সুবর্ণচরে গণধর্ষণ: আরও ২ জন চট্টগ্রামে গ্রেপ্তার

প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০১৯, ১৬:৫৪

জাগরণীয়া ডেস্ক
গ্রেপ্তার হাসান আলী বুলু

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ভোটের রাতে চার সন্তানের জননী এক গৃহবধূকে দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনায় হাসান আলী বুলু (৬০)কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। হাসান আলী বুলু (৬০) সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক রুহুল আমিনের ‘প্রধান সহযোগী’ এবং তাকে ঘটনার ‘মূল পরিকল্পনাকারী’ হিসেবে বলছে পুলিশ। একই সাথে  সুবর্ণচরের চরজুবলী ইউনিয়নের মধ্যম বাগ্যা গ্রামের মোতাহের হোসেনের ছেলে জসিম উদ্দিন (৩০)কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

৪ জানুয়ারি (শুক্রবার) ভোরে চট্টগ্রামের ডাবলমুরিং থানার পশ্চিম মাদারবাড়ি এলাকা থেকে হাসান আলী বুলুকে এবং চট্টগ্রামের নাজিরহাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে জসিম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে চরজব্বার থানা পুলিশ।

নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. ইলিয়াছ শরীফ বলেন, ওই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী হাসান আলী বুলু। ভোটকেন্দ্রে বুলুর সঙ্গেই ঐ নারীর কথা কাটাকাটি হয়। পরে সে দশ হাজার টাকায় কয়েকজন ইটভাটা শ্রমিককে ভাড়া করে। মামলার এজাহারে বুলু বা জসিমের নাম ছিল না। তবে পুলিশ তদন্তে নেমে ঘটনার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে।

উল্লেখ্য, নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ধানের শীষে ভোট দেয়ায় ভোটের দিন রাতে স্বামী ও চার সন্তানকে বেঁধে চল্লিশোর্ধ্ব ঐ নারীকে আওয়ামী লীগের ১০/১২ কর্মী মিলে গণধর্ষণ করে বলে অভিযোগ উঠে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ভুক্তভোগী ঐ নারী জানান, ভোটের দিন আওয়ামী লীগের কর্মীরা নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ার জন্য জোর করছিল কিন্তু আমি তাদের কথা না শুনে ধানের শীষে ভোট দিই। এ নিয়ে আমাদের মাঝে কথা কাটাকাটি হয়। এরই জেরে ঐ দিন মধ্যরাতে ১০/১২ ঘরের বেড়া কেটে হানা দেয় এবং আমাকে বাইরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ ও অকথ্য নির্যাতন চালায়। এ ব্যাপারে মুখ খুললে স্বামীকে হত্যা ও ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার হুমকি দেয় তারা। 

ওই নারীর স্বামী জানান, ৩০ ডিসেম্বর রাতে তার স্ত্রীকে মারাত্মক জখম করে অচেতন অবস্থায় ফেলে রাখে এবং ৪০ হাজার টাকা, সোনার গয়না ও অন্যান্য দামী জিনিসপত্র নিয়ে ধর্ষণকারীরা পালিয়ে যায়।

প্রতিবেশীরা তাদের চিৎকার শুনে প্রথমে একজন ডাক্তার ডেকে আনেন কিন্তু ঐ নারীর রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় তাকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর স্বামী রুহুল আমিনসহ ১০ জনকে আসামি করে চরজব্বার থানায় মামলা দায়ের করলে রহস্যজনকভাবে পুলিশ রুহুল আমিনের নাম বাদ দিয়ে দেয়। 

গত ২ জানুয়ারি (বুধবার) চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ঐ নারীকে দেখতে গেলে ভুক্তভোগী ঐ নারী বলেন, রুহুল আমিনের সাঙ্গপাঙ্গরাই আমার উপর নির্যাতন চালিয়েছে। কিন্তু পুলিশ এজাহার থেকে রুহুল আমিনের নামই কৌশলে সরিয়ে দিয়েছে। ডিআইজি এ সময় তাকে আশ্বস্ত করেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।

প্রভাব-প্রতিপত্তি খাটিয়ে রুহুল আমিনের নাম মামলা থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে-এ ঘটনা মিডিয়ায় প্রকাশ পাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দার ঝড় উঠে এবং রুহুল আমিনকে গ্রেপ্তারের জোর দাবি জানানো হয়।

এরপরই রাতে রুহুল আমিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এ নিয়ে আলোচিত ধর্ষণকাণ্ডে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর আগে সোমবার মামলার ৬ নম্বর আসামি বাসুকে গ্রেপ্তার করা হয়। মঙ্গলবার রাতে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলা থেকে ৩ নম্বর আসামী স্বপনকে (৩৫) গ্রেপ্তার হয়। বুধবার কুমিল্লার বরুরা উপজেলার মহেষপুরের একটি ইটভাটা থেকে মামলার ১ নম্বর আসামি সোহেলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সবশেষে বুধবার গভীর রাতে মামলার হোতা রুহুল আমিন ও এজাহারের ৫ নং আসামি বেচুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন-মধ্যবাগ্যা গ্রামের হানিফ, চৌধুরী, আবুল, মোশারেফ ও সালাউদ্দিন।

এ প্রসঙ্গে সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক রুহুল আমিন যদি অপরাধী হয় তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। যদি তার অপরাধ প্রমাণিত হয় তবে তাকে দল থেকে বহিস্কার করা হবে। 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত