স্বপ্ন দেখার খেসারত হিসেবে ধর্ষণ ও নির্যাতন
প্রকাশ : ০১ জুন ২০১৯, ১৫:০৪
স্বপ্ন ছিল তার লেখাপড়া করার। কিন্তু দারিদ্র্যের কারণে সে স্বপ্ন বাস্তব হয়ে উঠেনি। নিজের অসুস্থতার চিকিৎসার জন্যও প্রয়োজন ছিল অর্থের। সেই লেখাপড়ার স্বপ্ন ও প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখিয়ে এক চিকিৎসক নিয়ে গিয়েছিলেন নরসিংদী শহরে। কিন্তু মেয়েটি জানতো না যার হাত ধরে স্বপ্ন পূরণের পথে যাচ্ছে সে, সেই তার সবচেয়ে বড় দুঃস্বপ্ন হয়ে ধরা দিবে। স্বপ্ন দেখার খেসারত হিসেবে দিনের পর দিন বাড়িতে আটকে রেখে তার উপর চালানো হয় পাশবিক নির্যাতন। নরসিংদী সদর উপজেলার দক্ষিণ শীলমান্দী গ্রামে ঘটেছে এই ঘটনা।
৩১ মে (শুক্রবার) সকালে উপজেলার দক্ষিণ শীলমান্দী গ্রামের সিরাজ উদ্দিনের বাড়ি থেকে ঐ কিশোরীকে উদ্ধার করে পুলিশ। আটক করা হয়েছে নির্যাতক চিকিৎসককেও। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নির্যাতিত ঐ কিশোরী পুলিশকে জানিয়েছেন, দুই মাস ধরে বাসায় আটকে রেখে দিনের পর দিন তাকে ধর্ষণসহ পাশবিক নির্যাতন করেছে ওই চিকিৎসক।
অভিযুক্ত চিকিৎসক এমবিবিএস ডা. জুলফিকার আলী গাজীপুর জেলার হোতাপাড়া থানার মনিপুর গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে। তিনি নরসিংদী সদর উপজেলার উত্তর শীলমান্দী এলাকায় ছনিয়া নিটওয়ার মিলস শ্রমিকদের চিকিৎসা সেবায় কর্মরত ছিলেন।
নির্যাতিত ঐ স্কুলছাত্রী জানায়, উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন থাকলেও ২০১৮ সালে এসএসসি পাস করার পর দারিদ্র্যের কারণে তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। সে নিজে লিভার রোগে আক্রান্ত। চিকিৎসার জন্য তার মা তাকে ঐ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায়। তার কথা শুনে ঐ চিকিৎসক বলেন তিনি তাকে নরসিংদীতে নার্সিং কলেজে ফ্রি ভর্তি করিয়ে দেবেন। বিনিময়ে তার বাসার কাজ-কর্ম করে দিতে হবে। তার কথা শুনে সরল বিশ্বাসে মেয়েটির মা তাকে ঐ চিকিৎসকের সাথে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু নরসিংদী আসার পর চিকিৎসকের রূপ পাল্টে যায়। দুই মাস ধরে তাকে ঐ বাসায় আটকে রেখে দিনের পর দিন ধর্ষণ ও নির্যাতন চালায় তিনি।
ঐ বাড়ির মালিক সিরাজ উদ্দিন জানান, গত দুই মাস আগে ঐ কিশোরীকে ভাগ্নি পরিচয় দিয়ে তাকে নিয়ে এই বাসায় উঠেন জুলফিকার আলী। কিন্তু ঐ চিকিৎসক ও নির্যাতিতার গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হলে তাদের ওপর নজর রাখেন তিনি। পরে ঘটনাক্রমে ওই কিশোরী বাড়ির মালিককে সব কিছু খুলে বলেন। পরে বাড়ির মালিক এলাকাবাসীর সহায়তার ওই লম্পট চিকিৎসককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন।
নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দুজ্জামান বলেন, ঘটনাস্থল থেকে ঐ কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়েছে। একইসঙ্গে অভিযুক্ত চিকিৎসক জুলফিকার আলীকেও আটক করা হয়েছে। কিশোরীর পরিবারে খবর দেয়া হয়েছে। তারা এলে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।