আজ ভয়াল ২১ আগস্ট
প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০১৮, ১৪:০৮
আজ ভয়াল ২১ আগস্ট। ইতিহাসের ভয়াবহতম গ্রেনেড হামলার ১৪তম বার্ষিকী। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়।
সেসময়ে সংসদের প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগের সমাবেশে হামলার ঘটনায় ২৪ জন নিহত এবং কয়েকশ’ কর্মী-সমর্থক আহত হন। হামলার পরের বছরগুলোতে আওয়ামী লীগ দিনটিকে কেন্দ্র করে নানান কর্মসূচি গ্রহণ করে। স্মরণ করে আহত-নিহতদের।
দিনের শুরুতেই সকাল ১০টায় বন্ধবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। পরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
ভয়াবহ ওই হামলার বিভীষিকা স্মরণ করে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ২১ আগস্টের সেই হামলাকে বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় বলেছেন রাষ্ট্রপতি। বাণীতে তিনি আরও বলেন, “জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার ধারাবাহিকতায়ই শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ওই হামলা চালানো হয়েছিল”।
সেদিনের হামলায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচণ্ড শব্দে তার শ্রবণশক্তি নষ্ট হয়।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বাণীতে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় ঢাকায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী সমাবেশে বর্বরতম গ্রেনেড হামলা চালানো হয়।”
হামলার পর জজ মিয়া নামে এক ভবঘুরেকে দিয়ে মিথ্যা জবানবন্দি নিয়ে ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টার কথাও বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “এ নারকীয় হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে বিচার করা ছিল সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। কিন্তু তৎকালীন বিএনপি-জামাত জোট সরকার কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টো হত্যাকারীদের রক্ষায় সব ধরনের ব্যবস্থা করেছিল। হামলাকারীদের বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়। অনেক আলামত ধ্বংস করে। তদন্তের নামে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে।
“রাষ্ট্রযন্ত্রকে অপব্যবহার করে তারা জনগণকে ধোঁকা দিতে ‘জজ মিয়া’ নাটক সাজানোর মতো ঘৃণ্য কাজ করে। কিন্তু সত্য কখনও চাপা থাকে না। পরবর্তীকালে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তে বেরিয়ে আসে বিএনপি-জামাত জোটের অনেক কুশীলব এ হামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল”-বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, “২১ অগাস্টের হামলাকারী, পরিকল্পনাকারী, নির্দেশদাতা এবং মদদদাতাদের সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে দেশ থেকে হত্যা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের চির অবসান হবে এবং দেশে আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হবে। আজকের দিনে এটাই আমার প্রত্যাশা।”
সেদিন গ্রেনেড হামলায় প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী ও আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা আইভি রহমান নিহত হন।
নিহত অন্যদের মধ্যে রয়েছেন শেখ হাসিনার নিরাপত্তাকর্মী অবসরপ্রাপ্ত ল্যান্স কর্পোরাল মাহবুবুর রশীদ, হাসিনা মমতাজ রিনা, রিজিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), রতন শিকদার, মোহাম্মদ হানিফ ওরফে মুক্তিযোদ্ধা হানিফ, মোশতাক আহমেদ, লিটন মুনশি, আবদুল কুদ্দুছ পাটোয়ারী, বিল্লাল হোসেন, আব্বাছ উদ্দিন শিকদার, আতিক সরকার, মামুন মৃধা, নাসিরউদ্দিন, আবুল কাসেম, আবুল কালাম আজাদ, আবদুর রহিম, আমিনুল ইসলাম, জাহেদ আলী, মোতালেব ও সুফিয়া বেগম।
গত ২০ আগস্ট (রবিবার) জাতীয় প্রেস ক্লাবের ‘বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিদেশ থেকে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকর এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার দ্রুত বিচার’ দাবিতে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা হত্যা মামলার বিচারিক আদলতের রায় দেওয়া সম্ভব হবে। রায়টি হলে দেশ আরো একটি দায় থেকে মুক্তি পাবে।
আইনমন্ত্রী বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি ৫২ জন। এর মধ্যে ১৮ জন পলাতক। এ মামলায় আদালতে ২২৫ জন স্বাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। মামলায় এ পর্যন্ত ৪৪ আসামির পক্ষে যুক্তিতর্ক পেশ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া মামলার এজাহারে অভিযুক্ত আসামিদের প্রত্যেককে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ আদালতে চলা মামলায় এখন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের যুক্তিতর্ক চলছে, এই মাসেই তার যুক্তিতর্ক শেষ হবে। এরপরই তা রায়ের জন্য রাখা হবে। এ হামলায় দায়েরকৃত মামলার পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকার আইনি এবং কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।