চলন্ত বাসে ধর্ষণ ও হত্যা: শাহবাগে প্রতিবাদের ডাক
প্রকাশ : ০৯ মে ২০১৯, ২২:৫৫
ভৈরব-কিশোরগঞ্জ রুটে চলন্ত বাসে শাহিনুর আক্তার তানিয়া নামে এক তরুণীকে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে শাহবাগে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেছে নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ নামে প্রগতিশীল সংগঠন। ১০ মে (শুক্রবার) বিকেল চারটায় শাহবাগে এই প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।
আয়োজকরা বলেন, প্রতিটি দিন ধর্ষণের খবরে বিবমিষ জাগার কথা সকলের। অথচ দেখা যাচ্ছে প্রতিনিয়ত ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে। দেখা যায় ধর্ষক রাজনৈতিক দলের কর্মীদের ম্যানেজ করে ফেলছে একই সাথে পুলিশকেও ম্যানেজ করে ফেলছে। চলন্ত বাসে শাহিনুর আক্তার তানিয়াকে ধর্ষণ ও হত্যা করা হলেও তাকে নিয়ে একটি বাক্যও খরচ করেনি পরিবহন শ্রমিক নেতারা। আমরা চাই এই ঘোর অমানিশার বিরুদ্ধে সকলে সরব হোন।
উল্লেখ্য, ৬ মে (সোমবার) বিকালে ঢাকার মহাখালী থেকে স্বর্ণলতা পরিবহনের একটি বাসে করে বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর যাচ্ছিলেন তানিয়া। বাসটি রাত সাড়ে ৯টার দিকে কটিয়াদি আসার পর তানিয়া ও অন্য দুই যাত্রী ছাড়া সবাই নেমে যায়। উজানচর এলাকায় ওই দুই যাত্রীও নেমে যায়। বাসটি গজারিয়া এলাকায় পৌছালে চালক ও সহকারীরা তাকে চলন্ত বাসে ধর্ষণ ও হত্যা করে রাস্তায় ফেলে দেয়। সেখান থেকে এলাকাবাসী তাকে কটিয়াদি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তানিয়ার বড় ভাই বাদল মিয়ার অভিযোগ, ধর্ষণের পর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে তার বোনকে হত্যা করা হয়েছে।
এ ঘটনায় বাসের চালক নুরুল ইসলাম ও সহযোগি লালনসহ আরও পাঁচ জনকে আটক করে পুলিশ। তবে থানা হেফাজতে চালক নুরুল ইসলাম শুরু থেকেই ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, মেয়েটি হঠাৎ করে জানালা দিয়ে লাফ দেন। কিন্তু বাসা থেকে মাত্র ১০ মিনিট দূরত্বে থাকা বাস থেকে মেয়েটি কেন হঠাৎ লাফিয়ে পড়লেন- সে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি চালক।
৭ মে (মঙ্গলবার) দিনগত রাতে নিহত তানিয়ার বাবা গিয়াস উদ্দিন বাদী হয়ে চার জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাত বেশ কয়েকজনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন বাজিতপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।
মঙ্গলবার বিকেলে ঐ তরুণীর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি মেডিকেল বোর্ড তানিয়ার ময়না-তদন্ত সম্পন্ন করে। পরে রাতেই তার মরদেহ পরিবারকে হস্তান্তর করা হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে তানিয়ার বড় ভাই মরদেহ বুঝে নেন।
কিশোরগঞ্জ জেলা হাসপাতালের ডা. রমজান মাহমুদ বলেন, ময়নাতদন্তে ধর্ষণ ও আঘাতজনিত কারণে ওই তরুণীর মৃত্যুর আলামত মিলেছে। এছাড়া ডিএনএ ও প্যাথলজিক্যাল টেস্টের জন্য আলামত সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তার ৫ জন আসামিকে ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রিমান্ড শুনানি শেষে ৮ মে (বুধবার) বিকেলে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আল-মামুন এ আদেশ দেন।
নিহত শাহিনুর আক্তার তানিয়া (২৩) কটিয়াদি উপজেলার লোহাজুড়ি ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের মেয়ে। তিনি রাজধানী ঢাকায় ইবনে সিনা হাসপাতালে নার্স হিসাবে কর্মরত ছিলেন বলে পরিবার জানিয়েছে।