাড়া আরও পাঁচটি কক্ষে এমন দরজা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এগুলোর চাবি কঠোরভাবে সংরক্ষিত থাকে। তাই কোনোভাবেই তার অপব্যবহারের সুযোগ নেই।

এদিকে, রাবি শিক্ষক হত্যাকাণ্ডসহ একের পর এক চাঞ্চল্যকর নানা ঘটনা ঘটলেও এসব ঘটনা জোড়া খুনের মামলা তদন্তে ন্যূনতম কোনো প্রভাব ফেলছে না বলে দাবি মহানগর পুলিশের। রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র সহকারী কমিশনার ইফতে খায়ের আলম জানান, এ মামলায় কেউ গ্রেফতার না থাকলেও পুলিশের তদন্ত তার নির্দিষ্ট গতিতেই চলছে। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ভিসেরা ও অন্যান্য আলামত ঢাকায় সিআইডিতে পাঠানো হয়েছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) সেলিম বাদশা বলেন, ঘটনার মূল মোটিভ উদ্ধার না হলেও তদন্ত থেমে নেই। সুরতহাল ও পারিপার্শ্বিক আলামত থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে, আবাসিক হোটেলে ধর্ষণের পর ওই তরুণীকে খুন করা হয়েছে।

তবে মিজানুরের মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গেলেও তার দুই হাত বাঁধা ছিল। এ থেকে ওই যুবকের মৃত্যুরহস্য নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আত্মহত্যা করেছেন না তাকে হত্যা করা হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া বিভিন্ন আলামত ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এখন ডিএনএ ও ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়া গেলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে বলেও মনে করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।

উল্লেখ্য, নিহত সুমাইয়া নাসরিন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। তার বাবা আবদুল করিম গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপ-পরিদর্শক। তিনি বর্তমানে গাইবান্ধায় কর্মরত। মিজানুর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।

গত ২০ এপ্রিল রাত দশটার দিকে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে তারা ওই আবাসিক হোটেলে উঠেছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত