‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগ জরুরি’

প্রকাশ : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১২:১৫

জাগরণীয়া ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা ইস্যুতে কফি আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়নে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখার জন্য জাতিসংঘসহ সকল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল এবং ইউএন ওমেন’র নির্বাহী পরিচালক ফুমজিলে মিয়ামবো নকুকা গত ১ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর জাতীয় সংসদ ভবনস্থ কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাতে এলে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

বৈঠকের পরে প্রধানমন্ত্রীর অতিরিক্ত প্রেস সচিব নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের বিশেষ করে নারী ও শিশুদের দুঃখ-দুর্দশা সম্পর্কে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলকে অবহিত করেন।

প্রথানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ মানবিক কারণে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আগত বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু কক্সবাজারে এত বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপস্থিতি স্থানীয় জনগণের জন্য ভোগান্তি সৃষ্টি করছে।

স্থানীয় জনগণের খাদ্য এবং আবাদি জমির ওপরও তাদের অবস্থান চাপ সৃষ্টি করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এদের আবাদী জমিতে শরণার্থীদের জন্য ক্যাম্প নির্মিত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই শরণার্থীদের মধ্যে কেউ যেন আবার সন্ত্রাসের পথে চলে না যায় সেজন্য সরকার জনগণের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থেই তাদের নোয়াখালীর একটি দ্বীপে স্থানান্তরের পদক্ষেপ নিয়েছে।

তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে দেশে আশ্রয় গহণকারী এক লাখ রোহিঙ্গাকে সেখানে স্থানান্তর করা হবে এবং সে বিষয়ে কাজ এগিয়ে যাচ্ছে।

বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ উত্তর পশ্চিামাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে গত বছরের ২৫ আগস্ট সেনা অভিযানের প্রেক্ষিতে সে সময় থেকেই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাস্তুচ্যুত হয়ে এদেশে আসতে শুরু করে।

তাঁর সরকারের শাসনকালে দেশে নারীর ক্ষমতায়নের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সংসদে সংসদ নেতা, উপনেতা, স্পিকার এবং বিরোধী দলীয় নেতা সকলেই নারী, এটি বিশ্বের জন্য একটি উদাহরণ।

পাশাপাশি তাঁর সরকার ইউনিয়ন পরিষদসহ স্থানীয় সরকারের সকল পর্যায়ে নারীর সরাসরি নির্বাচনে অংশ গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শিক্ষাখাতে নারীর অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাইমারী স্কুল শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে নারী শিক্ষকদের জন্য ৬০ শতাংশ কোটা রয়েছে। তিনি বলেন, দেশের বিদ্যালয়গুলোতে তাঁর সরকারের বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, শিক্ষার্থীদের বৃত্তি-উপবৃত্তি প্রদানসহ শিক্ষাঙ্গনের উন্নয়নে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ স্কুলগুলোতে ছেলেদের চেয়ে নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়িয়ে দিচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, দেশজুড়ে গড়ে ওঠা ডিজিটাল সেন্টারগুলোও নারীদের জন্য কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছে, নারীদের আর্থিকভাবেও সামর্থবান করে তুলছে।

এছাড়া, কাংখিত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য সরকার দেশজুড়ে কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে তোলা এবং প্রতিবন্ধী শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা চালুর বিষয়টিও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

বৈঠকে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সংশ্লিষ্ট কমিটির কাছে তিনি তার কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প সফর নিয়ে একটি প্রতিবেদন পেশ করবেন।

জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে দেশে নারীর ক্ষমতায়নে গৃহীত পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো.নজিবুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব সাজ্জাদুল হাসান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত