দুর্ঘটনায় মৃত্যু হত্যা প্রমাণ হলে মৃত্যুদণ্ড

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সর্বোচ্চ শাস্তি ৫ বছরের জেল

যদি প্রমাণিত হয় দুর্ঘটনা উদ্দ্যেশ্যমূলক, তাহলে দণ্ডবিধি ৩০২ ধারা অনুযায়ী বিচার হবে। এ ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।

প্রকাশ : ০৬ আগস্ট ২০১৮, ১৬:৪১

জাগরণীয়া ডেস্ক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ৬ আগস্ট (সোমবার) সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক | ছবি: ফোকাস বাংলা

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পেয়েছে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’র খসড়া। আইনে বলা হয়েছে বেপরোয়াভাবে বা অবহেলা করে গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত বা মৃত্যু হলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে। তবে তদন্তে যদি দেখা যায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে চালক বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন, তাহলে দণ্ডবিধি ৩০২ অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া হবে। অর্থাৎ সাজা হবে মৃত্যুদণ্ড। তবে এটা তদন্ত সাপেক্ষে এবং তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধারা নির্ধারণ করবে।

৬ আগস্ট (সোমবার) সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়। পরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।

মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, নতুন আইনে মোটরযান মালিককে ২০০৬-এর শ্রম আইন অনুসারে মোটরযান চালকের সঙ্গে লিখিত চুক্তি করতে হবে। লাইসেন্স ছাড়া ও চুক্তি ছাড়া কেউ গাড়ি চালাতে পারবে না। চালককে কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি পাস ও ২১ বছর বয়সী হতে হবে। আর নিজের গাড়ি চালালে বয়স ১৮ বছর হতে হবে।

ব্রিফিংয়ে উপস্থিত সড়ক পরিবহন সচিব নজরুল ইসলাম বলেন, তদন্তে যদি প্রমাণিত হয় দুর্ঘটনা উদ্দ্যেশ্যমূলক, তাহলে দণ্ডবিধি ৩০২ ধারা অনুযায়ী বিচার হবে। এ ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।

সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম আইনের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে বলেন, চালকদের কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি বা সমমানের পাশ হতে হবে। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া কেউ গাড়ি চালাতে পারবেন না। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত আইনে চালকের ভুলের জন্য ১২টি পয়েন্ট রাখা হয়েছে। অপরাধের সঙ্গে সঙ্গে এসব পয়েন্ট কাটা যাবে। পয়েন্ট এভাবে শূন্য হয়ে গেলে ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে।

শফিউল আলম বলেন, প্রস্তাবিত আইনে বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আছে: গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাবে না, সিট বেল্ট বাঁধতে হবে, নারীদের আসনে অন্য কেউ বসতে পারবে না।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের জন্য একটি তহবিল থাকবে। সেটা পরিচালনার জন্য একটি ট্রাস্টি বোর্ড থাকবে। সরকার, চালক সমিতি, মালিক সমিতি মিলে এই বোর্ড গঠন করা হবে।

মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর খসড়া এবার সংসদে পাঠানো হবে। সেখানে পাস হলে আইনটি কার্যকর হবে।

মন্ত্রিসভার বৈঠকে শেষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক নিজ দপ্তরেও এসেও সাংবাদিকদের আইনটি সম্পর্কে ব্যাখা দেন। তিনি বলেন, ‘বেপরোয়া ও অবহেলা করে গাড়ি চালানোয় কেউ গুরুতর আহত বা কারও মৃত্যু হলো সে জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ বছর সাজা হবে। কিন্তু এখানেই শেষ নয়, যদি তদন্তে ভিন্ন তথ্য পাওয়া যায় তাহলে দণ্ডবিধি ৩০২ এবং ক্ষেত্রমতে ৩০৪ এই আইনে প্রযোজ্য হবে। তার মানে, কোনো একটা দুর্ঘটনা হলো। কিন্তু দেখা গেল, তা শুধু সড়ক দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়া যাবে না, এখানে চালক ইচ্ছে করলে দুর্ঘটনা এড়াতে পারত এবং তিনি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। তখন দণ্ডবিধির ৩০২ অনুযায়ী বিচার হবে।’

আনিসুল হক বলেন, ‘কিন্তু মনে রাখতে হবে, তদন্ত ও তথ্যের ওপর নির্ভর করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এটা ঠিক করবে।’

রাজধানীর কুর্মিটোলায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নের দাবিতে সারাদেশে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে চূড়ান্ত অনুমোদন পেল আইনটি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত