'আমার বাবারে এনে দেন না...'

প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৮:০৯

জাগরণীয়া ডেস্ক

চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত ও আহতদের স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও এর চারপাশের পরিবেশ। কিন্তু এখনো নিখোঁজ রয়েছেন কেউ কেউ যারা জীবিত নাকি মৃত সেই সন্ধানই জানেন না স্বজনেরা। এমনই এক মায়ের আকুল আকুতি ছিল তার সন্তানের খোঁজ পাবার জন্য। সুস্থসবল মানুষ নয়, বরং সন্তানের শরীরের এক টুকরো মাংস কিংবা পুড়ে যাওয়া ছাই এর জন্যই আকুল হয়ে কাঁদছিলেন এই মা। তার অসহায় মিনতির সামনে দাঁড়িয়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি কেউ।

এটিএন নিউজের সাংবাদিক মুন্নি সাহার কাছে এসে আকুল হয়ে কাঁদতে কাঁদতে ঐ মা জানান, তার ছেলে ফুয়াদ নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ফোর্থ সেমিস্টারে পড়ছিলেন।

ঐ মা বলেন, "আমার একটাই সম্পদ, কষ্ট কইরা লেখাপড়া করাইছি। আমার বাবা বাইরে যাইবো গা।..."

এসময় নিজের সন্তানের একটি ছবি সবাইকে দেখিয়ে তাকে এনে দেয়ার আকুল মিনতি জানান এই মা।

মুন্নি সাহাকে ঐ মা বলেন, "যেরকম হোক... কালি হোক, একটু যদি মাংস থাকে, মাংসের ফোটাও থাকে। আমার বাবারে এনে দেন। আমি কোলে নিমু। দরকার হয় আমি ছালি (ছাই) ধরমু, এমনে গায়ে মাখুম।"

এসময় সাংবাদিক মুন্নি সাহা সহ আশেপাশের অনেককেই চোখের জল মুছতে দেখা যায়।

সন্তান মারা গেছে, আর কখনো ফিরে আসবে না, এমনটা এখনো ভাবতেই পারছেন না এই হতভাগ্য জননী। মনে তার এখনো আশা কোথাও হয়তো কোনভাবে এখনো বেঁচে আছে সন্তান। আর তাই তো মুন্নী সাহাকে উদ্দেশ্য করে ঐ মা বলছিলেন, "মনে হয় যে কোনো জায়গায় আছে... এখনো শেষ হয় নাই, কোনো জায়গায় মনে হয় যে দমটা এখনো টিপটিপ করতেছে, কিন্তু পলিথিন দিয়া ঘুইরা থুইছে, কিন্তু আমার পোলাডা মা মা কইতাছে। ... আমার আব্বা এতো সহজে যাইবো না আমারে রাইখা। আমার বাবা তো অনেক ভয় পায়, আমার বাবায় কোনহানে জানি আছে।"

ছেলের ছবির দিকে তাকিয়ে ছেলেকে সান্ত্বনা দেয়ার বাহানায় যেন নিজেকেই সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন এই নারী- "বাবারে, তোমার কিছু অইবো না। ...সবাই তোমারে খুঁজে দিবো। ইনশাল্লাহ সবাই খুঁজে দিবো। কতো মানুষ...কোন দিকে সরায়ালায়, কোন দিকে যায় গা।"

‘আমার বাবার একটু খুঁইজা দেন না; বলে আবারো কেঁদে আকুল হন এই মা।

ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আরো অনেকের মতো তার সন্তান ফুয়াদের খোঁজ মিলেনি এখনো। কিন্তু তার কান্না ছুঁয়ে গেছে অনেকের হৃদয়। ফুয়াদ ও তার মতো নিখোঁজ আরো অনেকের বেঁচে থাকাটাই এখন সবার কাম্য।

উল্লেখ্য, ২০ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) রাত সাড়ে ১০টার পর চকবাজারের নন্দকুমার দত্ত রোডের শেষ মাথায় মসজিদের পাশে ৬৪ নম্বর হোল্ডিংয়ের ওয়াহিদ ম্যানসনে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়।  ওয়াহিদ ম্যানসনের নিচতলায় প্লাস্টিকের গোডাউন ছিল। ওপরে ছিল পারফিউমের গোডাউন।

এলাকাবাসী বলছেন, ওই ভবনের কারখানা থেকে আগুন ছড়িয়েছে।

খবর পেয়ে এ আগুন নেভাতে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি স্টেশনের ৩৭টি ইউনিট। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা রাত ৩টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন বলে জানায় ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুম। 

বৃহস্পতিবার বিকেলে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ওই অগ্নিকণ্ডে ৮১টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতদের অধিকাংশকেই শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। আহত হয়েছেন প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ; খোঁজ নেই অনেকের।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত